ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ

শিশু হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করুন

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৭ অক্টোবর ২০১৯, ২:২২ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

————————
শিশুদের প্রতি শারীরিক ও যৌন নির্যাতন এবং শিশু হত্যার ঘটনা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। কোন ভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মানুষ নিজের সন্তানকে নৃশংস ভাবে হত্যা করছে, সৎবারার দ্বারা কন্যা শিশুটি যৌন নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছে আবার মায়ের পরকীয়ার পথে বাধা হওয়া শিশুকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হচ্ছে। শিশু গৃহকর্মীকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাসায় আটকে রেখে গুরুতর জখম বা যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। ইদানিং গণমাধ্যমগুলোতে এমন খবরই আসছে। একটির পর আরেকটি।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০.৮ শতাংশ হলো শিশু। যাদের বয়স শূন্য থেকে চৌদ্দ বছরের মধ্যে। এ বিপুল সংখ্যক শিশুরাই আমাদের দেশের সম্পদ। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। এরাই আগামী দিনে জাতির কর্ণধার। শিশুরা নিষ্পাপ, ফুলের মতো। তাদের কারো সাথে কোন প্রকার বিভেদ ও স্বার্থের দ্বন্ধ নেই। সুতরাং তাদের তো অন্যের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি খবুই ভয়াবহ।

শিশুরা ক্রমাগতভাবে পরিচিত ও অপরিচিত জনের হাতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিশুরা অধিকাশ সময় তাদের পরিবারের সদস্য কিংবা খুব বিশ্বস্ত কোন মানুষের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়। যেমন- সৎবাবা, চাচা, গৃহশিক্ষক অথবা প্রতিবেশীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়। কখনোবা প্রবাসীর স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের বলি হয় তাদের নিষ্পাপ সন্তান। সম্প্রতি সুনামগঞ্জে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো জন্য একটি শিশুকে তার বাবা নিজ হাতে হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটির শরীরের অঙ্গগুলো পাশবিক কায়দায় কেটে ফেলে। এখানেই শেষ নয়, হত্যার পর শিশুটির পেটে দুটি ছুরি বিদ্ধ করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। এধরণের একটি লোমহর্ষক, হৃদয়বিদারক, পাশবিক হত্যাকাণ্ডও কি আমাদের বিবেককে নাড়া দেয় না?

যারা শিশুদের উপর এ ধরণের নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের মাঝে একটা ধারণা হয়ে গেছে যে তাদের এই অপরাধের কোন বিচার হবে না। কেননা বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনের মামলায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তেমন নজির নেই। আর এ ধারণাই অপরাধীদেরকে শিশুদের উপর পাশবিক আচরণের অভয় দেয়। এপর্যন্ত শিশু নির্যাতনের ১ লাখ ৮০ হাজার মামলা হয়েছে। এ মামলাগুলোর অধিকাংশই এখনো বিচারাধীনন। এছাড়া যেসব মামলার রায় হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ ধরণের নির্যাতনের মামলাগুলোর মাত্র ১.৩৬ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হয়েছে বাকি ৯৮.৬৪ শতাংশ মামলায় আসামি আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বিভিন্নভাবে বেরিয়ে গেছে। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন আমাদের এমন তথ্যই দেয়। এছাড়া বিচার কার্যের দীর্ঘ সূত্রতা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ঢিলেমি, আইনের ব্যত্যয়, সামাজিক অসচেতনতা, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে শিশু নির্যাতন ও হত্যা বেড়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসচেতনতা, সামাজিক প্রতিরোধ, আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ, দ্রুত বিচার নিশিত করণ এবং প্রকৃত দোষীরা যাতে বিচার থেকে রেহাই পেতে না পারে সে ব্যবস্থা করা গেলে শিশুদের অনেকাংশে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ ট্রাস্টের গবেষণা কর্মকর্তা মো আরিফুর ইসলাম জানান, “শহরাঞ্চলে পাশাপাশি ফ্ল্যাটগুলো থাকে অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং সীমিত প্রবেশাধিকারসম্পন্ন। তাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোনো শিশু গৃহকর্মী নির্যাতিত হতে থাকলেও হস্তক্ষেপ করার কেউ থাকে না।”
তিনি আরো বলেন, শিশুদের ছোটখাটো অপরাধের কারণে সালিশি বিচারের নামে তাদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে একাধিক অপরাধের ভুক্তভোগী জনতার ক্ষোভ কোনো একটি শিশুচোর বা পকেটমারের ওপর পড়ছে। সাধারণ মানুষ এরূপ কোনো সহিংস ঘটনা ঘটতে দেখলেও হস্তক্ষেপ না করে ঝামেলামুক্ত থাকতে চায়। অপরদিকে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, দোষীদের দ্রুত জামিন, সাজার হার কম ইত্যাদি ঘটনায় মানুষের মনে সহিংস কাজের প্রতি ভীতি কাজ করছে না।
তার মতে শিশুর প্রতি সহিংসতা কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেগুলো হলো- ১. নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কখনও শিশুদের একাকী না রাখা। ২. স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কর্মজীবী হলে শিশু সন্তানকে দিবাযত্ন কেন্দ্রে বা বিকল্প ব্যবস্থায় রাখা। ৩. গৃহকর্মীকে নিয়মিতভাবে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার মাসিক পরিদর্শনে রাখা৷ ৪. সম্ভাব্য অপরাধী ও ঝুঁকিপূর্ণ ভিকটিমকেন্দ্রিক প্রচারণা চালানো। ৫. জনসাধারণকে অপরাধ প্রতিরোধে দায়িত্বশীল ও সমাজ স্বীকৃত উপায়ে যৌন চাহিদা মেটানো। এবং ৬. অপরাধীর দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।

লেখক,
সিয়াম আহমেদ
শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

237 Views

আরও পড়ুন

ইসলামের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি গড়ে ওঠা পবিত্র শহর

২০২৬ সালের হজের রোডম্যাপ ঘোষণা করল সৌদি আরব

নাফনদীতে জেলের ছদ্মবেশে মাদক পাচারকালে১লাখ২০হাজার ইয়াবাসহ দুই মিয়ানমার নাগরিক আটক

সন্ধান মিলছে না মাদ্রাসা শিক্ষার্থী লাবিবের

বরকলে বাহাদুর খাঁন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইছালে ছাওয়াব মাহফিল

মৌলভীবাজার জামায়াতের সাবেক আমীরের ইন্তিকালে ডা. শফিকুর রহমানের শোকবার্তা

জার্মানিতে বেড়েছে ইসলামবিদ্বেষ

বাংলাদেশ স্কাউটস চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক সমাজ উন্নয়ন ওয়ার্কশপ সম্পন্ন

নিজেস্ব অর্থায়নে জবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ারের পানির ফিল্টার স্থাপন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায় জামায়াত

প্রতিরোধের ক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে ইসরায়েলের

মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায় যে পরাশক্তির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল (পারস্য) ‘ইরান’