নির্মল এস পলাশ :
এক স্বতন্ত্র উজ্জ্বল সংস্কৃতির অধিকারী মণিপুরী নৃ – গোষ্ঠী। ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির বিচিত্র জগতে মণিপুরী জনগোষ্ঠী নিজেদের মেলে ধরেছে আপন বৈশিষ্ট্য ও ভাবের স্বকীয়তা নিয়ে।নিজ সংস্কৃতি ,কৃষ্টি ঐতিহ্যে মহিমাম্বিত।প্রাগৌতিহাসিক কাল থেকে চলছে সংস্কৃতির নানান বিবর্তন।বহু জাতি ,বহু রূপ ,আর বহু সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র এই বঙ্গতট।মণিপুরীদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এদেশের সংস্কৃতির ধারাকেই আরও বেশি বর্ণিল করেছে।
১৭৭ বছর ধরে মৌলভীবাজার জেলার, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরে একটি জাতিগোষ্ঠীর চলমান এমন একটি উৎসব। একি সময়ে ,একসাথে তিনটি মন্ডপে একি ধারায় উৎসব শুরু ও শেষ হয় যা – কোথাও খুজে পাওয়া সত্যি বিরল। মণিপুরী সংস্কৃতির অন্যতম হলো উৎসব ” রাসপূর্ণিমা ” উদযাপন। কার্তিকের চাঁদ গলে জোৎস্না যখন মাতাল করে রাখে প্রকৃতিকে ,শিশির আর ঘাসে অপূর্ব মাখামাখি চলে যখন ,মোহন মুগ্ধতায় ,তখনই আসে রাস উৎসব।কার্তিকী শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ সময়কে ধারণ করে অর্থাৎ চন্দ্র যে দিন পূর্ণকলায় বিকশিত হবে ,সেই দিনই মহারাসলীলা।
প্রেমভক্তিবাদের এমনি এক মহাপ্লাবনের সময় রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে রাসলীলা আয়োজন করেছিলেন।সেই মহারাসলীলানুসরণ মাধবপুর জোড়া মন্ডপে তিনটি ধামে যা সত্যি বিরল। একসাথে ১৭৭ বছর আগে এখানেই শুরু হয়েছিলো ;যার ধারাবাহিকতার ছেদ পরেনি আজও।রাসলীলা মণিপুরীদের প্রধান বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসব হলেও, এ উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতি ,ধর্ম ,বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে তা আজ সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে কৃষ্ণভক্তবৃন্দ ,সংস্কৃতি অনুরাগী ,সাংবাদিক, সংস্কৃতি গবেষক,দেশি – বিদেশি পর্যটক প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসেন , রাসলীলা শ্রবণ ও দর্শনে। ভাব ও চিন্তার পারস্পরিক বিনিময়ে জোড়া মন্ডপ হয়ে উঠে ভ্রাতৃত্ববোধের তীর্থস্থান। মৃদঙ্গের ছন্দে ,তালে বিলিন হয় বিভেদের সকল রেখা।
প্রতি বছর কয়েক লক্ষ লোকের সমাগমে রাত ও দিনব্যাপি পুরো অঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠে। রাসলীলার মাধ্যমে আমাদের প্রগতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা চেতনা বৃদ্ধি পেয়ে ,তা আজ হয়েছে , সবার মাঝে সম্প্রীতির বন্ধনে রাসলীলার।