মোঃ আবু সঈদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
আকষ্মিক ঘূর্ণিঝড়ে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার পাগলা এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও দোকান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
এ সময় শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। রাত হতেই মেডিক্যাল টিমের সহায়তায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রাত ব্যাপী বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসক টিমের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা সহ বিভিন্ন কর্মকর্তা,স্হানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজকর্মীবৃন্দ।
রবিবার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০ ঘটিকার দিকে শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের কামরূপদলং, সদরপুর, আস্তমা, তালুকগাঁও ও পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের রায়পুর,চন্দ্রপুর, নবীনগর, ইনাতনগর, কাদিপুর, বাঘেরকোণা গ্রাম, দরগা পাশা ইউনিয়নের নুরপুর, সিচনী গ্রাম সহ উপজেলায় অন্তত সাত শতাধিক বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
তবে চুড়ান্ত তালিকায় ক্ষতিগ্রস্তের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে নিমিষেই বাড়িঘর গাছপালা,বৈদ্যুতিক খুঁটি ঘরের উপর ভেঙে পড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় । ঘূর্ণিঝড়ের কাছে হার মানতে হয়েছে দালাল কোটা সহ শক্ত মজবুত বাড়িঘর।
সেই ক্ষতি থেকে বাদ পড়েনি বিধ্বস্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মানুষজন তখনও ঘরের ভেতর ঘুমিয়ে ছিল। তারা কোনোমতে পরিবার আর সন্তানদের নিয়ে ঘরের ভেতর থেকে প্রাণ নিয়ে বের হন। অনেককেই ঘরের টিন, বেড়া ও ঘরের চাল খেটে উদ্ধার করা হয়েছে কিন্তু কোনো আসবাবপত্র বা ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করতে পারেননি। অনেকের ঘরপর টিন উড়িয়ে নিয়ে নদীতে, খালে,হাওরে এবং গাছের ডালে আটকে পড়ে আছে। মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন ও করছেন।
এদিকে ঝড়ের তাণ্ডবে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাছ ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্থানীয়দের সহায়তায় শান্তিগঞ্জ ও পাগলা বাজারে ভেঙে পড়া গাছ সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে রাত ২টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া শান্তিগঞ্জ উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কেও গাছপালা ভেঙে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে সব শেষ করে দিয়ে গেছে। মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিট ঝড় হয়েছে। আর তাতেই বসত ঘরের সব আসবাবপত্র পাশের জমিতে গিয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অনেকেই জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ঘরবাড়ি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। স্বল্প আয়ে দিনাতিপাত করা এসব পরিবারে ঘূর্ণিঝড়ের হানা ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারি সহযোগিতার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান এমপি, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
দিনব্যাপী এলাকার বিভিন্ন গ্রাম বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরিদর্শন করছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমেদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা, প্রকল্প কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সহ উর্ধতন কর্মকর্তারা৷ তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনবার্সনে সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগীতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন৷
এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দোলন রানী তালুকদার,থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী মুক্তাদির হোসেন, সুনামগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এম এ মান্নান এর সুযোগ্য পুত্র সাদাত মান্নান অভি, শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিতাংশ শেখর ধর সিতু, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত হোসেন ও ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ সহ নেতৃবৃন্দ।।
তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তদারকির কাজ করছেন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বৃন্দ।
এব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমদ ও নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, আকষ্মিক ঘুর্ণিঝড়ে শান্তিগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছি৷ খুব দ্রুতই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আমরা সহযোগিতা পৌঁছে দিতে পারব। জরুরী ভিত্তিতে ২৫০ কে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ১৫ কেজি করে চাল ও শুকনো খাবার পৌছে দেওয়া হয়েছে।