———-+
মানব পাচার নি:সন্দেহে মানবাধিকার বিরোধী একটি জঘন্য অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটি আলোচিত সমস্যা। মানব পাচারকে প্রাচীন দাস প্রথার আধুনিক রুপ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি জাতীয় সমস্যা। দেশে এই ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও মানব পাচারের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি লিবিয়াতে ঘটে যাওয়া মানব পাচারকারী চক্রের হাতে ২৬ বাংলাদেশী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর এই ইস্যুটি সামনে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু নারী, পুরুষ, শিশু বিদেশে পাচার হচ্ছে। তবে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরেও পাচারের অনেক ঘটনা ঘটছে। মানব পাচারকারী চক্রের মিথ্যে প্রলোভনের ফাদে পড়ে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ বিদেশে পাচার হচ্ছে। দরিদ্রতা, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা ইত্যাদির কারনে স্বল্প টাকায় কর্মসংস্থানসহ বিভিন্নভাবে লোভে পড়ে পাচার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। বিনিময়ে দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অভিবাসনের নামে অবৈধ পথে বেশিরভাগ সময় সমুদ্র পথে থাইল্যান্ড, মালেশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায় মানব পাচারকারী চক্র। কেউ কেউ সমুদ্রেই প্রান হারায়। বেচে গেলেও তারা অনেকসময় প্রতারণার শিকার হয় আবার কখনো ভাগ্যে জুটে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজ। নারী ও শিশুদের পতিতাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফি, অঙ্গহানী করে ভিক্ষাবৃত্তি ও গৃহস্থালির বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা হয়। আবার পুরুষদের অমানবিক ও ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য করা যায়। যার ফলশ্রুতিতে নির্মমভাবে প্রান হারাচ্ছে অনেকেই।
অবৈধ অভিবাসনের নামে মানব পাচার অচিরেই বন্ধ করা প্রয়োজন৷ মানব পাচারের শিকার হচ্ছে মূলত দেশের দারিদ্র্য ও বেকার জনগোষ্ঠী। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সরকার অনুমোদিত দেশগুলোতে সরকারি সহায়তায় শ্রমিক প্রেরন করে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান সম্ভব। “মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২” ও “মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন বিধিমালা-২০১৭” এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এরকম জঘন্য অপরাধ না ঘটে৷ সরকারী ও বেসরকারিভাবে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে কম ও জীবনমুখী শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। গনসচেতনামূলক সেমিনার ও প্রচার প্রচারনা চালিয়ে দেশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা একসাথে কাজ করলে দ্রুতই মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ দমন করা সম্ভব৷
———-
সাইদুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়৷