স্টাফ রিপোর্টার ছাতকঃ
ছাতকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটেছে। রোববার বেলা দেড়টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে পথচারি, ব্যবসায়িসহ দু’পক্ষের অন্তত ১৭ জন ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ছাত্রলীগের রমজান, সেলিম, নাবিল ও মাসুমকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের দুলন, জালাল, আনোয়ার, সুয়েব, আল-মুমিনকে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ কলেজ গেইট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রলীগের দু’সদস্যের মধ্যে বাক-বিতন্ডা ও হাতা-হাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার বেলা দেড়টায় কলেজ গেইট এলাকায় ছাত্রলীগের এ দু’গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে আবারো কথা কাটা-কাটি ও হাতা-হাতির ঘটনার এক পর্যায়ে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় দু’পক্ষ পাথর ইট পাটকেল বৃষ্টির মতো নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ছাতক সড়কে সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আতঙ্কে পথচারিরা দিকবেদিক ছুঁটাছুটি করতে থাকে। ব্যবসায়িরাও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে নিরাপদে চলে যান। প্রায় পনে একঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষের ফলে উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ না থাকায় ব্যবসায়ি নুরুল আমীন, আবুল লেইছ, রইছ আলী, বাবলু মিয়াসহ স্থানীয় লোকজনের মধ্যস্থতার এক পর্যায়ে দু’পক্ষ দু’দিকে চলে গেলে পরিস্থিতি ও সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
সংঘর্ষে নিউ বুরাইয়া রেস্টুরেন্টের চকেসের গ্লাস, নজির আলীর পান-সিগারেটের বাক্স ও জহির মিয়ার পান-সিগারেটের দোকানের চেয়ার ভাঙচুর করে ক্ষতি সাধিত করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র প্রদর্শনী করা হয়। একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মাছ বাজারের ব্যবসায়িদের অভিযোগ, ঘটনার সময় তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্টানে বসা অবস্থায় পশ্চিম দিক থেকে অসংখ্য ইট-পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে ব্যবসায়ি খয়ের আহমদ, আজাদ মিয়া ও তেরাব আলী আহত হয়। এসময় মহিলাসহ আরো পাঁচজন পথচারি আহত হয়েছেন বলে মৎস্য ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের জালাল সিদ্দিকী বলেন, শনিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় আল-মুমিন ও কুতুবের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে কথা কাটা-কাটি ও হাতা-হাতির ঘটনা ঘটে। এসময় তারেক আহমদ কুতুবের পক্ষ নিলে তখন তিনিও পক্ষ নেন আল মুমিনের। বিষয়টি এখানেই শেষ হলে রোববার কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় তারেক, কুতুবরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ শুরু করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে তাদের পাল্টা জবাব দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে তারেক আহমদ জালাল সিদ্দিকীর বক্তব্য প্রত্যাখান করে বলেন, শনিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় কার সাথে কে কথা কাটা কাটি ও হাতা-হাতি করেছে তার জানা নেই। এদিন তিনি কলেজে এসে মার্কশীট নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। তবে রোববার দুপুরে তিনি বাড়ি থেকে গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট এলাকায় এসে দেখেন গোবিন্দনগরের রাস্তায় ডালিমের নেতৃত্বে ৪৫/৫০ জন ছাত্রলীগ শসস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করছে। এদের মধ্যে অনেকেই কলেজ ছাত্র নয়। মুহুর্তের মধ্যে অস্ত্রধারিরা তাদের উপর হামলা চালালে তারাও পাল্টা ধাওয়া করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে তাদের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আহত হয়।
এদিকে শসস্ত্র অবস্থায় অবস্থানের বিষয়টি সত্য নয় উল্লেখ করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক জাহিদ হাসান ডালিম বলেন, এটি কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরিন বিষয়। তিনি বলেন, সিলেট থেকে প্রাইভেট কার যোগে জাউয়া এলাকায় এক বিয়ে অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। লামাকাজি এলাকায় এসে জানতে পারেন যে, গোবিন্দগঞ্জে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে মারামারি চলছে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি মধ্যস্থতা করে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু এসময় একটি পক্ষের লোকজন তার প্রাইভেট গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে দিয়ে ক্ষতি সাধিত করেছে।