জাহেদুর রহমান সোহাগ:
কানে হেডফোন গুঁজিয়ে মনের সুখে মোটিভেশনাল কথা শুনছিলাম। তারমাঝে হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। এলাকা থেকে কল দিয়েছে ; বলল। বাল্যবিয়ে। ছেলে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় সময় হাতেনাতে ধরেছে সহযোগীকে। তাকে কি পরিমাণ উত্তম-মধ্যম দিয়েছিলো ! বলে বুঝানো যাবেনা। আপনি আসেন । আমি থানায় কল দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ভাবতে লাগলাম “সমাজের কিযে অবস্থা “।
পরিচিত আশেপাশের কয়েকজনকে জানালাম বিয়ষটি। তারা ঘটনাস্থলে গেলো। জানালো ঘটনা সত্য। তবে পারিবারিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিবে । হয়তো পরে মেনে নিবে। আপাতত এখানে শেষ। ছেলেটি এই এলাকার মেয়েটি বাজারের দক্ষিণ পাড়ার। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়।
মানুষের মুখে মুখে এখন এইসব কথা। ভালোর চেয়ে খারাপটায় বেশি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমি ভাবছি ভিন্ন কথা। সমাজের এ কেমন বাস্তব চিত্র।
এই সমাজের ছেলে-মেয়ে গুলো কতো বিচিত্র আর অত্যাধুনিক । সরকার বাল্যবিয়ে রোধে নজরদারি বাড়িয়েছে। অভিভাবকদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে স্কুলে স্কুলে ক্যাম্প্যান করেছে, প্রি কল সেবা চালু করেছে। প্রশাসন সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে অভিযোগ পাওয়া মাত্র৷ কিন্তু বাল্যবিয়ে কি বন্ধ হচ্ছে।
না। এখন আর পিতা-মাতা বাধ্য করে বাল্যবিয়ে দিচ্ছে না। সন্তানরা সেচ্ছায় অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করছে। আর সম্মান বাঁচাতে কয়েকদিন পরে অন্য অভিভাবক তার মেয়ে বিয়ের কথা বললে ছুটে আসে প্রশাসন।হয়ে যায় সংবাদ; বড় বড় পত্রিকার পাতায় ছবি ছাপায়। সুনাম ও প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রশাসন ; কিন্তু বাল্য বিয়ে ঠিকই হচ্ছে।
পালিয়ে যাওয়ায় পর পরিবার মেনে নিচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে বিয়ে করে প্রশাসনকে বিয়ের নিমন্ত্রন জানাচ্চে । এভাবেই বাল্যবিবাহ হরহামেশাই হচ্ছে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর উদঘাটন করতে তথ্য সংগ্রহকারী সংবাদকর্মী গেলে এলাকার বড় ভাই পরিচয় দিয়ে বলে, এলাকার রিপোর্ট নষ্ট হবে। কত ঘটনায় ঘটছে। এগুলোর নিউজ করেন। এই নিউজের কি দরকার।
আর এভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর বড় ভাই পরিচয়ে কয়েকদিন পড়ে ধামাচাপা পড়ে যায় বাল্যবিয়ের ঘটনা। ইউনিসেফের তথ্যে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশের অধিক নারী যাদের বয়স এখন ২০ এর মাঝামাঝি তাদের ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হবার আগেই বিয়ে হয়েছে। প্রায় ১৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের নিচে।
তথ্যটি সঠিক। ভুল কিংবা গাফিলতি প্রশাসন কিংবা অভিভাবকদের নয়। দোষ রাজনৈতিক দলের বড় ভাইদের যারা প্রশাসনকে না জানিয়ে সম্মানের চোখে বাল্যবিয়ে মেনে নিতে বাধ্য করে পরিবারকে সঙ্গে সালিশ কার্যে উপস্থিত অন্যদের বাল্যবিয়েতে প্রণোদিত করে।
আমি লিখতে গিয়ে একটা বাক্য বার বার আসে ” বাল্যবিয়ে কি বন্ধ হচ্ছে; কখনো হবে” এভাবেই চললে সমাপ্তি কি করে হবে ; প্রশ্নটা বিবেকের? আপনি একটু চিন্তা আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।