বাপ্পী রাম রায়,
সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে থামছে না তিস্তা নদের ভাঙ্গন। অব্যাহত ভাঙ্গনে সর্বহারা চরবাসী। গত এক মাসের ভাঙ্গনে ছয় শতাধিক বসত বাড়িসহ হাজারও একর আবাদি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে হাজারও বসতবাড়ি ও আবাদি জমি। সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই উপজেলার তারাপুর,বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর লাগামহীন ভাঙ্গন চরবাসীকে দিশাহারা করে তুলেছে। ভাঙ্গনের কারণে প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে অন্যস্থানে ঘরবাড়ি সরানো চরবাসীর জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর থেকে উপজেলার শ্রীপুর, হরিপুর, বেলকা, চন্ডিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যতই পানি কমছে ততই ভাঙ্গন বেড়ে চলছে। বিশেষ করে হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তীব্র আকারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
হরিপুর ইউনিয়নের মাদারিপাড়া গ্রামের ওয়াহেদ আলী জানান, ৫৫ বছর বয়সে তিনি ১০ বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন। চলতি বছরে তিনি ৩ বার নদী ভাঙনের স্বীকার হন।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান,আমি নিজে নদী পাড়ের মানুষ । নদী ভাঙ্গনের কষ্ট ও যন্ত্রণা আমি বুঝি। নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারের বড় পদক্ষেপ ছাড়া আমাদের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়।
সম্প্রতি নদী ভাঙ্গন রোধে উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের পুটিমারি গ্রামে এলাকাবাসী বিশেষ মোনাজাত ও নামাজ আদায় করেছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মজিবর রহমান জানান, নদী ভাঙ্গন রোধ, সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য বৃহৎ প্রকল্পের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দরকার। তবে এর মধ্যে ৪০৬ কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী জানান,ইতিমধ্যে ভাঙ্গন রোধে বিভিন্ন পয়েন্টে কিছু কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ভাঙ্গনের বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর জনস্বার্থে মহান সংসদে নদী ভাঙ্গনের বিষয় উপস্থাপন করা হয়। জবাবে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সুন্দরগঞ্জের নদী ভাঙ্গন রোধে প্রকল্পের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, নদী ভাঙন রোধ, বাঁধ সংস্কার ও সংরক্ষণ বাবদ ৪০৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।
গত শুক্রবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রি জাহিদ ফারুক এমপি গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বলেন, ৫ হাজার ৪০০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আগামি মাসে একনেকে প্রকল্পটি পাশ হলে নদী ভাঙ্গন রোধের কাজ শুরু করা হবে। এতে করে নদী ভাঙ্গন অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে।