রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি :
শেরপুরে নূরে আলম বাহিনীর সন্ত্রাস ও হামলার শিকার হয়ে হাত-পা, কোমর গুড়িয়ের দেওয়ার ১৫ দিন পর অবশেষে প্রাণ হারিয়েছেন আব্দুল খালেক (৫০) নামে একব্যক্তি।
সোমবার ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকাবস্থায় তিনি মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়েন। দুপুরে ওই হাসপাতাল মর্গে তার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ দিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে-সাথে এলাকায় শোকের ছায়ার পাশাপাশি উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ওই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামী নূরে আলমসহ পলাতক আসামীরা এখনও গ্রেফতার হয়নি।
জানা যায়, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর চকপাড়া এলাকার মৃত ফরহাদ আলীর ছেলে আব্দুল খালেককে রাস্তায় একা পেয়ে এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকীর (৪৫) নেতৃত্বে তার অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে কুপিয়ে, পিটিয়ে রক্তাক্তসহ হাত-পা ও মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেলে, ক্ষতি হয় কিডনির। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে দুর্বৃত্তরা ২ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে সটকে পড়ে। পরে আব্দুল খালেককে তারা গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে সেদিন রাতেই তাকে মচিমহার আইসিইউতে রাখা হয়। তার পর থেকেই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন খালেক। ওই ঘটনায় খালেকের স্ত্রী আসমাউল হোসনা বাদী হয়ে নূরে আলম সিদ্দিকীকে প্রধান আসামী করে তার সহযোগীসহ ২২ জনকে স্ব-নামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় পুলিশ ফারুক আহম্মেদ (২৬) ও সোহেল রানা (৩৭) নামে এজাহারনামীয় ২ আসামীকে গ্রেফতার করলেও কদিন পরই তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। এর পর থেকেই প্রধান আসামীসহ অপরাপর সকল আসামী পলাতক রয়েছে।
এদিকে সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহ থেকে গ্রামের বাড়িতে আব্দুল খালেকের লাশ পেীঁছার পর পরিবারের লোকজনসহ স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে, শুরু হয় শোকের মাতম। সরেজমিনে গেলে স্থানীয় সমাজসেবক ফজলুল হক মাস্টার, সাইদুর রহমান ও স্বপন মিয়াসহ অনেকেই জানান, নূরে আলমের সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।
একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্র-ছায়ায় থাকার অভিযোগ তুলে তারা বলেন, তার বিরুদ্ধে অপহরণ, ডাকাতি, হামলা-মাইরপিটসহ প্রায় ২০ টি এবং ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১১ টি দুর্নীতির মামলা এখনও চলমান রয়েছে। আব্দুল খালেক ছিলেন এলাকার সমাজসেবক এবং নূরে আলম বাহিনীর নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদী।
তিনি ২ বছর আগে সরকারী চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সমাজসেবার পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় হয়ে পড়েন এবং কিছুদিন আগে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ার ঘোষনা দেন। এ নিয়েই খালেকের প্রতি আক্রোশ বশত: তাকে হত্যা করা হয়েছে।
খালেকের লাশের পাশে বুক চাপড়িয়ে কাঁদতে-কাঁদতে স্ত্রী আসমাউল হোসনা বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নুরে আলম ও তার বাহিনীর লোকজনের টার্গেটে ছিলেন তার স্বামী। তিনি প্রধান আসামী নূরে আলমসহ পলাতক সকল আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারসহ স্বামী হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহমেদ বাদল জানান, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আহত আব্দুল খালেক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে শুনেছি। তার মৃত্যুর সনদসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পর মামলাটি হত্যা মামলায় মোড় নিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেইসাথে ওই ঘটনায় পলাতক প্রধান আসামী নূরে আলমসহ অন্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।