নভেল করোনাভাইরাস। চীনে প্রথমে শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় দেশে। এতে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে, বাড়ছে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও। এ সংক্রামক ব্যধি বাংলাদেশেও ঢুকে পড়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি এই আইনের আওতায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ মার্চ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১৮ মার্চ শরীয়তপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ১৪ দিন না যেতেই বাজারে ঘোরাঘুরি করায় দুই ইতালি প্রবাসীকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
করোনার মতো সংক্রামক ব্যাধিতে আইন লঙ্ঘন করলে যে সাজা হবে তা তুলে ধরা হলো :
সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং তথ্য গোপনের অপরাধ ও দণ্ড
জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের ২৪ ধারা বলা হয়েছে :
যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
শাস্তি : তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশপালনে অসম্মতি জ্ঞাপনের অপরাধ ও দণ্ড :
অত্র আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে : যদি কোনো ব্যক্তি–
মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার উপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন অথবা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
শাস্তি : অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদানের অপরাধ ও দণ্ড :
এই আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে : যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
শাস্তি : তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
আসুন আমরা করোনার মত সংক্রামক ব্যাধিতে দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলি, সচেতন ও সতর্ক হই, নিজে সুরক্ষিত থাকি ,নিজেকে নিরাপদ রাখি, আরেকজনকে সচেতন করে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখি। সর্বোপরি দেশকে সুরক্ষা করি।