নিজস্ব প্রতিবেদক।
মহেশখালীতে বেপরোয়া বালির ব্যবসা থামছে না কোন ভাবে। অবৈধভাবে প্রধান সড়কের কাছ থেকে বালি নেওয়ার কারণে অনেক জায়গায় গাইডওয়াল ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সড়ক। ভাঙনের শুরুতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধে জরুরী মেরামতের কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাড়ছে ভাঙনের পরিধি। পাহাড় কেটে ও সমতল ভূমি হতে বালি বিক্রি প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে চলছে মহেশখালীতে। হোয়ানক ধলঘাট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের প্রধান সড়ক সংলগ্ন জায়গা থেকে স্কেভেটর দিয়ে বালি নেওয়ার কারণে অনেকটা গভীর হয়ে যায়। দেখতে অনেকটা দীঘির মতো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গাইডওয়ালের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে ভেঙে পড়ে গাইডওয়াল।
সরকার দলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকার কারণে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এমন অভিযোগ উঠেছে। মহেশখালী যে-সব জায়গায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলন হচ্ছে সেখানে প্রভাবশালী মহলের ইন্দন থাকায় বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযানে ডাম্পার গাড়ি জব্দ করলেও মোটা অংকের টাকায় কৌশলে ছেড়ে দেওয়া হয় এমনও অভিযোগ পাওয়া যায়। পাহাড়ি মৌজার ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমির বালি বিক্রির কারণে অনেক জায়গায় বসতভিটা, সড়ক, কালভার্ট ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় সরকারি ভাবে নির্মিত গাইডওয়াল ভেঙে পড়েছে এমন দৃশ্য অহরহ।
অব্যাহত বালি উত্তোলনের কারণে হোয়ানক কালা লিয়া কাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণে কালভার্টের পূর্ব পাশে গাইডওয়াল ভেঙে পড়েছে। কালারমারছড়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন ছড়া থেকে বালি নেওয়ার ফলে প্রায় তিনশত মিটার সরকারি গাইডওয়াল ভেঙে প্লাবিত হয় শতাধিক বসতভিটা। ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক, এরপর আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয় গাইডওয়াল। কালারমারছড়ার উত্তর ঝাপুয়া ও চালিয়াতলী এলাকায় পাহাড়ি ছড়া থেকে প্রতিনিয়ত বালি উত্তোলন করলেও নিরব কর্তৃপক্ষ। অপরিকল্পিত ও বেপরোয়া বালি ব্যবসায়ির কারণে পাহাড়ি ছড়া সংলগ্ন অনেক সরকারি সম্পদ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে’এমন তথ্য পাওয়া যায়।
ওইসব গাইডওয়াল কিংবা কালভার্ট পুননির্মাণে অসময়ে সরকারি টাকা অপচয় হচ্ছে বলে জানান সচেতন মহল। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকায় বাড়ছে বালি বিক্রি। জেলাব্যাপী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে চলছে বেপরোয়া বালি সিন্ডিকেট। এভাবে চলতে থাকলে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য। বালি উত্তোলনের ফলে সড়ক ও জনপথ এর জনতা বাজার টু গোরকঘাটা সড়কের হোয়ানক ধলঘাট পাড়া আশ্রয় কেন্দ্রের উত্তর পাশে বড়ধরণের ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) কে তথ্য দেওয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনের পরিধি বাড়ছে। এ অবস্থায় যেকোনো মুহুর্তে বড় দুর্ঘটনায় আশঙ্কার কথা জানান স্থানীয়রা।
বর্ষার শুরুতে বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে মহেশখালীর অধিকাংশ পাহাড়ি ছড়া থেকে বালি উত্তোলন করে থাকেন ব্যবসায়ীরা’এমন তথ্য দেন স্থানীয়রা। এর সত্যতাও মিলছে সরজমিনে, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর, হোয়ানক ও কালারমারছড়া ইউনিয়নের বেশকিছু জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বালি উত্তোলন করে প্রধান সড়ক হয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ দিচ্ছে একাধিক সিন্ডিকেট। এর ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে অপরিকল্পিত বালি উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। তাই অবৈধ বালির ব্যবসা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সচেতন মহল।
এ বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম এনামুল হক বলেন -পাহাড়ি ছড়া থেকে বালি উত্তোলনে আমরা কাউকে সুযোগ দিচ্ছি না, যখনই সংবাদ পেয়ে থাকি তখনই অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া ১ নং খাস খতিয়ানের জায়গা থেকে বালি নিলে আমরা কিছুই করে পারি না’ এমনটা জানান রেঞ্জ কর্মকর্তা। তবে ভিন্নমত দেন স্থানীয়রা, প্রশাসনের যোগসাজশে বালি উত্তোলনে অব্যাহত রয়েছে এমনটা দাবি তাদের। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহেশখালী’ মোঃ তাছবীর হোসেন জানান -অবৈধভাবে ভূগর্ভের বালু উত্তোলন রোধকল্পে অনেক অভিযান পরিচালনা করেছেন এবং এ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনের অভিযানের পরেও বালির ব্যবসা দিনের পর দিন বাড়তে থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম।