প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
রাকিব, শুক্কুর, তাকমিনা, সখী, শাহীন, রমজান এরা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু। এদের মত এখানে রয়েছে শতাধিক শিশু এদের কারো মা আছে বাবা নেই, কারো বাবা আছে মা নেই। মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত এরা। তাই বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে হয় তাদের।এসব অবহেলিত পথশিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে কাজ করে যাচ্ছে ‘আলোর আশা ফাউন্ডেশন’। আলোর আশা ফাউন্ডেশন সমাজের অসহায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহবান জানিয়ে ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে চালু করে সোহা স্কুল। শুরুর দিকে বিভিন্ন জায়গায় খোলা মাঠে বা ট্রেনের খালী বগীতে ক্লাস করানো হতো বর্তমানে পলিথিন বিছিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং এরিয়ায় ক্লাস করানো হয়। এই স্কুলে যারা পড়তে আসে তারা সকলে পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত পড়ার বিনিময়ে তাদেরকে প্রতিটি ক্লাস শেষে খাবার দেয়া হয়।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ার এলাহি ফয়সাল জানান শুরুতে এই বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল। পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলার লক্ষে আমরা প্রতিটি ক্লাসের শুরুতে বা শেষে খাবার বিতরণ করি তাছাড়া এই শিশুরা অসহায় তারা প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামী। তাদের মৌলিক অধিকার পূরণের লক্ষ্যে কাজ করছে আমাদের সংগঠন আলোর আশা ফাউন্ডেশন। তাদেরকে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা এই চারটি মৌলিক অধিকার দিচ্ছি আমরা। তাদের জন্য সপ্তাহে পাঁচদিন রবিবার থেকে বুধবার ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে পোস্তারপাড় ভাড়াকৃত বাসায় এবং শুক্রবার রেলওয়ে স্টেশনে। চট্টগ্রামে আমাদের দুটি শাখা যার বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১৯ জন তার মধ্যে ৪৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে এবং বিকেলে ৩টা হতে ৫ টা পর্যন্ত ক্লাস করে সোহা স্কুলে এবং যে কেউ চায়লে সপ্তাহে একদিন বা তার অবসর সময় অনুযায়ী পড়াতে পারেন।
সোহা স্কুল সম্পর্কে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আয়েশা তাহরীম নিতু বলেন SOHA এর অর্থ School of Humanity & Animation অর্থাৎ মানবতার স্কুল ও পূর্ণ জাগরণ। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি এই শিশুদের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে। মানবতা থেকে এখানে সকলে বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান। বাচ্চাদের সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাস এবং আমাদের রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস যা অনুসরণ করে এখানে শিক্ষকবৃন্দ পাঠদান করেন। শুরুর দিকে এই বাচ্চাদের পড়নো কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল কিছুই পারতো না আজ দুবছরে ওরা অনেক কিছুই শিখেছে। বাংলা, আরবী, গণিত ইংরেজি সহ সকল বিষয় শিখছে পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে তাদের পরিবর্তন ও উন্নতি আমাদের অনুপ্রাণিত করে সব সময়।
অন্যান্য দিনের মত আজও ক্লাস হয় চট্টগ্রামে রেলওয়ে স্টেশনে। ক্লাস শুরুর পূর্বে বাচ্চাদের খাবার বিতরণ করা হয় তারপর ক্লাস শুরু হয় পিটি করার মাধ্যমে। পিটি শেষে বাচ্চারা বলে সুশিক্ষায় সম্মান পাই ভিক্ষায় কোন সম্মান নাই, আমরা ভিক্ষা নয়, শিক্ষা চাই। এর পর ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয় দেখা যায় প্রতি একজন শিক্ষক পাঁচজন করে বাচ্চাকে পড়াচ্ছেন তারা সকলে চট্টগ্রাম বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক তৌফিক রবিন বলেন খাদ্য প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার কিন্তু সমাজের এই কম ভাগ্যবান শিশুরা এক বেলা খাবারের জন্য সারাদিন ঘুরে বেড়ায় তাই আমরা চেষ্টা করি তারা সারাদিন না ঘুরে একবেলা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করুক৷পাশাপাশি ওদের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো, বিভিন্ন দিবস উৎযাপন, এছাড়া বিভিন্ন উৎসবে বা তাদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র বিতরন সহ সকল ধরণের কার্যক্রমই ওদের নিয়ে করা হয় আমরা চাই ওদের জীবনের পরিবর্তন এবং পথশিশু হয়ে নয় তারা স্বাভাবিক শিশুদের ন্যায় বেড়ে উঠুক
প্রতিটি ক্লাসে খাবার বিতরণ ও ভাড়াকৃত বাসায় ক্লাস অত্যন্ত ব্যয় বহুল! কিভাবে এই অর্থ যোগান দেন জানতে চাইলে অর্থ সম্পাদক মোরশেদ আহমেদ শান্ত বলেন এখানে যারা সদস্য আছেন তারা প্রত্যেকে দৈনিক হাত খরচের কিছু অর্থ একটি মাটির ব্যাংকে জমা করে এবং মাস শেষে তা সংগঠনের ফান্ডে জমা করে এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কয়েকজন শুভাকাঙ্খী সহযোগীতা করেন যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য তবুও আমরা চেষ্টা করি এই শিশুদের স্বপ্ন পূরণ করার। সমাজের বিত্তবান ও মহৎ হৃদয়ের মানুষরা যদি আমাদের পাশে এগিয়ে আসেন তাহলে এই শিশুদের সকল মৌলিক অধিকার নিয়মিত পূরণ করা সম্ভব।