ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ
  2. সারা বাংলা

গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে অপচিকিৎসা, দায়ী কে?

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:০৮ অপরাহ্ণ

Link Copied!

শহীদুল ইসলাম কাজল।

গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে অপচিকিৎসা, এর জন্য দায়ী কে? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। গ্রামের হতদরিদ্র অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত কল্পে সরকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার পদ রাখেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পদ থাকলেও নেই ডাক্তার, সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় মানুষ। এই সুযোগে নামমাত্র এলএমএএফ পল্লী চিকিৎসকের হাতে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।

প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় অহরহ ফার্মেসী গড়ে উঠেছে, সেখানে বসে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন এলএমএএফ, আরএমপি প্রশিক্ষণ নেওয়া পল্লী চিকিৎসক। অভিযোগ উঠেছে, এধরণের প্রশিক্ষণের কথা বলে ফার্মেসী খুলে ঔষধ বিক্রির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাওয়া অনেকের-ই বাস্তব প্রশিক্ষণ নেই। এমনও দেখা যায়- কয়েকমাস ফার্মেসীতে বসে ঔষধের নাম আত্মস্থ করে নিজে দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যসেবা। ভূঁইফোড় কতোগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে টাকার বিনিময়ে সনদ নিয়ে ঝুকিপূর্ণ পেশায় চালিয়ে যাচ্ছেন মনগড়া স্বাস্থ্যসেবা। এসব বিষয়ে প্রায়সময় সচেতন মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পল্লী চিকিৎসক এর অপচিকিৎসার বিভিন্ন নমুনার প্রেসক্রিপশন নিয়ে সমালোচনা করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী বাজারের পল্লী চিকিৎসক জে.কে শর্মা নামের এক ব্যক্তির একটি প্রেসক্রিপশন নিয়ে একটি পোস্ট করেন তাসনিম জাহান জেরিন নামের একজন। উক্ত প্রেসক্রিপশন এ রোগীর বয়স উল্লেখ থাকলে নেই শারীরিক ওজন। অথচ ডোজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়স ও ওজন গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য একটি বিষয় এমন তথ্য দেন অভিজ্ঞ মহল। এছাড়া ওই প্রেসক্রিপশন এ নেই রোগের বিবরণ, দেওয়া হয়েছে একাধিক এন্টিবায়োটিক। এ বিষয়ে জানতে পল্লী চিকিৎসক জে.কে শর্ম্মা’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- প্রেসক্রিপশন এ রোগের বিবরণ না লিখে’ই তিনি চিকিৎসা সেবা দেন, একজন পল্লী চিকিৎসক হয়ে একাধিক এন্টিবায়োটিক লিখার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।

এ ছাড়া রোগের বিবরণ না লিখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি পরে কথা বলবেন এমনটা জানান। কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় এভাবেই চলছে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা। কৌশলে ভিজিট নেন ২০০/৩০০ টাকা, এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদে বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অবগত হলে-ও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না’ এমন অভিযোগ রয়েছে। ঔষধ প্রশাসনের তদারকি না থাকায় লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীর সংখ্যা বাড়ছে সীমাহীন। এছাড়াও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার এর ক্ষেত্রে ওদের নেই কোন সাবধানতা, ঔষধ কোম্পানির সরবরাহকৃত নির্দেশিকা দেখে গ্রামের সহজসরল মানুষের মাঝে দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অপচিকিৎসার শিকার শিশু, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন দ্রুত রোগ সেরে উঠানোর জন্য। অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে রোগ ভালো হলেই খ্যাতি মেলে ভালো চিকিৎসকের।

এভাবেই অপচিকিৎসার শিকার হয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছেন আগামী প্রজন্ম। তবুও কথিত পল্লী চিকিৎসক এর কাছে কেন সেবা নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে জানা যায়-সরকারি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মানুষ ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় সচেতন মহল এ জন্য সরকারি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের দায়ী করেন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল অফিসার না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে কথিত পল্লী চিকিৎসকের অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন দীর্ঘসময়ে। জেলার অনেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই কোন মেডিকেল অফিসার, আবার কোথাও উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও নেই। মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নেই কোন চিকিৎসক।

একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা, যদিও তিনি গর্ভবতী মা-ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার কথা। এছাড়াও জনবহুল মাতারবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও নেই মেডিকেল অফিসার, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়েই চলছে যুগের পর যুগ স্বাস্থ্যসেবা। হোয়ানক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও দীর্ঘদিন মেডিকেল অফিসার নেই, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও অবসরে প্রায় ৮ মাস। বর্তমানে নেই কোন চিকিৎসক, সেবা বঞ্চিত স্থানীয়রা। এই সুযোগে সর্বত্র গড়ে উঠেছে একাধিক প্রাইভেট হাসপাতাল , চলছে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার গলাকাটা বাণিজ্য। আবার অনেক জায়গায় ল্যাব থাকলেও নেই টেকনিশিয়ান, কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় ভুয়া টেকনোলজিষ্ট দিয়ে চলছে ল্যাব’ এমন অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও নামমাত্র ধাত্রী প্রশিক্ষণ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ডেলিভারি নরমালে হবে এমন আশ্বাস দিয়ে গ্রামের সহজসরল মহিলাদের ফাঁদে ফেলেন ধাত্রীরা৷ ফলে অনেকেরই অকালমৃত্যু হচ্ছে, এ-সব ধাত্রীদের এলাকাভিত্তিক রয়েছে এজেন্ট। ওই এজেন্টরা-ই ফুসলিয়ে নিয়ে আসেন গর্ভবতী মহিলাদের। জানা যায়, চকরিয়ার বদরখালী বাজার কেন্দ্রিক কথিত ধাত্রীদের হাতে বেশ কিছু গর্ভবতী/ নবজাতকের অপমৃত্যু হয়েছে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিরবতায় বাড়ছে ডেলিভারিতে অকালমৃত্যু ‘এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। এ ধরনের মৃত্যুতে স্বাস্থ্য বিভাগের নিরবতায় সর্বশেষ বদরখালী বাজারের ধাত্রী উম্মে হাবিবা’র হাতে মহেশখালীর এক গর্ভবতীর মৃত্যু হলে এনজিও সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে তদন্ত করেন ডাঃ শোভন দত্ত’ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চকরিয়া।

তবে বরাবরের মতোই পার পেয়ে যাচ্ছেন ধাত্রী উম্মে হাবিবা৷ এছাড়াও হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক হোসনে আরা বেগম এর অপচিকিৎসা নিয়ে ইতিপূর্বে তার চেম্বার সীলগালা করেছিলো। তবে কিছুদিন পর আবার চালু করা হয়। কর্তৃপক্ষের দায়সারা ভাব বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গ্রামাঞ্চলের অপচিকিৎসা। হোসনে আরা বেগম এর অপচিকিৎসা নিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হলে সহকারী জজ আদালত চকরিয়া স্ব প্রনোদিত হয়ে মামলা আনয়ন করেন। এছাড়াও পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে একমাত্র বার বাঁকিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার ছিলেন,তিনিও ইতোমধ্যে আরএমও হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ কর্মরত। তবে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ছাড়া অবশিষ্ট ইউনিয়নে নেই কোন মেডিকেল অফিসার কিংবা উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ।

যার দরুণ অসুস্থতায় শরণাপন্ন হতে হয় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে। এই সুযোগে বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার। জানা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়ন হতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেকেই রোগীর ভিড়ে সময়ের অভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেক অসহায় মানুষ প্রাইভেট চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা যায়। এ অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষায় রোগীর গলাকাটা বাণিজ্য চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুজিবুর রহমান জানান – সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন অনেকেই।

এ-ই সুবাদে পাড়া-মহল্লায় অহরহ ফার্মেসী গড়ে উঠেছে যাদের হাতে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন’এমনটাও জানান তিনি। মহেশখালীতে বেশকিছু ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার / উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার না থাকায় মানুষ বাড়ছে অপচিকিৎসা স্থানীয়দের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহফুজুল হক জানান- উত্তর মহেশখালীর বেশকিছু ইউনিয়নে মেডিকেল অফিসার না থাকায় মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায় ২০ শয্যার একটি হাসপাতালের প্রস্তাবনা তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরণ করেছিলেন। বর্তমানে হোয়ানক, শাপলাপুর, মাতারবাড়ী এবং ধলঘাটা ইউনিয়নে মেডিকেল অফিসার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান -আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক দিতে হবে পরে ইউনিয়ন পর্যায়ে।

দীর্ঘদিন যাবৎ উত্তর মহেশখালীর মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হয়ে আসছে তবুও তার এমন মনোভাবে হতাশা উত্তর জনপদে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে মেডিকেল অফিসার / উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দেওয়ার দাবী উঠেছে। এছাড়াও যত্রতত্র গড়ে উঠা নামসর্বস্ব প্যাথলজি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কাগজে কলমে প্রশিক্ষণ বিহীন ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের সনদ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের।

19 Views

আরও পড়ুন

চলে গেলেন কবি মার্জেনা চৌধুরী

হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আমাদের আমানত, তা‌দের রক্ষা কর‌তে হ‌বে- মির্জা ফখরুল

গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে অপচিকিৎসা, দায়ী কে?

মানবতার দেয়াল এখন মৌলভীবাজারে

গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধা শহীদ আবু সাঈদ

ইসলামপুরে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত 

জামালপুরে আদম ব্যবসায়ী হায়দার খাঁ’র শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

মিয়ানমার লালদ্বীপ থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে দুটি গুলি এসে পড়লো

ড্রপ এ তামাক বিরোধী ক্যাম্পেইনে তরুণ প্রতিনিধিদের অ্যাডভোকেসি বিষয়ক ২য় প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বশেমুরবিপ্রবি তরুণ লেখক ফোরামের নেতৃত্বে জুবায়েদ-মীম

ড.রেজাউল কবির লোহাগাড়া বার আউলিয়া কলেজের সভাপতি মনোনীত

ঘুমধুমে কাঠ বোঝাই টলি উল্টে নিহত এক, আহত ২ !!