জাহেদ হোসেন:
ফ্যামিলি কার্ড দিয়ে কিনে নেওয়া হয় ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া টিসিবির পণ্য। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়
খাদ্যপণ্য বিতরণে টিসিবিতে বছরে হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র মানুষের জন্য নেওয়া সামাজিক সুরক্ষার এই কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এ অবস্থায় টিসিবিকে ত্রুটিমুক্ত তালিকা করার পরামর্শ দিয়ে দ্রুত সবার হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)।
আর এই স্মার্ট কার্ড তৈরিতেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। ওই স্মার্ট কার্ড তৈরিতে জনপ্রতি গুনতে হচ্ছে ২০০ টাকা করে।
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের ছয়টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার ৯৭১ জন টিসিবির ভোক্তাদের নিকট থেকে জনপ্রতি দুইশত টাকা করে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তারা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে । এতে করে পুরো উপজেলায় টিসিবির ভোক্তাদের দিতে হচ্ছে প্রায় ৩১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা ।
নিম্ন আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরনে সরকার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি প্রকৃত ভোক্তারা যাতে বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্যে স্মার্ট কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। বিপরীতে ইউপি উদ্যোক্তারা ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারা শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবির পণ্য গ্রহীতাদের মধ্যে কয়েকজন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় বলে কিছুটা সাশ্রয় পেতে টিসিবির পণ্য গ্রহণ করি। সরকার ভর্তুকি দিয়ে পণ্যদ্রব্য প্রদান করলেও স্মার্ট কার্ড তৈরিতে ইউনিয়ন পরিষদে ২০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
স্মার্ট কার্ড তৈরির বিপরীতে টাকা নেওয়ার বিষয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “টাকা উপজেলা থেকে নিতে বলেছে। আমরা ওই টাকা পিনআপ করে রেখে দিছি। আপনি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন বলেই উনি আর মন্তব্য করেননি।”
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন পরিষদের এক উদ্যােক্তা বলেন, “২০০ টাকা করে ইউএনও স্যারই নিতে বলেছে। এখানে আমাদের কোনো কিছু নেই।”
অন্যদিকে, দুঃখ প্রকাশ করে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, “গরিব মানুষগুলো ২০০ টাকা বাঁচানোর জন্য টিসিবির পণ্য ক্রয় করে থাকেন। কিন্তু এখন উল্টো তাদেরকে দিতে হচ্ছে। তবে উনার পরিষদে ওই রকম হতে দিবেনা বলেও জানান তিনি।
টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “এসব টাকা ইউডিসি (ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার) নিচ্ছে। সরকার তাদের বেতন দেয় না, তারা মানুষকে সেবা দিয়েই টাকা নেয়।”
দুঃখের বিষয়, ডিজিটাল সেন্টারের লোকজন বলছে ইউএনও’র জন্য নিচ্ছে, ইউএনও বলছে ইউডিসি নিচ্ছে। এভাবে একে অপরের ঘাড়ের উপর দোষ চাপিয়ে ভোক্তাদের শোষণ করে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা গিলছে বলে জানা গেছে ।
একে অন্যের দোহাই দিয়ে এভাবে আর কত শোষণ করবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানান সচেতন মহল এবং পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান প্রত্যাশা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এভাবে ভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করার কারণে টিসিবির তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে না অনেক গরিব মানুষ। ১৫,৯৭১ জন যদি টিসিবির তালিকায় নাম লেখায়,তখনি ৩২ লক্ষ টাকা পাবে, না হয় টাকার পরিমাণ কমে যাবে বলেও জানা গেছে।