ভারতে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতায় সীমান্ত সিলগালা করেছে সরকার। পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় আটকে পড়াদের দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারের করোনা নেগেটিভের সনদ অথবা ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এতে হিলি স্থলবন্দরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আতংকে রয়েছে বন্দরের ব্যবসায়ী ও জনগন।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে দীর্ঘ ১৪ মাস থেকে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকার পর ওপারে আটকে থাকা বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীদের ফেরত দেওয়ার জন্য সরকার গত ১৯ মে থেকে হিলি বন্দরে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার শুরু করে দেন। সরকারী সকল নিয়মনিতি মেনে করোনা নেগেটিভ সাটিফিকেট দেখার পর আটকে পরা পাসপোট যাত্রীদের প্রবেশ করানো হচ্ছে এরপরেও এপারে ড্রপ টেস্টে অনেকের আবার নেগেটিভ রিপোর্ট ধরা পড়ছে। কিন্তু হিলি বন্দর দিয়ে যে সকল পন্যবাহী ট্রাক নিয়ে চালক ও হেলপাররা দেশেম প্রবেশষ করছেন তাদের তেমন কোন টেষ্ট করানো হচ্ছেনা । তারা দেশের অভ্যন্তরে পানামা পোর্টে প্রবেশ করে দেশের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সাথে ঘোড়া ফেরা ও মেলামেশা করছে। যে কোন সময় ভারতীয় চালক ও হেলপারের মাধ্যমে করোনা রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন অবস্থায় গত সোমবার দিনাজপুরের হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন করোনার ভয়াবহতার প্রতিরোধে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ তথা আমদানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। পরে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের হস্তক্ষেপে ৩১ মে থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড, করোনা নেগেটিভের সনদ প্রদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রবেশের সময় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মালামাল নিয়ে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
করোনা টিকা গ্রহণের কার্ড বা করোনা নেগেটিভের সনদ ছাড়া বন্দরগুলো দিয়ে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের অবাধ প্রবেশের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সীমান্তের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ রুপ নেয়ার পর বাংলাদেশ সরকার জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্ত সিলগালাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। চিকিৎসা করতে যেয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দূতাবাসের ছাড়পত্র নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ফেরা বাংলাদেশিদের সুস্থ ও অসুস্থদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
স্থানীয় জনগন ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত ফেরত অনেকের করোনা নেগেটিভের সনদ থাকার পরও করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির তেমন কোনটাই অনুসরণ করা হচ্ছে না। তারা মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অবাধে। তাদের করোনা নেগেটিভের সনদপত্র বা ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড দেখাতে হচ্ছে না। এমনকি তাদের বাংলাদেশে প্রবেশকালে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের মালামাল খালাস করা পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন অবস্থান করছেন।
হাকিমপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন জানান, ৩১ মে থেকে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে ভারতীয় ট্রাক চালকরা পণ্য নিয়ে দেশে প্রবেশ করবে এমন আশ্বাসে ২ ঘন্টা বন্ধের পর দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুদেশর মাঝে আমদানি রফতানি শুরু হয়। ভারতের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেয়ার পর থেকেই হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন সীমান্তবাসীদের সুরক্ষার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চালিয়ে যাচ্ছেন।
পৌর মেয়র জামিল হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত ভারতে করোনার প্রভাব বাড়ছে যা বেশ আতঙ্কের। তাই ভারতীয় ট্রাকের চালক ও হেলপারদের করোনা টিকার কার্ড বা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে প্রবেশ করতে একমাস পূর্বে পত্র দেয়া হলেও এখন অবধি তা করা হয়নি। তাই বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ৩১ মে থেকে চালকদের করোনা টিকার কার্ড বা নেগেটিভ সনদ বা দেশে প্রবেশের সময় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে বলে সিআন্ডএফ এজেন্ট আসোসিয়েশন জানিয়েছেন। এরপরেও না হলে আবারো বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ করে দেয়া হবে।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার তৌহিদ আল হাসান জানান,গেলো কয়েক দিনে হাকিমপুর উপজেলায় ভারত ফেরত একজন পুরুষ যাত্রীসহ ৬ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে বন্দর সংশ্লিষ্ট আছেন একজন এবং বাঁকিরা স্থানীয় বাসিন্দা।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার নুর এ আলম জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসক সহ বন্দর সংশ্লিষ্ঠ উদ্ধত্বন কর্তৃপক্ষ কে জানানো হয়েছে, কিভাবে এই সমস্যাটি নিরসন করে আমদানি রফতানি অব্যাহত রাখা যায় সে ব্যাপারে রাতে জুম মিটিং হবে। ।