ডি এইচ মনসুর:
জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে পারাপার হতে হয় কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ফেরিঘাট। ঘাটের ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোয় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ যাত্রী তুলে নদী পাড়ি দেন মাঝিরা। ভোর-সন্ধ্যায় বাড়তি ভাড়া দাবি করে হয়রানি করা হয় যাত্রীদের। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ইজারাভুক্ত এ ঘাটের এসব অনিয়ম চিত্র দীর্ঘদিনের।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা,চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী,পটিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার বিদেশযাত্রী, শহরমূখী মানুষসহ, মেরিন একাডেমি, কাফকো, সিইউএফএল, ডিএপিএফসিএল,কোরিয়ান ইপিজেড,কর্ণফুলী টানেল ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার চাকরিজীবী প্রতিদিন নদী পার হয় এই ঘাট দিয়ে। তবে অতিরিক্ত যাত্রী আর নদীতে বড় বড় ঢেউয়ে নৌকা দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যেই পারাপার হতে হয় তাদের।
যাত্রীদের অভিযোগ, ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। ঘাট পারাপারে নেওয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়া,দেওয়া হয় না লাইফ জ্যাকেট। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও সড়কপথে যানজট এড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করে মানুষ। বিদেশযাত্রী,স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির প্রয়োজনে আশপাশের মানুষের ভরসা ১৫ নম্বর ফেরিঘাট।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারে কর্ণফুলী নদী কানায় কানায় পানিপূর্ণ। নদীতে জাহাজসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করছে। ঢেউ উঠছে আর ¯ বইছে। এর মধ্যেই নৌকায় যাত্রী নিয়ে ঘাটের এপার থেকে ওপারে ভিড়ছেন মাঝিরা। নৌকা ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে ঘাটে নামছেন যাত্রীরা। অন্য একটি নৌকা যাত্রী বোঝাই করে ঘাট ছেড়ে ওপারে যাচ্ছে।
চাকুরীজীবি মোহাম্মদ মোবারক বলেন,নদী পারাপারের জন্য এখানে কোনো নিয়মনীতি নেই। নৌকার ধারণক্ষমতা ২০ জন হলেও প্রায় সময় পারাপার করেন ৬০-৭০ জনের বেশি। শহরে বাসা হওয়ায় কর্ণফুলী নদী পার হয়ে যেতে হয়। নৌকায় ওঠার পর ওপারে যেতে পারব কি না,এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। এভাবেই বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়।
বিদেশযাত্রীদের অভিযোগ, বিদেশ যাওয়ার সময় নৌকা রিজার্ভ করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে পার হতে হয় তাদের। অনেক সময় লোকাল নৌকা করে পার হতে গেলে মালামালের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন মাঝিরা। এতে অনেক সময় বিমানবন্দরে ঠিক সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
পোষাককর্মী,
মিনুয়ারা , শিউলি,খাদিজাসহ কয়েকজন নারী জানান, নৌকায় যাত্রীদের চাপিয়ে চাপিয়ে ওঠানোর পরে মাঝিরা নদী পার করেন। বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেই নৌকায় চেপে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয় তাদের। নদী পার হতে গিয়ে মনে ভয় কাজ করে।
উত্তর বন্দর বোট মালিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিছ নুর বলেন,ঘাটের দু’পাড়ের দুটি বোট মালিক সমিতি রয়েছে। মালিক সমিতির নামে প্রতিবছর ঘাটটি ইজারা হয়। যাত্রী হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, ঘাটের অসাধু কিছু মাঝি অনেক সময় ছোটখাটো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এগুলো বন্ধ করার জন্য আমরা কাজ করছি।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন,বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে অধিক যাত্রীবোঝাই নৌকা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।