জেমস আব্দুর রহিম রানা:
যশোর শিক্ষাবোর্ডে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯২.৩৩। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। পাসের হারের দিক থেকে সারাদেশে যশোর বোর্ড শীর্ষে রয়েছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টায় প্রেসক্লাব যশোরের সাইফুল আলম মুকুল মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ এ তথ্য জানান।
এ বছর যশোর বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে এক লাখ ৬২ হাজার ৭০০ পরীক্ষার্থী ফরমপূরণ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক হাজার ১৩৩ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়নি।
পরীক্ষা বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, উল্লেখিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছিল নিয়মিত এক লাখ ৪২ হাজার ৪৯২, অনিয়মিত ২০ হাজার ৮২ ও মানোন্নয়ন ১২৬ জন। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪১ হাজার ৫৬৭, মানবিক বিভাগ থেকে এক লাখ এক হাজার ৪৯১ ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১৭ হাজার ৯৬৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৭৯ হাজার ৪৫৭ ও ছাত্রী ৮১ হাজার ৪৬৯ জন। বোর্ডের অধীন ১০ জেলার ২৯৩ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় দু’হাজার ৫৬৬ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
এ বছর সর্বমোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৭ হাজার ৪৭৬, মানবিক বিভাগে দু’হাজার ২৩৭ ও বাণিজ্য বিভাগে এক হাজার ৪৮ জন। তার মধ্যে ছেলে নয় হাজার ৩৩০ ও মেয়ে ১১ হাজার ৪৩১ জন রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জিপিএ-৪ থেকে ৫ এর মধ্যে ৫০ হাজার ৮১২, জিপিএ-৩.৫ থেকে ৪ এর মধ্যে ৩১ হাজার ৬২৩, জিপিএ-৩ থেকে ৩.৫ এর মধ্যে ২৫ হাজার ৪৫০, জিপিএ-২ থেকে ৩ এর মধ্যে ১৯ হাজার ২১৭ এবং জিপিএ-১ থেকে ২ এর মধ্যে ৭১৪ জন রয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডে এবার ৪২২ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ পাস করেছে। শতভাগ ফেল করেছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। গত বছর শতভাগ পাস করেছিল ১৯৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে।
এবার ফলাফলের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা। দ্বিতীয় খুলনা, আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর। এছাড়া, নড়াইল চতুর্থ, কুষ্টিয়া পঞ্চম, বাগেরহাট ষষ্ঠ, মাগুরা সপ্তম, চুয়াডাঙ্গা অষ্টম, ঝিনাইদহ নবম এবং মেহেরপুর দশম স্থানে রয়েছে। গত বছর এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৮৬.১৭, ২০২২ সালে ছিল ৯৫.১৭ এবং ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯৩.০৯।
এ বছর পাসের হার বৃদ্ধি পাওয়া সম্পর্কে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ বলেন, ‘ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে প্রশ্ন ব্যাংকের স্টান্ডার্ড প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারছে। এর বাইরে মোটিভেশন দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বোর্ড। যার ফল পাসের হার বৃদ্ধি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) আব্দুল আলী উপস্থিত ছিলেন।
উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন যেভাবে
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার থেকে এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু হবে। ১৯ মে পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিপত্রের জন্য ১২৫ টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। টেলিটক প্রিপেইড ফোন থেকে জঝঈ <স্পেস> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে, এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে। এতে সম্মত থাকলে জঝঈ <স্পেস> ণঊঝ <স্পেস> পিন নম্বর <স্পেস> যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে (যেকোনো) ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।
প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে, সেসব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে মোট ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে।
এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯২.৩৩ শতাংশ।
সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে এবার পাসের হার ৭৩.৩৫ শতাংশ। এছাড়া, ঢাকা বোর্ডে ৮৩.৯২, রাজশাহীতে ৮৯.৩, বরিশালে ৮৯.১৩, চট্টগ্রামে ৮২.৮, কুমিল্লায় ৭৯.২, দিনাজপুরে ৭৮.৪ ও ময়মনসিংহে ৮৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।
এছাড়া, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯.৬৬ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৮.৯২ শতাংশ।
আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা পরীক্ষার্থীরা
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পরপরই পরীক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল পেয়েই বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। যশোরের বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এই উচ্ছ্বাস দেখা যায়। স্কুলের ভেতরে ও বাইরের রাস্তায় পরীক্ষার্থীরা একে-অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে। কেউ আনন্দের এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে তোলে সেলফিও। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আনন্দ ভাগাভাগি করতে উপস্থিত হন অভিভাবকরাও। আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাকাটি করতেও দেখা যায় কারো কারো ।