ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বিএনপি সন্দেহ করছে–ড. হুমায়ুন কবির

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

—–

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার,বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল, সংবিধান সংস্কার ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে নিউজ ভিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. জামিন মিয়া।

নিউজ ভিশন: ডোনাল্ট ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সারাবিশ্ব তথা বাংলাদেশের উপর তা কি প্রভাব পড়তে পারে?

ড.হুমায়ুন কবির: নব্বই দশকের পর দ্বিমেরু বিশ্ব থেকে এক মেরু বিশ্ব হলে সেটার নেতৃত্ব আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।সুতরাং সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তি ক্ষমতায় আসায় প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।তিনি আগেও প্রেসিডেন্ট ছিলেন,পূর্ব কর্মকান্ড দেখেই মার্কিনিরা ভোট দিয়ে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আনলেন।আর দেশটিতে ক্ষমতার পালাবদল বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কেননা অনেকেই বলে থাকেন,২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা প্রভাব ছিলো।দেশটি আন্দোলনে অর্থায়ন করেছিলো বলেও একটা কথা প্রচলিত আছে।ডেমোক্র্যাটদের সাথে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভালো সম্পর্ক ছিলো।গত কয়েকটি নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন দিয়ে এসেছেন। সুতরাং ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তেই পারে—সেটা বলাই যায়।

নিউজ ভিশন: অন্তর্বর্তী সরকার ১০০ দিন পার করলো।এই পর্যন্ত নতুন সরকারের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড গুলোকে বিশেষ করে সংস্কার কমিশন গুলোকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড.হুমায়ুন কবির: ইউনুস সরকারের প্রতি আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিলো।তবে তাদের কর্মকান্ড দেখে আমার মনে হচ্ছে,পূর্ব প্রত্যাশা দূরে থাক,ন্যূনতম প্রত্যাশাও যদি পূরণ করে তাহলে আমরা সরকারের প্রতি খুশি থাকবো।গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য পরিবর্তন দরকার। যেমন,নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালীকরণ,আইন-বিধি সংস্কার,বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ করা এবং প্রশাসন ব্যবস্থা জনকল্যাণমুখী করা।দেখুন,রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে রাজনৈতিক সরকার।অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক অনেক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে যেটা কাম্য নয়। সাধারণ মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা ছিলো দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি। কিন্তু সেটাতে আমরা কোনো অগ্রগতি দেখছি না।এই সরকার মোট দশটা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।আপনারা জানেন, শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়ে সরকার পরিবর্তন করলো। কিন্তু শিক্ষার্থী ও শিক্ষার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে সংস্কার সেটার জন্য কোন কমিশন হলো না। শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো গেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
আরেকটি দুঃখের বিষয় হলো,বর্তমানে যেসব উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশেরই দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

নিউজ ভিশন: দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখছে। এটি কি “তাড়াহুড়ো ” নাকি “যুক্তি সংগত অবস্থান ” বলে মনে করছেন?

ড.হুমায়ুন কবির:বিএনপি রাজনৈতিক দল,তারা দ্রুত নির্বাচন চাইতেই পারে।নির্বাচনী সংস্কারের জন্য দলটি সরকারকে যৌক্তিক সময় দেবে সেটাও তারা বলছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার রোডম্যাপ না দেওয়ায় সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সন্দেহ হওয়ার আরও কারণ আছে।ড. ইউনুস ২০০৭ সালে আর্মি সমর্থিত সরকারে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। আর্মি তাকে দু বছরের জন্য ক্ষমতায় রাখবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলো।এটা ওনার কাছে অল্প সময় মনে হওয়ায় সে সময় ক্ষমতা নিতে তিনি রাজি হননি। তিনি মনে করেছিলেন রাষ্ট্র সংস্কারে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। এইবার তিনি সেই সুযোগ পেয়েছেন।এখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি হয়তো মনে করছেন দীর্ঘ সময় নিয়ে সংস্কার করবেন।এ থেকেই হয়তো বিএনপির মনে এই সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। আপনি দেখেছেন, সংবিধান সংস্কারে একজন বিদেশি নাগরিককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।এদিকে ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।অথচ যারা এই সংবিধান রচনা করেছিলেন তারা এই দেশের সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত ছিলেন, যদিও তারা যৌথ পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন যারা সংবিধান পুনরায় লিখতে চান তারা কাদের ভোটে নির্বাচিত? সংবিধান সংস্কার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। এটি না হলে সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। অভ্যুত্থানকারীগণ বলছেন জনগণ পুরাতন ব্যবস্থার বিলোপ চান। এটি যদি সত্যিকারের জনগণের চাওয়া হয় তাহলে আপনারা রাজনৈতিক দল গঠন করে জনগণের মেন্ডেট নিয়ে সেই চাওয়া পূরণ করুন, তাহলে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।

নিউজ ভিশন:প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার দাবি উঠেছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

ড.হুমায়ুন কবির: ১৯৭২ সালের বাস্তবতা আর ২০২৪ সালের বাস্তবতা এক নয়।বাহাত্তর সালের বাস্তবতায় দেশগঠনের জন্য এরকম একটা সংবিধানের দরকার ছিলো।৫৩ বছরে “ট্রয়াল এন্ড এররের” মধ্যে দিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিলোপ করতে হলে সব জায়গায় ভারসাম্য আনা দরকার। তা না হলে এক ব্যক্তি যদি সকল ক্ষমতা পেয়ে যায় তাহলে স্বৈরাচার হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে দেখুন।সেখানে এমন সিস্টেম রয়েছে যে চাইলেই কেউ স্বৈরাচার হতে পারে না।আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মধ্যে ভারসাম্য আনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সিস্টেমটাকে আগে ঠিক করা।

নিউজ ভিশন:সংসদকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করা এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় তা কতটুকু যৌক্তিক বলে মনে করেন?

ড.হুমায়ুন কবির:আমাদের দেশের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন একটা উপযোগী ব্যবস্থা হতে পারে।৩০০ আসনে যদি নাও হয় অন্তত ২০০ আসনে দেয়া যায়।পরীক্ষামূলকভাবে হলেও দুই বা তিনটি সংসদ নির্বাচন এই প্রক্রিয়ায় করা যেতে পারে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালু করা উচিত। এই ব্যবস্থা চালু হলে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী বা রাষ্ট্রচিন্তকগনকে সরকার পরিচালনার কাজে লাগানো যাবে।আপনি বিগত পাঁচটা জাতীয় নির্বাচন বিশ্লেষণ করে দেখবেন ৭০% বা ৮০% ঠিকাদার ও সুবিধাবাদী ব্যবসায়িক সম্প্রদায় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সত্যিকারভাবে যদি সকল মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র আমরা পরিচালনা করতে চাই তাহলে সব শ্রেণি থেকে গ্রহণযোগ্য মানুষদের সংসদে আসার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের সংসদে কেন কৃষকের বা শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব থাকবে না? আরেকটি বিষয়, রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার জন্য সংসদ সদস্যদেরকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা থেকে দূরে রাখতে হবে। তাদের কাজ হবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা পালন।

নিউজ ভিশন:আপনাকে ধন্যবাদ

ড.হুমায়ুন কবির:আপনাকেও ধন্যবাদ

310 Views

আরও পড়ুন

শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার

সাংবাদিক হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় লোহাগাড়ায় সাংবাদিক সমাজের মানববন্ধন

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শান্তিগঞ্জে সেমিনার

শান্তিগঞ্জে জনসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ 

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে মুক্ত হতে পারেনি–অধ্যাপক মুজিব

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের মতবিনিময় সভায় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান 

চট্টগ্রামে জামায়াত নেতার পায়ের রগ কেটে হাত ভেঙে দিয়েছে চাঁদাবাজরা

ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রদল সহ-সভাপতি রাসেল আকন আটক

শান্তিগঞ্জে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষক দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠনের অভিযোগ 

সংবর্ধিত হলেন সেরা কনটেন্ট নির্মাতা শিক্ষক ফারুক ইসলাম

নাগেশ্বরীতে কেন্দ্রীয় ড্যাব নেতার ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

বুটেক্সে নতুন বিভাগ চালু- সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ