এম এ মোতালিব ভুঁইয়া :
১৯৭১ সালে ৫ নম্বর সেক্টরের অধীনে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন, কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি তার। অবশেষে এই অতৃপ্তি আর দুঃখ নিয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে পরপারে। তবে তার সন্তানরা বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মুক্তিযোদ্ধা সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার ৭নং লক্ষীপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার নগর গ্রামের মৃত হাজী ইয়াকুব আলীর ছেলে মো:মফিজ আলী।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের আহবানে সাড়া দিয়ে ভারতের মেঘালয় একুয়ানে ট্রেনিং সেন্টারে ২৯দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে
৫ নম্বর সেক্টরের অধীনে ৫নং সাবসেক্টর পাহীনীয়র কোম্পানীতে যুদ্ধ কালীন কোম্পানি কমান্ডার তোফাজ্জল (উজির মিয়া)অধীনে স্বাধীনতার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে
টেংরাটিলা, মহব্বত পুর,লক্ষীপুর, গোবিন্দগঞ্জ বাজারসহ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে তিনি অংশ নেন।যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধকালীন সময়ে ৫নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী,প্লাটন কমান্ডার মো:মোস্তাফিজ বিল্লা চৌধুরী, সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলাল দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করেন।
দেশ স্বাধীনের পর সহায়-সম্বলহীন মফিজ আলী অভাবের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়ান।
সেই সুবাদে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহের কারণে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাইয়ের সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হতে বাদ পড়েযান। এ জন্য তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
২০১০ সালে মফিজ আলী মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেতে জেলা ইউনিট কমান্ড, উপজেলা কমান্ডারদের কাছে বারবার ধরনা দেন মফিজ আলী কিন্তু লাভ হয়নি কোনো। ২৩ নভেম্বর ২০১৫ সালে মারা যান তিনি।
এরপর থেকে তার ছেলে হাছান আলী বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনে কয়েক দফা দরখাস্তসহ দেনদরবার করলেও কাজে আসেনি।
মফিজ আলীর মুক্তিযোদ্ধার সত্যতা নিশ্চিত করে ৫নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা লে:ক:আব্দুর রউফ বীর বিক্রম,আব্দুল মজিদ বীরপ্রতীক, এম এ হালিম বীরপ্রতীক,এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী (খসরু),তোফাজ্জল হোসেন (উজির মিয়া),মো:মোস্তাফিজ বিল্ল্যাহ পৃথক পৃথক প্রত্যায়ন পত্র ও
মনাজির আলী,আব্দুল হামিদ,মুকসেদ আলী যৌথভাবে সাবেক দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক (প্রতি স্বাক্ষরিত) প্রত্যায়ন পত্র দিয়েছেন। প্রত্যায়ন পত্রে মফিজ আলী ৫ নম্বর সেক্টরের ৫নং সাব সেক্টর বাঁশতলার অধীনে লিয়াকতগঞ্জ বাংলাবাজার এলাকায় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হক জানান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যায়ন পত্র মোতাবেক জানাযায় মহান স্বাধীনতা যোদ্ধ চলাকালীন সময়ে মফিজ আলী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।বিধি মোতাবেক মফিজ আলীকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তভূক্তি করে তাহাকে সরকারী যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানের জোর সুপারিশ করছি।
মফিজ আলীর ছেলে হাছান আলী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে তার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার গল্প শুনে বড় হয়েছি। এমনকি তার সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেও অনেক গল্প শুনেছি। বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্য পাওয়া নয়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া। তিনি এ বেদনা নিয়েই পরকালে চলে গেছেন। আমি তার সন্তান হিসেবে সরকারের কাছে দাবি করছি, আমার বাবা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন, তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।