শহীদুল ইসলাম কাজল#
জনস্বার্থে নেই কোন জনপ্রতিনিধি ফলে নৌ-যোগাযোগ ও পরিবহন সেক্টরের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি মিলছে না অসহায় মহেশখালীবাসীর। জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতে হলে ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট’ এমন অভিমত সচেতন মহলের। তবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বেপরোয়া সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য চলছে সর্বত্র। ঘাটে ও সড়কে যাত্রী হয়রানি নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জেটি ঘাটের হয়রানি নিয়ে মহেশখালীতে আগত পর্যটকরাও নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। মহেশখালী জেটি ঘাট যুগের পর যুগ আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র মকছুদ মিয়া ও বিএনপি নেতা আতাউল্লাহ বোখারী পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকেন। ভাগাভাগির রাজনীতি হওয়ায় সবসময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে তারা।
সে কারনে তাদের ছত্রছায়ায় ঘাটে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আচরণে অনেক টা বেপরোয়া। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। কেউ প্রতিবাদ করলেই ঘাড়ত্যাড়া ওই লোকজন জানিয়ে দেয় তারা বোকারীর লোক’ এমনই তথ্য পাওয়া যায় ‘এমডি এনামুল হক’ নামের একজনের ফেসবুক পোস্টে। মাঝেমধ্যে ঘাটের অনিয়ম নিয়ে উপজেলা প্রশাসন বৈঠকে বসলেও পরিবর্তন আসেনি কোথাও। তাই এ যেন জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা মহেশখালীবাসীর। জুলাইয়ের ছাত্র জনতার অকল্পনীয় বিপ্লবের পরও মহেশখালীর আমজনতার আশানুরূপ কোন পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ করে জলে ও স্থলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে লাউ সে-ই কদু এ অবস্থায় রয়ে গেছে।
জলে ও স্থলে সীমাহীন হয়রানি ও নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘ সময়ে। আইনি মারপ্যাচে ঘাটের উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ও হারাচ্ছে সরকার। সর্বশেষ জেটিঘাট নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশও উপেক্ষিত। ফলে শৃংঙ্খলা নেই কোথাও। এছাড়া মহেশখালীর সড়কে ভাড়া নির্ধারনে ও নেই কোন জবাবদিহিতা। তেল/ গ্যাসের দাম একটু এদিক-সেদিক হলেই সংশ্লিষ্টদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করে নির্ধারিত হয় ভাড়া। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও বাস্তবতা ভিন্ন। দীর্ঘ সময়ে নিরবে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনও’ তাই জনদাবী আলোর মুখ দেখেনি এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা চকরিয়ায় ‘বদরখালী টু চকরিয়া’ ১৮ কিলোমিটার সড়কে ভাড়া নিচ্ছেন ৫০ টাকা। অথচ মহেশখালীতে ২৩ কিলোমিটার সড়কে ভাড়া ১০০ টাকা! জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ছাত্রজনতার দাবির প্রেক্ষিতে নৌ বাহিনী, পরিবহন সংগঠন ও ছাত্রজনতার বৈঠকে মাতারবাড়ী টু বদরখালী ৪০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ হয়। এর কয়েকদিন পর বেপরোয়া পরিবহন সিন্ডিকেট আবারও ৫০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। এ ছাড়াও আফজলিয়া পাড়া রাস্তার মাথা থেকে ধলঘাটা নাছির মোহাম্মদ ডেইল পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া নিচ্ছে ৫০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আতাহার ইকবাল।
জানা যায়,পরিবহন চালকদের কাছ থেকে আদায়কৃত কল্যাণের টাকা বছর শেষে তাদেরকে দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে ওই টাকায় প্রশাসন ম্যানেজকরা হয় এমনই জানান শ্রমিক নেতারা। এই অজুহাতে শ্রমিকদের রক্তচোষে খাচ্ছেন পরিবহন সংগঠন। আতাউল্লাহ বোখারী ও আবু বক্কর উপজেলা বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী মহল হওয়ায় পদ হারানো বা পদ বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে বিএনপি’র অনেক প্রতিবাদী মানুষও মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছেন জলে ও স্থলে জিম্মি হওয়ার বিষয়টি। তাই সাধারণ মানুষের মন্তব্য ‘মহেশখালীতে জনস্বার্থে নেই কোন জনপ্রতিনিধি’। আওয়ামী লীগের দীর্ঘসময়েও মহেশখালীর পরিবহন সেক্টরে নিয়ন্ত্রণে ছিলো জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ বোখারী।
বিভিন্ন অজুহাতে প্রায়সময় অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি করে ২২ কিলোমিটার সড়কে ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করেন। এ নিয়ে ইতিপূর্বে কর্তৃপক্ষের কাছে অন্যায্য ভাড়া আদায় ও অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য নিয়ে অভিযোগ দিলে-ও কাজের কাজ কিছুই হতো না এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই সময়ের পৌর মেয়র মকছুদ মিয়ার ইশারায় আতাউল্লাহ বোখারী’র একছত্র নিয়ন্ত্রনে ছিলো পরিবহন সেক্টর। দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন এলাকার একসময়ের সন্ত্রাসী ও উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির লোকজনদের নিয়েই গড়ে তুলেছেন পরিবহন শ্রমিক সংগঠন। তাই নিজেদের অধিকার নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা কথা বললেই কোনঠাসা করা হয় তাদের’ এমনই তথ্য দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন শ্রমিক।
এ কারণে বাধাহীনভাবে চলছে কল্যাণের টাকা লুটেপুটে খাওয়ার প্রতিযোগিতা। জেটি ঘাটে ও সড়কে দীর্ঘ সময়ের সীমাহীন নৈরাজ্য চললেও তৎকালীন এমপি আশেক উল্লাহ রফিক ও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি সমঝোতার রাজনীতির কারণে’ এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। বলতে গেলে মহেশখালীতে দু পরিবারে ভাগাভাগির রাজনীতির কারণে জনদাবী সমূহ উপেক্ষিত। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন আসেনি পরিবহণ সেক্টরে। সেখানে পরিবহন শ্রমিকরাও শোষিত, যার দরুণ অন্যান্য উপজেলার তুলনায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় এমন তথ্য পাওয়া যায়। বে-হিসাবি লুটপাটের সুযোগ থাকায় দিন দিন বাড়ছে বিভিন্ন প্রকার পরিবহন শ্রমিক সংগঠন।
হাজারেরও অধিক বিভিন্ন প্রকার পরিবহন থেকে দৈনিক প্রায় ৫০/৬০ হাজার টাকার লেনদেন হয় এমন তথ্য পাওয়া যায়। কল্যাণের নামে আদায়কৃত এই টাকার যথাযথ বন্টন নিশ্চিত করা গেলে বন্ধ হবে লুটপাট। লুটেপুটে খাওয়ার পথ বন্ধ হলে তখন কথিত পরিবহন সংগঠন ও ভাড়া কমে আসবে এমনই মন্তব্য সচেতন মহলের। তাই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী মানুষগুলো। । এ বিষয়ে আতাউল্লাহ বোখারী’র বক্তব্যের জন্য একাধিক বার যোগাযোগ চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জেটি ঘাট ও পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য নিয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হেদায়েত উল্যাহ্ জানান -জেটি ঘাট কক্সবাজার ও মহেশখালী পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের পর সড়ক পরিবহন সেক্টরেও মহেশখালীতে ভাড়া কমানো হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে বাস্তবে ভাড়া কমানোর কোন সত্যতা পাওয়া যায় নি। বদরখালী টু গোরকঘাটা ২২ কিলোমিটার সড়কে পূর্বের অন্যায্য ১০০ টাকা ভাড়া বহাল রয়েছে। আদৌ কি মুক্তি পাবে জলে ও স্থলের জিম্মি দশা থেকে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।