ঢাকাসোমবার , ১৮ অগাস্ট ২০২৫
  1. সর্বশেষ
  2. সারা বাংলা

বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, কাঁদিয়ে গেল হৃদয়ের অভিলাস, ফিটনেসবিহীন যানবাহনে সতর্কবার্তার অভাব

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:২২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

মোঃ আবু সঈদঃ

মাত্র কয়েকদিন পরই শুরু হতো স্নেহা চক্রবর্তীর জীবনের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়ে নতুন যাত্রার জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলেন স্নেহা কিন্তু সেই অপেক্ষার দিনগুলো আর শেষ হলো না। স্বপ্নের সেই ক্লাসরুমে একদিনও বসা হলো না স্নেহা চক্রবর্তীর।

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার এই শিক্ষার্থী গত ৬ আগস্ট বুধবার দুপুর দেড় ঘটিকায় সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন স্নেহা। সড়কেই মুহূর্তে প্রাণ গেল স্নেহা সহ আরও দুইজনের।

যার মৃত্যু সুনামগঞ্জবাসীর হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেছে। ৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম দিন। আর সেদিই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। স্নেহা চক্রবর্তী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সফলতার সহিত কৃতকার্য হয়। মেধাবী এই শিক্ষার্থী এবার সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পায়। তারো বাবা শান্তিগঞ্জ উপজেলার আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপুল চক্রবর্তী। মেয়ের ভর্তির কাজ সম্পন্ন করে স্নেহাকে বাসায় ফেরার জন্য সিএনজিতে তুলে দিয়ে চলে যান নিজ কর্মস্হলে। ভর্তি হয়ে বাসায় ফেরার পথে একটি বাস ও সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই দুর্ঘটনায় সে মৃত্যুবরণ করে।
সেখানেই থেমে যায় তার প্রাণচঞ্চল জীবনের পথচলা।

স্নেহা চক্রবর্তীর বাবা শান্তিগঞ্জ উপজেলার আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপুল চক্রবর্তী উপজেলার জয়কলস গ্রামের বাসিন্দা এবং উজানীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক স্বর্গীয় ব্রজবাসী চক্রবর্তীর জ্যৈষ্ঠ ছেলে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার সন্নিকটে সুবিপ্রাবি’র স্হায়ী ক্যাম্পাসের প্রস্তাবিত এলাকার পশ্চিম প্রান্তে অবস্হিত নিজ জন্মভূমি জয়কলস গ্রাম ছেড়ে বিপুল চক্রবর্তী শহরে পাড়ি জমান দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ সু-বিচারে।

স্নেহা চক্রবর্তী উজানীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে ৫ ম শ্রেণী পাশ করে ভাল ফলাফলের জন্য সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি এসসি গার্লস স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ২০২২ সালে এসএসসি পাশ করে সুনামগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজে ভর্তি হয়। সেখান হইতে ২০২৪ সালে এইচ এস সি পাশ করে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সবকিছুর পরও বেছে নিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নিজের স্বপ্নের গন্তব্য হিসেবে। গত ১২ ই আগস্ট অনুষ্ঠিত হলো নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন। বর্ণিল আনন্দ আয়োজনে সুবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ বরণ করে নিলেন নবীনদের কিন্তু স্নেহা চক্রবর্তীর সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। এর আগেই তিনি চিরকালের মত পাড়ি জমালেন অজানা দেশে।

মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ আগস্ট সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী আফসানা জাহান খুশির মৃত্যুতে
৭ই আগস্ট দিনব্যাপী সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’র শোকাহত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ব্যানারে সহপাঠীর সমবেদনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের শান্তিগঞ্জস্হ চত্বরে।
যে চলে গেছে সেতো আর ফিরে আসবে না ধানসিঁড়ি এই নদীর তীরে কিন্তু বেদনা-যাতনা হাউমাউ করে হৃদয়ের গভীরে।

স্নেহার একজন গৃহ শিক্ষক “কামাল হোসেন” হৃদয় বিদারক কন্ঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন–

মেয়ের ভালো রেজাল্টের জন্য ২০২০ সালে যখন মেয়েটি ৯ম শ্রেণিতে পড়ে তখন বাসায় গিয়ে পড়ানোর জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়। এতটায় পড়া পাগলী ছিলো মেয়েটি। যার ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালে সরকারি এসসি গার্লস স্কুল, সুনামগঞ্জ সদর, সুনামগঞ্জ থেকে গণিত সহ কয়েকটি বিষয়ে ১০০ থেকে ১০০ নম্বর পেয়ে গোল্ডেন(A+) পেয়েছে। ২০২৪ সালে এইচ এস সি পরীক্ষায় ও ভালো রেজাল্ট করেছে।
স্থানীয় একটি কোচিং-এ ভর্তি হয়ে বাসায় বসেই বইয়ের সাথে সময় কাটাতো। তার নিজের প্রচেষ্টায় এ বছরই সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রিতে ভর্তির সুযোগ পায় আর কম্পিউটার সাইন্সে ওয়েটিং লিস্টে থাকে। কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পড়েই কম্পিউটার সাইন্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়। আমি এই পর্যন্ত যত শিক্ষার্থী পড়িয়েছি তাদের মধ্যে “স্নেহা” ছিলো অন্যতম। শুধু লেখা পড়ায় না, কথা-বার্তা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, মান্য-গণ্য-সব দিক দিয়ে। মূহুর্তেই ধ্বংস করে দিয়ে গেলো সকল আশার আলো। নিমিষেই সব শেষ। না ফেরার দেশে চলে যায়-“স্নেহা”। মা-বাবার কাধেঁ সন্তানের লাশ যে কত ভারী একমাত্র সে মা-বাবা-ই জানেন।

জীবন কতটা নিষ্ঠুর! ফুল ফোটার আগেই ঝরিয়ে দেয়। কত স্বপ্ন, কত আশা ছিল ক্যাম্পাস ঘিরে—আজ কিছুই নেই। স্বপ্ন রয়ে গেল মা-বাবার কান্নার গভীরে।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে উপজেলার ঝিলমিল অডিটোরিয়ামে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.মোঃ নিজাম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ড. মো: সাইদুর রহমান, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী ও তার পরিবারকে স্মরণ করেন। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সেখ আব্দুল লতিফ ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা।

বিশেষ অতিথিবৃন্দরা ও অধ্যয়নরত ও নবাগত শিক্ষার্থীরা স্নেহা চক্রবর্তীকে বারবার স্মরণ করেন। তাহার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। স্নেহা চক্রবর্তী আমাদের নবাগত শিক্ষার্থী ছিল। তার মৃত্যুর খবরে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

স্নেহা চক্রবর্তীকে অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, পুরো শিক্ষাঙ্গনকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। তার অপূর্ণ স্বপ্ন হয়তো আর পূরণ হবে না কিন্তু তার গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নেবে অনেকেই—আর অনুভব করবে, জীবন কতটা ক্ষণিক এবং মূল্যবান।

৬ ই আগস্ট মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী আফসানা জাহান খুশি সহ
দূর্ঘটনায় আরো একজন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিএনজি চালকের মৃত্যু হয়।
শোকাহত শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানালে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসন সহ পুলিশ প্রশাসনের। দুর্ঘটনার কবল হইতে ভবিষ্যৎ সতর্কতার জন্য শিক্ষার্থীরা ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়,এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশকে নিবারণ করার জন্য ওই দিন উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কয়েকটি গাড়ি ও সিএনজিকে মামলায় আওতাভুক্ত করে এরপর আর কাউকে দেখা যায়নি উক্ত সতর্কতামূলক দায়িত্ব পালন করতে।

তথ্য প্রদানে সহযোগিতা করেন
মানিক লাল চক্রবর্তী
প্রধান শিক্ষক (প্রাথমিক)

96 Views

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মাই টিভির কথিত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী গ্রেপ্তার

বাটালি হিল : একটি স্মৃতিময় পাহাড় !!

শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের কারিগর- মাহফুজ আলম

দাঁড়িপাল্লার বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে শ্রমিক প্রতিনিধিদের অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে–শামসুল আলম বাহাদুর

গভীর রাতে জামায়াতের নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কু’পি’য়ে হ’ত্যা

কাপাসিয়ার শ্রী শ্রী বংশীদাস বাবাজি আশ্রমের কমিটি গঠন

চকরিয়া উপজেলা ছাত্রশিবিরের আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থী A+ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ক্লাস রুমকে বানিয়েছে গোডাউন
চকরিয়ায় বিপুল পরিমাণ সরকারি বই পুড়ে ছাঁই!

ঢাবিতে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্টদের’ ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করবে বিক্ষুব্ধরা

কাপাসিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার ৮১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক তুহিনের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল

শান্তিগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন