এম,এম,রুহেল জৈন্তাপুর সিলেট :
এমনিতেই প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটর জৈন্তাপুর। সিলেটের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পান-পানি-নারী খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলা। এ উপজেলায় প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ ঝর্ণা বেষ্টিত লাল শাপলার বিলনামে পরিচিত সারাদেশে ডিবির হাওর। প্রকৃতি যেন এখানে আপন হাতে বিছিয়ে দিয়েছে শাপলার সৌন্দর্য আর ঢেলে সাজিয়েছেন সৃষ্টির এক অপরুপে। তেমনি এক অপরূপ সৌন্দর্যের স্বাক্ষী লাল শাপলার রাজ্য; ডিবির হাওর শাপলা বিল।
সিলেট শহর হতে ডিবির হাওরের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। জৈন্তাপুরে জৈন্তরাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ডিবির হাওর, ইয়াম, হরফকাটা কেন্দ্রী বিল সহ রয়েছে এখানে চারটি বিল।
৪টি বিলে প্রায় ৯ শত একর ভ’মিতে প্রাকৃতিক ভাবে লাল শাপলার জন্ম। বিলগুলোকে কেন্দ্র করেই নাম করা হয়েছে ডিবির হাওর শাপলা বিল।
রাম সিংহের বিলগুলো শাপলার সিজনে শাপলার রাজ্যে রুপ নেয়। বিলে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলা এবার সাদা শাপলার দেখা মিলছে। লতা-পাতা-গুল্মে ভরা
বিলের পানিতে শত-হাজারো লাল শাপলা। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি যেনো নিজ হাতে সাজিয়ে তুলে লাল শাপলার ডিবির হাওরকে।বিলে দেখে মিলে বিলুপ্ত প্রজাতির পাখির অনাঘোনা।চোখ জুড়ানো মন ভুলানো লাখ লাখ শাপলায় ছেয়ে থাকা ডিবির হাওর।দেশে অবশ্য শাপলার বিলের অভাব নেই৷ তবে যারা ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের কাছে দেশের মধ্যে অন্যতম শাপলা আর পাহাড় ঘেষা বিল দেখার জন্য জৈন্তাপুরের শাপলা বিল পছন্দের মধ্য মনি কুটায়।
জায়গাটা ঠিক বাংলাদেশ-ভারতে একেবারে পাশেই সীমান্ত। তাই মেঘালয়ের পাহাড়গুলো যায়গাটার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। এখানেই ডিবির হাওর নিজেকে আলাদা করেছে অন্য বিলের চেয়ে। ডিবির হাওরে শাপলা থাকে মোটামুটি ৩/৪ মাস।
নভেম্বর থেকে জানুয়ারি গেলেই দেখা মিলবে এই অপরূপ সৌন্দর্য্যের। তবে এজন্য যেতে হবে একদম সকাল সকাল।বেলা বাড়তেই শাপলার গায়ে পড়লে আস্তে আস্তে ফুলগুলোর পাপড়ি বন্ধ হয়ে যায়। মোটামুটি ৯.০০-৯.৩০ এর মধ্যে গেলে জাগ্রত শাপলার দেখা মিলবে। হাওরে নৌকায় ঘুরতে পারবেন। গেলে তো অবশ্যই নৌকায় উঠবেনই। ভাড়া নিবে ঘন্টায় ৩০০ টাকা। এই ভাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারন করে দেয়া। মাঝারি সাইজের এক নৌকায় ৭/৮ জন উঠা যায় অনায়াসেই।
ইতিহাস হতে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য ছিল জৈন্তিয়া। শ্রীহট্ট তথা ভারত বর্ষের অধিকাংশ এলাকা যখন মোগল সার্মাজ্যভ’ক্ত ছিলো, তখনও জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। প্রায় ৩৫ বছর স্বাধীন রাজ্য হিসাবে পরিচালিত হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ মহাভারত এবং রামায়নে জৈন্তিয়া রাজ্যের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য রয়েছে। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দ রাজা বিজয় সিংহের শাসনকালে জৈন্তিয়ায় খনিজ সম্পদে ভরপুর ছিল বর্তমানে ও রয়েছে। রাজা বিজয় সিংহ ১৭৭৮ সালে সারিঘাট ঢুপি গ্রামে রামেশ্বর শিব মন্দির স্থাপন করেন।
১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারিনামক ইংরেজ রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্ধি করে মূল্যবান সম্পদ লুঠ করে নেয়।
ডিবির হাওড়ে যে মন্দিরটি দেখা যায়, কেউ কেউ এটাকে রাজা বিজয় সিংহের স্মৃতি বিজড়িত সমাধী স্থল বলে থাকেন। আবার কেউ বলেন জৈন্তা রাজ্যের এক রাজাকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন এ মন্দিরটি; যা এখন জরাজীর্ণ।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মৌরিন করিম প্রতিবেদক কে জানান শাপলা বিলের সৌন্দর্য রক্ষায় আমরা বিলের লীজ মুক্ত রেখেছি।এবং পর্যটকের সুবিধার্থে এখানে রাস্তা উন্নয়ন ও বসার স্হান নির্মান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য এই বিল বিগত দিনে লিজ নিয়ে মাছ চাষের কারণে ডিবির হাওরের শাপলা বিল গত দুই বছর ছিলো শিকারীর দখলে। এবার এই লিজ বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।সর্ব মহলের দাবী শাপলা বিল ও জৈন্তাপুর কে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা। উর্দ্ধতর্ন কতৃপক্ষের সঠিক কার্যকরী সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে প্রকৃতির এই অসাধারণ সৌন্দর্যের ভবিষ্যত।