|| রাঙামাটি প্রতিনিধি ||
ভারত সীমান্ত লাগোয়া রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার প্রথম প্রহরে নিহতরা হলেন, বাহন ত্রিপুরা (৫৫) ও মেলাতি ত্রিপুরা (৫০)। আক্রান্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী। এলাকায় তীব্র পানীয়জলের সংকট রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রচন্ড গরম, বিশুদ্ধ পানীয়জলের সংকট ও অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবার কারণে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম লংথিয়ান পাড়ায় ও বেটলিংয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে সাজেকের বেটলিংয়ের বাসিন্দা বাহন ত্রিপুরা (৫৫) ও মেলাতি ত্রিপুরা (৫০) শনিবার ভোরে মারা গেছ। তারা উভয়ে সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী।
তারা লংথিয়ান পাড়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত মেয়ে জামাইকে দেখতে গিয়েছিলো। এর আগে গত বুধবার (৭ জুন) ভোর রাতে গবতি বালা ত্রিপুরা (৫০) ও দরুং ত্রিপুরা (৬০) নামে দু’জনেরও মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সাজেকে ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। লংথিয়ান পাড়ায় ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ আরো প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের সাহায্যে সেনা বাহিনী,বিজিবি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ সম্মিলিত চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ঘরে ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।
সাজেক ইউনিয়ন’র ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার বন বিহারী চাকমা ১০দিনের ব্যবধানে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত এক মাস ধরে সাজেকের লংথিয়ান পাড়া, অরুণ পাড়া, কাইজা পাড়া, রায়না পাড়া ও শিয়ালদহ বেটলিং এলাকাসহ আশপাশের বেশকিছু এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আশপাশে কোন হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় স্থানীয় তান্ত্রিক দ্বারা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এর সাথে রয়েছ সড়ক যোগাযোগের অভাব। পায়ে হেঁটে বা কাঁধে বহন করে দূরের পথ মাড়িয়ে মাচালং ও উপজেলা সদর হাসপাতালে রোগী পাঠানো সম্ভব নয়। স্থানীয় মিডিয়ায় ডায়রিয়ার খবর প্রকাশের পর ৮ জুন বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের ৩টি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে টানা সাপ্তাহব্যাপী চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। চিকিৎসা সেবা দিয়ে গত বুধবার মেডিকেল টিম ফিরে যায়। এর মধ্যেই নতুন করে আরো দু’জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হলো।
সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার জোপুইথাং ত্রিপুরা জানান, লংথিয়ান পাড়াতে ৪ জন মুমূর্ষু ডায়রিয়া রোগী রয়েছে। তাদের অবস্থাও সংকটাপন্ন। মূলত পাহাড়ি ছড়ার দূষিত পানি দূষিত থেকে এ রোগ ছড়িয়েছে।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালেও এখানে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মৃত্যু হয়েছিলো। তখনও দূর্গম এ এলাকায় সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার যোগে মেডিকেল টিম পাঠায়।তাদের দীর্ঘ এক মাসের চিকিৎসায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঠিকাদার পূর্ণবাসন সেন্টার হিসেবে পরিচিত রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সরকারের কোটি কোটি টাকা কোন কোন জায়গায় ব্যয় করে? সেই প্রশ্নটি বড় করে দেখছে স্থানীয়রা। কারণ প্রতিষ্ঠানটি কাগজে কলমে দীর্ঘ বছর ধরে বিশুদ্ধ পানীয়জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে আসছে দাবি করে। একই ভাবে দেশী-বিদেশী এনজিও গুলোর কর্মকান্ডও লেজেগোবরে অবস্থা।
রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া সাজেকসহ জেলায় বিভিন্ন স্থানে বিশুদ্ধ পানীয়জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে গাফিলতির বিষয় অস্বীকার করে বলেন, সাজেকের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪০লাখ ব্যয়ে ২৪ টি বিশুদ্ধ পানি উৎস তৈরির দাবি করেন। চলতি বছর সারা জেলায় প্রতিষ্ঠানটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে সেটি নিশ্চিত করতে সময় লাগবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার ডায়রিয়া জনিত কারণে মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পাহাড়ি জনপদ দূর্গম সাজেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। পাহাড়ী ছড়ার পানি পান করায় বর্ষার শুরুতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ’র সহায়তায় প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্যানিটেশন সমস্যা দূর করতে চেষ্টা করছি।