———-
বাংলা কবিতার ভুবনে প্রতিনিয়ত নতুন কণ্ঠস্বরের আগমন ঘটে। এই ধারায় নবীন এবং প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন কবি এমদাদ হোসেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “খুচরো পয়সার মতো তোমাকে জমাই” দিয়ে তিনি পাঠকমহলে তৈরি করেছেন স্বতন্ত্র এক অবস্থান। শব্দের পরতে পরতে জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি ও চেতনার ছাপ রেখে গেছেন এই তরুণ কবি।
এমদাদ হোসেন ২০০২ সালের ২৭ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা গ্রামে। গ্রামীণ প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য, পাহাড়, নদী ও সবুজে ঘেরা পরিবেশে বেড়ে ওঠা তাঁর কবিতায় এনে দিয়েছে স্বতন্ত্র এক ব্যঞ্জনা। শৈশব থেকেই প্রকৃতি ও অন্তর্গত ভাবনার প্রতি তাঁর আকর্ষণ কবিতার ভিত্তি নির্মাণ করেছে।
তিনি উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন সাতকানিয়া সরকারি কলেজ থেকে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় একটি সনামধন্য কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যয়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর লেখালেখির চর্চা চলে সমান্তরালভাবে। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই কবিতা ছিল তাঁর ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।
কাব্যগ্রন্থ: “খুচরো পয়সার মতো তোমাকে জমাই”
২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠক মহলে বেশ আলোচিত হয়। বইটিতে প্রেম, একাকীত্ব, জীবনের নিঃসঙ্গতা এবং সময়ের ক্ষয়মানতা উঠে এসেছে সংবেদনশীল ও গভীর ভাষায়।
প্রতিটি কবিতা যেন একেকটি ক্ষুদ্র জীবন– যেখানে পাঠক নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন নতুন করে। শব্দের পরিমিত ব্যবহার, অনুভবের সংযম এবং নিঃশব্দ আবেগের গঠন তাকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।
কবি এমদাদ হোসেন কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন জীবনানন্দ দাশ থেকে। জীবনানন্দের কবিতায় যে নিঃসঙ্গতা, নিসর্গ-সৌন্দর্য ও আত্মসন্ধানী ভাবনা রয়েছে, তারই প্রভাব প্রতিফলিত হয় এমদাদের লেখায়। জীবনানন্দের নীরব দর্শন তাঁর কবিতার ভাষা ও রুচিকে পরিপক্ব করেছে।
কবি এমদাদ হোসেন কেবলমাত্র কবিতা লিখছেন না, তিনি একটি আত্মিক যাত্রার সূচনা করেছেন—যেখানে শব্দের প্রতিটি রেখায় লুকিয়ে আছে গভীর জীবনচেতনা।
বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একজন শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি যে ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়ে উঠছেন, তা তাঁর লেখনীর মধ্যে সুস্পষ্ট। প্রেম, সময়, নিঃসঙ্গতা এবং আত্মবীক্ষণের যে অনুভব তিনি তুলে ধরেন, তা পাঠককে স্পর্শ করে হৃদয়ের গভীরে।