|| রাঙামাটি প্রতিনিধি ||
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’র শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে পিসিসিপি। সম্প্রতি উন্নয়ন বোর্ড ২০২১-২২ অর্থ বছরের শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তালিকায় বাঙ্গালী শিক্ষার্থীরা সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের শিকার হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে শনিবার দুপুরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
পিসিসিপি সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’র ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রকাশিত শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের তালিকায় চলতি বছর রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি এই তিন জেলা থেকে বৃত্তি পেয়েছেন ২১৮৩ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বাঙালী শিক্ষার্থী ৬০০ এবং অবাঙালী তথা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থী ১৫৮৩ জন। শতকরা হিসাবে দেখা যায় বাঙালী ২৭.৪৯% এবং অবাঙালী শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন ৭২.৫১%। এই দুই সম্প্রদায়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংখ্যার ব্যবধান ৪৫ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন মতে, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার মোট জনসংখ্যা ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫ জন। এর মধ্যে বাঙালী ৯ লাখ ২২ হাজার ৫৯৮ জন বা শতকরা হারে ৫০.০৬% এবং অবাঙালী তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৯ লাখ ২০ হাজার ২১৭ জন বা ৪৯.৯৪%। সুতরাং জনসংখ্যানুপাতে শিক্ষাবৃত্তি বণ্টিত হলে বাঙালী এবং অবাঙালী তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীরা প্রায় সমান সমান হওয়ার কথা। কিন্তু সমান ভাবে বৃত্তি বন্টন না করে চরম বৈষম্যমূলক আচরণের আশ্রয় নিয়ে বাঙালী শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
সংগঠনি আরও জানায়, উন্নয়ন বোর্ড’র এবারের শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন পার্বত্য জেলা থেকে বৃত্তি পেয়েছেন সর্বমোট ২ হাজার ১৮৩ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বাঙালী শিক্ষার্থী ছিলো মাত্র ৬০০ জন এবং অবাঙালী তথা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থী ১ হাজার ৫৮৩ জন। শতকরা হিসাবে বাঙালীর হার ২৭.৪৯% শতাংশ এবং অবাঙালী/উপজাতি শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন ৭২.৫১%শতাংশ।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো: হাবীব আজম বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নয়, উপজাতীয় শিক্ষার্থীরা ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি বৃত্তি পাচ্ছে। কেবল উপজাতীয় হওয়ার সুবাদে পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন থেকে শিক্ষা বৃত্তির মোটা অংকের অর্থ শুধু তারাই পেয়ে থাকে । এক্ষেত্রে বাঙালী শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন ও দারিদ্রতার শিকার হয়েও উপেক্ষিত হচ্ছে বরাবরের মতো ।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবী করে মো: হাবীব আজম আরও বলেন, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি থেকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পেয়ে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে পারেনি, তাদেরকে আগামীতে কোন প্রকার সরকারি দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারে ভাবা উচিত।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম তাজ এ বিষয়ে বলেন, আমরা এমন সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শিক্ষাবৃত্তিতে সমানভাবে বন্টনের জোর দাবি জানাচ্ছি।