——————–
আসলে আজ আমাদের চিন্তা- চেতনার বড্ড অভাব। আমরা নিজেরা স্বার্থচিন্তায় অন্ধ হয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বোধটুকু দিন দিন নিজের ভেতর থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছি। আর ধীরে-ধীরে এভাবে কেবল এবং কেবল মাত্র অতিরিক্ত স্বার্থ কেন্দ্রিক জড়তার কারণে আমরা মানুষ থেকে হয়ে গেলাম অমানুষ। একটু কড়া নজর দিয়ে আশে-পাশে খেয়াল করলে দেখতে পাবো হরেক রকমের সহিংসতা, অশান্তি, কোন্দল ইত্যাদি যেন নিত্য দিনকার ঘটনা। ঘটনাগুলোর আরো একটু গভীরে গেলে দেখা যায় স্বার্থকেন্দ্রিক কিছু ছোট-খাটো ঝামেলার কারণে আমাদের সমাজের এই বেহাল দশা। বলতে গেলে আমরা এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছে গেছি যে, কেউ কাউকে কোন রকম ছাড় নয়। বরঞ্চ মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি,” শুধু ভোগ আর ভোগ! এবং ভোগের মধ্যে শান্তি ।” অথচ গুরুজন বলে গেছেন, “ভোগে ভোগ নয়, ত্যাগে প্রকৃত সুখ।” তারপর সমাজ কেন্দ্রিক চিন্তা থেকে কেউ যদি এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের কথা বলে তাহলে দেখা যায়, একদল শোষক শ্রেণীর লোক তার বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগে যায় । শোষক ভাবে, সমাজের মানুষগুলো সচেতন হলে আমি আর তাদের লুটতে পারব না। আর আমার স্বার্থ সিদ্ধি কিছুই হবে না। সুতরাং এদেরকে দমিয়ে রাখা দরকার। আমার মনে হয় সমাজ পিছিয়ে যাওয়ার বেশ কটি কারণের মধ্যে এই স্বার্থান্ধ মানুষগুলোর ‘মোহ’ অন্যতম একটি কারণ। কারণ স্বার্থের জন্য অন্ধ না হয়ে বরং অসহায়, হত-দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষের জন্য শোষক শ্রেণীর সমাজপতিরা যদি কাজ করতো তা হলে দৃশ্যপট আমরা একেবারে অন্য রকম দেখতে পেতাম ।
তারপর যদি আরেকটু সামনে যায় তাহলে দেখবো, একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের সাথে পাল্লা দিচ্ছেন ! কিসের পাল্লা? একটু আগে পদন্নোতি পাওয়ার পাল্লা। একটু প্রাইভেটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর পাল্লা । আবার, একজন চাকরিজীবী তার অপর সহকর্মীকে মোটেও সহ্য করতে পারে না, কারণ একটাই। প্রতিহিংসা ! সম্প্রতি এমন একটা ঘটনা আমার সাথে ও ঘটেছে। আমার একজন পাঠক তথাকথিত ছড়াকারও বটে, প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে খামোকা অর্থহীন বাজে মন্তব্য করে বসেছিলেন। বলতে গেলে স্বার্থ কেন্দ্রিক চিন্তা থেকে এই ভয়াবহ প্রতিহিংসা মানব মনে জায়গা করে নেয়। আর এই প্রতিহিংসার কারণে সৃষ্টি হয় নানান রকমের বিভেদ, সমস্যা আর অশান্তি। আমরা হয়তো ভুলে যায়, এই পৃথিবীতে কিছু লোক জন্ম গ্রহণ করে শুধু উড়ার জন্য, এদেরকে চাইলে দমিয়ে রাখা যায় না। সুতরাং অন্য জনের উন্নতি দেখলে হিংসা পরায়ণ না হয়ে বরঞ্চ আমাদের উচিৎ কিভাবে সামনের কঠিন পথ পাড়ি দিলে খ্যাতির বুকে ঠাঁই পাওয়া যাবে, সেদিকে গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া। অন্যথায় আমাদের দ্বারা ভাল কিছু করা আকাশকুসুম স্বপ্ন বৈ কিছু না। আপত দৃষ্টিতে একজন স্বার্থান্ধ ব্যক্তি এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ লোককে বাহ্যিকভাবে দেখলে সুস্থিত মনে হলেও বাস্তবতার সাথে তার সম্পর্ক ঢিল ছোড়া দূরত্বে। কারণ স্বার্থপর মানুষগুলো স্বার্থের জন্য উন্মাদের মতো এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে আর প্রতিহিংসা পরায়ণ লোক অন্যের উন্নতি সহ্য করতে না পেরে যন্ত্রণায় সারাক্ষণ ছটফট করতে থাকে। সবদিক বিবেচনায়, স্বার্থপর ব্যক্তি এবং হিংসা পরায়ণ লোক সমাজ,দশ-দেশ, সবার বোঝা ছাড়া আর কিছু না। অতএব, এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার, না হলে ভবিষ্যৎ হবে একেবারে অন্ধকার।
লেখক :
তানভীর মোর্শেদ তামীম ।