নিজস্ব প্রতিবেদক।
দীর্ঘসময়ে মহেশখালীতে পরিবহন সেক্টরে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলমান থাকলেও মাথাব্যথা নেই কারো। যার দরুণ কথিত শ্রমিক নেতাদের ইচ্ছে মতো চলছে ভাড়া আদায়। বিভিন্ন অজুহাতে দফায় দফায় অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি করলেও নিরবতায় জনপ্রতিনিধি। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে চালিয়াতলী-মাতারবাড়ী সংযোগ সড়কের দীর্ঘদিনের বেহাল দশায় সর্বশেষ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি। একেবারে যানচলাচল অনুপযোগী হওয়ায় কয়েকদিন পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন মাতারবাড়ীর লোকজন।
এ অবস্থায় মানুষের সীমাহীন ভোগান্তিতে উদ্বোধনের আগেই গত ২৮ মে ২৪ইং তারিখে আশেক উল্লাহ রফিক এমপি’র নির্দেশে খুলে দেওয়া হয় কোহেলিয়া সেতু।
সেতু খুলে দেওয়ায় মাতারবাড়ী থেকে বদরখালীর দূরত্ব কমে আসলেও কমেনি ভাড়া। উল্টো ১০ টাকা ভাড়া বেড়েছে।
ইতিপূর্বে বদরখালী থেকে মাতারবাড়ী সিএনজি স্টেশনে সিএনজি যোগে পৌঁছাতে সময় নিতো ২০/২৫ মিনিটের মতো।বর্তমানে কোহেলিয়া সেতু চালু হওয়াতে ১০/১২ মিনিটেই পৌছানো যায় মাতারবাড়ী। তবুও কমেনি ভাড়া, কেউ-ই এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় অসহায় মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ফেসবুকে।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা চকরিয়ায় বদরখালী -চকরিয়া ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া ৫০ টাকা। অথচ মহেশখালীতে জনতা বাজার -গোরকঘাটা ২৪ কিলোমিটারে ১০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। ভাঙাচোরা সড়কের অজুহাতে বৃদ্ধি পাওয়া ভাড়া কমেনি পুরো মহেশখালীর সড়ক কার্পেটিং হওয়ার পরেও। শ্রমিক কল্যাণের নামে প্রতিদিন একটি সিএনজি / ব্যাটারীচালিত টমটম গাড়ীকে বিভিন্ন স্টেশনে দিতে হয় ৮০/৯০ টাকা। অথচ বছর শেষে সেই কল্যাণের নামে আদায়কৃত টাকার কিছুই পায় না শ্রমিকরা।
প্রাপ্ততথ্য মতে, মহেশখালীতে সিএনজি ও টমটম গাড়ির সংখ্যা হাজারের অধিক, সেই সুবাদে দৈনিক পরিবহন সেক্টর থেকে কথিত শ্রমিক কল্যাণের নামে প্রায় লাখ টাকা আসে একাধিক সংগঠন নেতাদের পকেটে।
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে ভাগ যাওয়ায় কল্যাণের নামে আদায়কৃত টাকা পাচ্ছে না পরিবহন শ্রমিক’ এমন তথ্য দেন অনেকেই ।
যাত্রীদের মতো, পরিবহন শ্রমিকরাও অসহায় নেতাদের কাছে, তাই বছর শেষে কল্যাণের টাকা না পেলেও মুখবন্ধ ভয়ে। একসময়ের আলোচিত সন্ত্রাসীরা-ই বর্তমানে পরিবহন সেক্টরের লাইনম্যান ও শ্রমিক নেতা হওয়ায় ভয়ে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে প্রতিবাদ করে না এমন তথ্য উঠে এসেছে। মাঝেমধ্যে সচেতন কেউ প্রতিবাদ করলে হেনস্তার শিকার হওয়ার মতো অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনকি মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আবু হায়দার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সিএনজি পরিবহন সংগঠন অযৌক্তিক ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জিম্মি করে রাখেন মাতারবাড়িবাসীকে। ওইসময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ আসেনি এমন তথ্য পাওয়া যায়।
ফলে দীর্ঘদিন ভাড়া আদায়ের নামে জুলুমের শিকার হলেও কার্যত কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভোক্তভুগীরা। এমনকি কোহেলিয়া সেতু দেখতে দর্শনার্থীদেরও বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করার অভিযোগ উঠেছে গাড়ি লাইনম্যানের বিরুদ্ধে। মাতারবাড়ীর বিভিন্ন গ্রামের লোকজন টমটম গাড়ি নিয়ে বদরখালী কিংবা কোহেলিয়া সেতু দেখতে আসার পথে রাজঘাটের সিএনজি লাইনম্যান টমটম থেকে যাত্রী নামিয়ে জোরপূর্বক সিএনজিতে করে আসতে বাধ্য করেন এমন অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
প্রশাসনের নিরবতায় প্রভাবশালী পরিবহন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না এমন তথ্য উঠে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিরবতায় ভীষণ হতাশ। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ ও আর্তনাদ জানান অসহায় আমজনতা। তবে কে শোনে কার কথা!
তবুও যাতায়াতে প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত মাতারবাড়ী দ্বীপের মানুষ চেয়ে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি’র দিকে, তিনি কিছু একটা করবেন এমন আশা নিয়ে।
তবে মাতারবাড়ীর লাইনম্যান আব্দুল মজিদ জানান ভিন্ন কথা – বর্তমানে যে হারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে তা এমপি’র নির্দেশে নিচ্ছেন।
জানা যায়, পূর্বে মাতারবাড়ী -বদরখালী সিএনজিতে জন প্রতি ৩০ টাকা নেওয়া হতো। রাস্তার কাজ শুরু হলে ভাঙা রাস্তার অযুহাতে জনপ্রতি ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা করা হয়। আবার পরবর্তীতে তা আরো ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ৫০ টাকা করা হয়। অন্যদিকে মাতারবাড়ী -গোরকঘাটা ১২০ টাকা থাকলেও তা ভাঙা রাস্তার অযুহাতে ১৫০ টাকা করা হয়। কিন্তু রাস্তা ভালো হওয়ার পর কমানোর কথা থাকলেও ভাড়া আর কমেনি। সূত্রে জানা যায়, মহেশখালীতে রয়েছে সিএনজি মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। চলছে ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায়, এসব বলার বা দেখার কেউ নেই। তাই হয়রানির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল প্রতিবাদ। ছাত্র সমাজ তাদের টাইমলাইনে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন বদরখালী -চকরিয়া ১৮ কিলোমিটারের রাস্তা যেখানে ৪০/৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়,সেখানে মাতারবাড়ী -বদরখালী ৬ কিলোমিটার সড়কে ৫০ টাকা কেন?
সিন্ডিকেট কি কখনো ভাঙ্গবে না? ভাড়া না কমানোর কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ড্রাইভার জানান, মাতারবাড়ী থেকে বদরখালী কিংবা বদরখালী থেকে গোরকঘাটা যেতে লাইন খরচ হিসেবে বিভিন্ন স্টেশনে শ’খানেক টাকা দিতে হয়। এছাড়াও আগে ব্রীজে ২০ টাকা নিলেও বর্তমানে ব্রীজে ৩০ টাকা দিতে হয়। ব্রীজে সিএনজি / টমটম গাড়ি থেকে অতিরিক্ত ১০ টাকা বাড়ানোর ফলে ড্রাইভাররা যাত্রী প্রতি ভাড়া বাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে মহেশখালী সড়ক ও পরিবহন মালিক সমিতির (রেজিঃ) সভাপতি আতা উল্লাহ বোখারীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে , তিনি লাইনম্যানদের সাথে কথা বলে পরে জানানোর কথা বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বিস্তারিত বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার -২ আসনের সংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক জানান,তিনি বর্তমানে সংসদ অধিবেশনে রয়েছেন। অধিবেশন শেষ করে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করবেন। অতিশীঘ্রই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শ্রমিক সংঠনের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিবেন। তবুও আদৌও পরিবহন সিন্ডিকেটের নৈরাজ্যের শেষ হবে? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলে।