———-
শহীদুল ইসলাম কাজল।
মহেশখালীর শাপলাপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে দীর্ঘদিন থেকে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরজমিনে জানা যায়- শাপলাপুর জামির ছড়ি গ্রামের পূর্ব পাশে পাউবো’র বেড়িবাঁধে ২০২১ সালে ভাঙনের শুরু হয়। ওই সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনের পর দিন ভাঙনের পরিধি বাড়তে থাকে। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে বর্তমানে প্রায় ২৫০ কানি মতো ফসলি জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।স্থানীয় চাষি ফলাতুন ও মোহাম্মদ আনিছ জানান- বেড়িবাঁধের ওই জায়গায় দ্রুত স্লুইসগেট নির্মাণ করা না হলে লবনাক্ত পানিতে চাষিদের অপূরনীয় ক্ষতি অব্যাহত থাকবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিষয়টি অবগত হওয়া সত্বেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি এমন অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয় নিয়ে ইতিপূর্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি’ কে জানানোর পরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী মানুষগুলো।
স্থানীয়রা জানান -দীর্ঘদিন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর ৫০ ফুট মতো বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেক সময় নিজেদের প্রচেষ্টায় বাঁধ তৈরি করে শুষ্ক মৌসুমে ধানের চাষ করা হলেও অস্বাভাবিক জোয়ারে পানি প্রবেশ করে ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়। ক্ষতি হয় ফসলের, তবু্ও দেখার কেউ নেই। ফলে অনেক আবাদি জমিতে ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। সরজমিন স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে জানা যায় -ইতিপূর্বে বেড়িবাঁধের ওই জায়গায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিলো। বর্ষায় অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তা ক্ষতি গ্রস্ত হয়। ওই সময়ে উক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান থাকলেও ভাঙন স্থানে প্রয়োজনীয় কাজ করা হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। জানা যায়, জামির ছড়ি ছরা এবং অতলার ছরা এই দুই ছরার পানি নদীতে বেড়িবাঁধের ওই জায়গা দিয়ে পড়তো। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ ৬৯ নং এন/ই পোল্ডারের জায়গায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বেড়িবাঁধ হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও বিষয়টি নিয়ে মাথাব্যথা করছে না। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডও দায়সারা ভাবে বসে আছেন, ফলে ফসলি জমিতে চলছে জোয়ার-ভাটা। অবস্থা দৃষ্টে দেখা যায় অসহায় কৃষকের পাশে কেউ নেই। স্থানীয় চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল খালেক চৌধুরী জানান-ইতিপূর্বে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি আরো জানান ১৯৭৮ সালে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কালীন সময়ে মোট ৯ টি স্লুইসগেট করার কথা ছিলো, ওইসময়ে ৫ টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলেও অতিপ্রয়োজনীয় আরও ৪ টি স্লুইসগেট এখনো নির্মাণ হয়নি। ফলে বর্ষাকালে শত-শত একর জমিতে ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না’এমনটা ও জানান তিনি। তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান ভিন্ন কথা -দীর্ঘদিন থেকে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে এভাবে জোয়ার-ভাটা চলতে থাকলে সরজমিন দেখতে আসেনি স্থানীয় চেয়ারম্যান।
অরক্ষিত বেড়িবাঁধ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড’ মোহাম্মদ আসিফ আহমেদ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান -বর্তমানে নতুনভাবে স্লুুইসগেট করার মতো কোনো সুযোগ তাদের নেই, স্থানীয়দের উদ্দ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবেশ ঠেকাতে হবে। এ ছাড়াও ধান চাষীদের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার কারণে যদি বিএডিসি ওই ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ অংশে নদী/পাহাড়ি ঢলের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় তবে সে ক্ষেত্রে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড এর এইরকম দায়সারা কথায় হতাশ অসহায় চাষিরা। প্রতিবর্ষা মৌসুমে ধানের চাষাবাদ করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেকেই পরিবার নিয়ে পড়েছেন সমস্যায়। অরক্ষিত বেড়িবাঁধ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি’র বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোনে যোগাযোগ করলে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল ইসলাম জানান -শাপলাপুর ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বেড়িবাঁধে বেশ কয়েকটি অংশে নদীর পানি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।