নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া:
৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২১ দিনের ইলিশের মূল প্রজনন মৌসুমে সাগরে মাছ ধরার উপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কুতুবদিয়ার স্থানীয় বাজারগুলোতে সামূদ্রিক মাছের আকাল পড়েছে। শুধু ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোন ধরনের সামূদ্রিক মাছই ধরতে পারছে না জেলেরা। এমনকি কুতুবদিয়া চ্যানেলে সামূদ্রিক ছোট মাছ ধারার জালগুলোও বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জব্দ করে ধ্বংস করেছে স্থানীয় মৎস্য দপ্তর। স্থানীয় জেলেরা সাগরে থেকে মাছ শিকার করতে না পারার ফলে এর প্রভাব পড়েছে কুতুবদিয়ার স্থানীয় বাজারগুলোতে। শুটকিসহ পুকুর ও প্রজেক্টের মাছের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ায় দাম বেড়েছে চিংড়ি,পাঙ্গাস, তেলাপিয়াসহ কার্প জাতীয় মাছের। মাছ ব্যবসায়ীরা দ্বীপের বাহির থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এনে চড়া দামে বিক্রি করছেন কুতুবদিয়ায়।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) স্থানীয় ধুরুং বাজার এবং গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) স্থানীয় বড়ঘোপ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে সামূদ্রিক কোন মাছ নেই। ব্যবসায়ীরা বদরখালী, পেকুয়া,বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এনে প্রতি কেজি সর্বনি¤œ ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চড়া দামে বিক্রি করছেন।
বাজারে আসা আবদুল্লাহ নামের এক ক্রেতা জানান, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চাহিদার তুলনায় মাছ কম এনে চড়া দামে বিক্রি করছে। মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০ টাকার উপরে।
এদিকে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই বাজারে । কুতুবদিয়ায় এখনো কমেনি পেঁয়াজের দামও। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পরও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাজারে মাছ ও সবজির যোগান কম তাই দাম একটু বেশী। এছাড়া পরিবহণ খরচও আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানান তারা।
ক্রেতাসাধরণ বলছেন, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে একচেটিয়া দাম নিচ্ছে। দ্বীপের বাহিরে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য-সামগ্রী ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষতার মধ্যে থাকলেও এখানে তার বিপরীত। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে দ্বীপের সাধারণ জনগণ।
এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া আদালতের কৌশলী এড. আইয়ুব হোছাইন বলেন, সাগরে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং লবণের দাম কমে যাওয়ায় অবহেলিত এই দ্বীপের অধিকাংশ জনসাধারণ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। তাই স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রশাসনের নজরদারী কামনা করেন তিনি।
এদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল-মাহমুদ বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৯ অক্টোবর ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে স্থানীয় জেলেদের সাগরে ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখতে উপকূলে প্রচারণাসহ জেলেদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি এবং যারা আইন মানছে না তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল হক মীর স্থানীয় বাজারগুলোতে কয়েকবার অভিযান চালালোর পর বাজার দাম কিছুদিন ঠিক থাকলেও বর্তমানে আবার পূর্বের দামে দ্রব্য-সামগ্রী বিক্রি করছে বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের।