রাফিউল ইসলাম রাব্বি,স্টাফ রিপোর্টার :
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা ১৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে সড়ক, মহা-সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে হাল্কা বৃষ্টিপাত হলেও রাত ১০টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তা চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। টানা বৃষ্টিতে নগরীর কামালকাছনা, শাহিপাড়া, খাসবাগ, মুন্সপাড়া, কামারপাড়া,শালবনসহ নগরীর দেড়শতাধিক পাড়া মহল্লা দুই থেকে তিন ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন নিম্নাঞ্চলের ৮ লাখ মানুষ। কাঁচা বাড়ির বাসিন্দারা ছিলেন চরম বিপাকে। বাড়ি ও রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকের বাড়িতে রান্না পর্যন্ত হয়নি। মরার ওপর খারার ঘায়ের মতো বিদ্যুৎ চলে যায়। অনেকের ঘরে পানি প্রবেশ করায় ও বিদ্যু না থাকায় তারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।
কামালকাছনা এলাকার গৃহিনী মনিরা বেগম জানান, তার ঘরে পানি ঢোকায় সারারাত নির্ঘুম কেটেছে। রান্না করতে পারেননি। হোটেল থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন।
মুন্সিপাড়া এলাকার রতন মিয়া বললেন, বৃষ্টিতে তার ঘর ও উঠানে হাটু পানি। এদের মত কয়েক লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।
নগরীর কেরানিপাড়া এলাকার ১০৩ বছর বয়সী আবু মিয়া বলেন, তিনি তার জীবদ্দশায় এমন বৃষ্টিপাত হতে দেখেননি। তার বাড়িতেও পানি উঠেছে।
নগরীর প্রধান সড়ক জাহাজ কোম্পানি মোড়, টাউনহল চত্বর, কাচারি বাজার, গ্রান্ডহোটেল মোড়, স্টেশন রোড ছিল হাটু পানির নিচে। অন্যান্য দিন নগরীতে ব্যস্ততা দেখা গেলেও রোববার চিত্র ছিল একাবারে ভিন্ন। মানুষের যাতায়াত ছিলো কম, অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো বন্ধ। শ্রমজীবী মানুষেরা কাজ না পেয়ে ছিলেন বেকায়দায়।
এদিকে বৃষ্টিতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত শ্যামা সুন্দরী ও ক্যডিখালের দুকূল উপচে পানি নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে। এছাড়া কুকরুল বিল, চিকলি বিলসহ অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সকালে নগরীর রাস্তায় লোকজনকে মাছ শিকার করতেও দেখা গেছে। দুপুর একটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের নেটওর্য়াক স্বাভাবিক হতে সময় লাগে।
এদিকে প্রবল বর্ষণের ফলে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ছিলেন বস্তি এলাকার মানুষ। নগরীর কয়েকটি বস্তি ও কলোনির হাজার হাজার মানুষের রোববার সারাদিন চুলা জ্বলেনি। কেউ কেউ খাবার বাইরে থেকে কিনে খেলেও অধিকাংশ গরিব মানুষই ছিল অর্ধঅহারে।
এদিকে বর্ষণের সুযোগে নগরীর ছালেক মার্কেটসহ বেশকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি হয়েছে। এছাড়া অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। জেলা ত্রাণ অফিস এখন পর্যন্ত বর্ষণে কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিরুপন করতে পারেনি।
রসিকের প্যানেল মেয়র মাহামুদুর রহমান টিটু বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র ও কান্সিলররা এলাকা ভাগ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। নগরীর সেনপাড়া, মুলাটোল, রাধাবল্ববসহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্লাবিত লোকজনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে আশ্রিত পরিবারগুলোকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, ‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যতটুটু জেনেছি, তা হল ১৯১০ সালের দিকে রংপুরে এমন প্রবল বর্ষণ হয়েছিলো। ১১০ বছর পরে আবার এমন বর্ষণ হলো। শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।