মোঃ আক্তারুজ্জামান, পলাশ(নরসিংদী) প্রতিনিধি :
নরসিংদীর পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারহানা আফসানা চৌধুরীর প্রচেষ্টায় বদলে গেছে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র। ইতোমধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছে প্রাইমারীর শিক্ষার্থীরা। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি রোধ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত এ পরিবর্তন সাধন ইতিমধ্যে সব মহলের নজর কেড়েছেন। এ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশে যোগদানের পর থেকেই এলাকার সুধীজন, অভিভাবক, শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে গ্রহন করেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
এর অংশ হিসেবে শিক্ষকদের মাসিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহন নিশ্চিত করে তাদের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে তুলেছেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতেও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি উপজেলায় বিভিন্ন সাব-ক্লাস্টারে আয়োজিত পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষকদের পারদর্শিতা ও সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মনিটরিং শুরু করেন।
এছাড়া তিনি আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিতির হার পর্যবেক্ষণ ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে যুগপযোগী পাঠদানের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
গত জুলাই-আগস্ট মাসে পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে পলাশের বিভিন্ন প্রাইমারী বিদ্যালয় গুলো পরিদর্শন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধকল্পে বিভিন্ন ইউনিয়নে উঠান বৈঠকের কার্যক্রম শুরু করেন।
এছাড়া নির্বাহী অফিসার ফারহানা আফসানা চৌধুরীর ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিভিন্ন স্কুলের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ, শিক্ষা উপকরণ, টিফিন বক্স বিতরণ করেন। ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি ও শিক্ষক – শিক্ষিকাদের মাঝে আইসিটির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি করেছেন কর্মশালার ব্যবস্থা।
পলাশ উপজেলায় প্রতি মাসে তিনি একদিন আয়োজন করেছেন ‘মিট দ্যা ইউএনও’ প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পান। এ আয়োজনে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়।
এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পঠন ও লিখন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সুন্দর হাতের লেখার জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তিনি দেয়ালিকা উদ্বোধন করেন। এবং ক্ষুদে ডাক্তারদের কার্যক্রম পরিদর্শন করে একাধিক স্কুলে তিনি বৃক্ষ রোপন করেন।
পলাশ উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. সুলতান উদ্দীন বলেন, আমাদের পলাশের ইউএনও শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় নয়, ব্যক্তিগত অর্থায়নেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পোশাক বিতরণ করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষে বিদ্যালয়ে পার্ক স্থাপন, ফুটবল, ক্যারাম বোর্ডসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, ক্লাস্টার অনুযায়ী বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেছেন।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা আফসানা চৌধুরী পিএএ বলেন, একটি জাতিকে উন্নত করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, তাই শিক্ষার উপর বিশেষ নজর দিয়েছি আমি। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ শিক্ষার যে বুনিয়াদ সেটি শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে, যদি সফলভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার চেতনা এবং শিক্ষার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় তাহলেই সাধিত হবে প্রভ’ত উন্নয়ন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন উন্নয়নের যে মহাসড়কে আজ বাংলাদেশ ধাবমান সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অত্যন্ত জরুরী।