ঢাকাসোমবার , ১৭ মার্চ ২০২৫
  1. সর্বশেষ
  2. সারা বাংলা

ফুল টাইম করেন আওয়ামী রাজনীতি, পার্টটাইমে তারা সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮:৩১ অপরাহ্ণ

Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারীর হয়েও
আওয়ামী রাজনীতি ও ভোটডাকাতির নির্বাচনগুলোতে একদিকে রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের প্রচারণা অন্যদিকে ভোটের দিনে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হিসেবে দস্যুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রমাণ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিয়া তাবাসসুম নিশির করা কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সাড়া ফেলেছে। সুসং সরকারি কলেজ হেল্পলাইনসহ কয়েকটি গ্রুপে তার করা একাধিক পোস্টে দেখা যায় স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের পরিচয় হলঃ (১)আব্দুল আজিজ, সহকারী অধ্যাপক,(ইসলাম শিক্ষা), দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ। (২)ফারুক আহমেদ তালুকদার, প্রিন্সিপাল, দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ। (৩)রফিকুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক, দক্ষিণ ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। (৪) কাজল মিয়া, প্রভাষক(বাংলা), আলহাজ্ব মাফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজ। এছাড়া আরেকটি ফটোতে দেখা যায় বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, যেখানে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদারকে। যা কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে। অভিযুক্তদের মধ্যে ফারুক আহমেদ তালুকদার বিগত ৩৩ বছর যাবত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির পদধারী নেতা হলেও বাকিরা আ.লীগের কে কোন পদে আছেন সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তারা প্রত্যেকেই চিহ্নিত ও আওয়ামী রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতাবলে তারা প্রত্যেকেই অসংখ্য অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এমনকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঘোর বিরোধীতার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় অদৃশ্যশক্তির সাথে যোগসাজশ করে তারা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত দুর্গাপুরের কাকৈরগড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজ ভাই বাচ্চু তালুকদারকে নৌকামার্কায় জেতাতে রাতের আধারে সন্ত্রাসী কায়দায় কেন্দ্র দখলেরও অভিযোগ আছে অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদারের বিরুদ্ধে। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ প্রত্যেকটা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা, কেন্দ্রদখলেরসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে। এমপিও ভুক্ত একটি কলেজের অধ্যক্ষ ও বিভিন্ন অরাজনৈতিক পদে থেকে ফারুক আহমেদ তালুকদার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “৯০’র দশক থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত এক নাগাড়ে টানা প্রায় ৩২ (বত্রিশ) বছর বিভিন্ন দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত আছি এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবো”। (তথ্যসূত্রঃ দুর্জয় বাংলা, ১৯ নভেম্বর ২০২৩)

বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদে থাকা এই অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শীর্ষ নেতাও ছিলেন। তাছাড়া অভিযুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালে গোপনে সরকারি বই বিক্রি গিয়ে তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের ভূঁইয়ার নিকট হাতেনাতে ধরা খান। প্রায় ২৫০ কেজি সরকারি বই জব্দ করে বিচারের সুপারিশ করা হলেও আওয়ামী রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পুনর্বহাল হন।(তথ্যসূত্রঃ আরটিভি অনলাইন, দৈনিক প্রথম আলো ১৫ জানুয়ারি ২০২০)

এখানে অভিযুক্ত দুর্গাপুর মহিলা কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধেও ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ আছে। ইতিমধ্যেই সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের অভিযোগের তদন্তে শিক্ষাসনদ জালিয়াতির করে অবৈধভাবে চাকুরিতে যোগদানের প্রমাণ মেলেছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও উপজেলা খামার ব্যবস্থাপক জনাব গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, ” ওনার শিক্ষাসনদে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে”।অথচ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট হয়ে নয়কে ছয় করে কলেজ অধ্যক্ষের চেয়ারেও আসীন হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া নিয়োগকালীন সময়ে কাম্য যোগ্যতার না থাকার পরেও বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে ফারুক আহমেদ তালুকদারকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের প্রধান সহযোগিও ছিলেন তিনি। তৎকালীন কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ ছবি বিশ্বাসসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ভাগবাটোয়ারা করে রাতারাতি অনেক সম্পত্তির মালিক বনে যান তিনি।
নিজের দুর্বলতা ঢাকতে সর্বাবস্থায় তিনি ক্ষমতার ধারেকাছে থাকেন। এইজন্য ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনৈতিক খোলস পাল্টানোর জন্য চেস্টা করতেছেন।

স্থানীয় বেশকয়েকজন কলেজ শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ” অধ্যক্ষ পদে বসে তারা সর্বেসর্বা হয়ে যান। জবাবদিহিতার ভয় ছিলো না। একদিন কলেজে আসলে পরবর্তী কয়েকদিন কলেজে আসতো না। কোনোদিন কলেজে আসলেও ২০-২৫ মিনিট থেকেই চলে যেতো রাজনৈতিক কাজকর্মে। হাজিরা খাতাগুলো ৫ আগস্টের পর থেকে তারা ঠিক করা শুরু করেছে। ফুল টাইম করেছেন আওয়ামী রাজনীতি, শিক্ষকতাটা তাদের কাছে পার্ট-টাইমের মতো। অনিয়ম, দুর্নীতি তাদের নিত্যদিনের ঘটনা! ”

সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের মিডিয়া সেল সদস্য নাহিয়া তাবাসসুম নিশি বলেন,
“একটা ফটো হলে না হয় যুক্তির খাতিরে মেনে নেওয়া যেতো কিন্তু একাধিক স্পটে তাদের নির্বাচনি প্রচারণার ফটো আছে। অরাজনৈতিক পদে থেকে রাজনীতি করাটা বেমানান। সরকারি বিধিবহির্ভূত। প্রশাসনের নজরে দেওয়া হয়েছে। দেখি ওনারা কি ব্যবস্থা নেয়।”

দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জনাব আব্দুল আউয়াল বলেন, ” ফারুকগং দুর্নীতিবাজ এটা আমিও জানি। আ.লীগের ক্ষমতায় বিগত ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করেছে ওরা। অসংখ্য দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে আমিও তার বিচার চাই। ভার্সিটিয়ান মঞ্চের যারা এদের মুখোশ উন্মোচন করেছে তাদের প্রতি পূর্ণসমর্থন জানাচ্ছি।”

দুর্গাপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক, তারা সবসময় সত্যনিষ্ঠ ও ন্যায়নিষ্ঠ হবে কিন্তু শিক্ষকতাকে পুঁজি করে যারা ভিন্নমত দমনের রাজনৈতিক প্রচারণা চালায়, দুর্নীতি করে তাদের জন্য নিন্দা ও ঘৃণা। আমরা এদের বিচারের দাবি জানাই। ”

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, “সরকারি কর্মচারী ( আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ২৫ বিধি মোতাবেক সরকারি কর্মচারী কোন রাজনৈতিক দলের বা এর অংগসংগঠনের সদস্য বা এর কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে পারবে না।যদি অংশগ্রহন বা জড়িত হয়, তবে তা অসদাচরণ হিসেবে গন্য হবে এবং এই অসদাচরণ এর দায়ে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী ( শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে।”

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার জনাব তপন চন্দ্র শীল বলেন, “বেতনভূক্ত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।”

নেত্রকোনা জেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, “এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্ত থেকে রাজনীতি করার কোনো এখতিয়ার নাই। রাজনৈতিক প্রচারণা ও বিক্ষোভ মিছিল করা সরকারি বিধিমোতাবেক শাস্তিযোগ্য। আমরা আশা করবো উপজেলা তদন্ত কমিটি একটি সুন্দর ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত দিবে”।

560 Views

আরও পড়ুন

ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে আইএইচসি পরিবারের ইফতার

শান্তিগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর দিনব্যাপী ইফতার মাহফিলের প্রচারণা

সুনামগঞ্জে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সনাকের মানববন্ধন

যাঁরা দেশে টাকা পাচার করেছে লন্ডনে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট শুরু হয়েছে —————————————কয়ছর এম আহমদ

দেশব্যাপী ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোনাগাজী উপজেলা জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের সদস্য সচিব আব্দুল আল আমিনের নেতৃত্বে মশাল মিছিল

কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা, যানজট এবং সুশাসন নিশ্চিতে সুশীল সমাজের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

চকরিয়া থানার ওসির তত্বাবধানে বিট পুলিশিং সভা

গাজীপুরে গাছা সাংবাদিক ক্লাবের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল

পূর্ণিমা সরকারের কবিতা ❝ আগমনী বসন্ত ❞

বোয়ালখালীতে নব যোগদানকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের বরণ

আবরার হত্যা মামলা : ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল

যেভাবে ধরা পড়লো শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ