নিজস্ব প্রতিবেদক।
দীর্ঘদিন মহেশখালীতে পরিবহন সেক্টরে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়ে দৈনিক কক্সবাজার বার্তা, নিউজ ভিশন সহ বিভিন গনমাধ্যনে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে গতকাল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ইউএনও মহেশখালী।
এতে উপস্থিত ছিলেন মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার, হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর কাসেম চৌধুরী ও দৈনিক কক্সবাজার বার্তা’র নিজস্ব প্রতিবেদক শহীদুল ইসলাম কাজল।
এ-সময় সিএনজি মালিক ও শ্রমিক সমিতির পক্ষে আলোচনার আতা উল্লাহ বোখারী গ্রুপের লাইনম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক , হাবিব উল্লাহ গ্রুপের লাইনম্যান বাবুল, মাতারবাড়ীর লাইনম্যান আব্দুল মজিদ ও চালক সমিতির মনির ড্রাইভার উপস্থিত ছিলেন। মাতাররাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে যৌক্তিক আলোচনায় বলেন -যেখানে পার্শ্ববর্তী উপজেলা চকরিয়াতে ১৮ কিলোমিটার সড়কে ভাড়া নিচ্ছে ৫০ টাকা। অথচ মাতারবাড়ী -বদরখালী ৬ কিলোমিটার সড়কে ৫০ টাকা ভাড়া কোন যুক্তিতে নিচ্ছে’এমন প্রশ্ন রাখেন। এ ছাড়াও গাড়ি চালকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন স্টেশনে কল্যাণের নামে যে টাকা নিয়ে আত্মসাত করা হচ্ছে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও মহেশখালী কে অনুরোধ জানান। সিএনজি চালক এবং লাইনম্যানরা সড়কের বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। এতে সিএনজি মালিক সমিতির পক্ষে আলোচনায় লাইনম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক’ বর্তমানে যে হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে তার স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দেন। বিশেষ করে মহেশখালী -বদরখালী সংযোগ সেতু তে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন বলে ইউএনও মহেশখালী কে অবগত করেন।
এ ছাড়াও ফিলিং স্টেশন গুলোতেও এলএনজি গ্যাসে কৌশলে পরিমাণে কম দেয় এমন অভিযোগ তুলেন। ব্রীজের অতিরিক্ত টোল, গ্যাস কম দেওয়া ও কালারমারছড়া, হোয়ানকে অন্যায়ভাবে লাইন খরচের নামে চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভাড়া কমানো যাচ্ছে না বলে যুক্তি দেখান।
তবে সরজমিন গোরকঘাটায় অবস্থিত বিএম অটো গ্যাস এর ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় – গাড়িতে গ্যাস সরবরাহে পরিমাণ মিটারে ঠিকই আছে। তবে অনেক ড্রাইভার জানান তারা অন্যান্য এলাকা হতে একই পরিমাণ গ্যাসে যত কিলোমিটার গাড়ি চলে গোরকঘাটা থেকে নিলে তত কিলোমিটার যায় না। এতেই সন্দেহ কৌশলে গ্যাস কম দিয়ে যাচ্ছেন ফিলিং স্টেশন বি এম অটো গ্যাস। বি এম অটো গ্যাস কোম্পানির ম্যানেজার এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তবে মহেশখালী টু বদরখালী সংযোগ ব্রীজে অতিরিক্ত টোল আদায়ের সত্যতা পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে পারাপারে সিএনজি ও টমটম গাড়ি থেকে ২০ টাকা টোল আদায় করলেও প্রায় ৭/৮ মাস থেকে ৩০ টাকা করে নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রীজের টোল আদায়ে সংশ্লিষ্টরা জানান- বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ইজারা মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন। অভিযোগ উঠেছে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) অবগত হওয়া সত্বেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যার দরুণ ব্রীজের ১০ টাকা টোল বৃদ্ধিকে পুঁজি করে যাত্রী প্রতি ৫/১০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করে দেয়।
উপস্থিত উভয়ের আলোচনার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে আপাততঃ বদরখালী – মাতারবাড়ী সংযোগ সড়কের ভাড়া ৫০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা নির্ধাণ করেন ইউএনও মীকি মারমা। সিএনজি মালিক ও চালক সমিতির সাথে পরবর্তীতে বৈঠক করে বদরখালী -গোরকঘাটা সড়কের ভাড়া পুননির্ধারণ করবেন বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়াও অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের কে অবগত করে দ্রুত নির্ধারিত টোল আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহে আরেফিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান -সরকারি নির্ধারিত টোল এর বাইরে টোল আদায়ের সুযোগ নেই। যদি অতিরিক্ত টোল আদায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও মহেশখালী’ মীকি মারমা জানান-নির্ধারিত হারে টোল আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে, এছাড়াও টোল আদায়ের তালিকা দৃশ্যমান স্থানে টাঙানোর কথাও বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবুও আদৌ পরিবহন সিন্ডিকেটের নৈরাজ্যের শেষ হবে কী? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলে।