আমি একটি প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এলাকার শিক্ষার্থী অভিভাবক ৪০%কৃষক,৩০%দিনমুজুর,২০% ছোট খাটো ব্যবসা, ৫% প্রবাসী৫ %অন্যান্য।চাকরিজীবী ও সচেতন অভিভাবকের সন্তান নেই বল্লেই চলে।যারা একটু সচেতন তারা শহরমূখী।বিদ্যালয়টির পদ সংখ্যা প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে ৬টি।বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক ৪জন। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২৬০জন। ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় অপ্রতুল শিক্ষক। তাছাড়া, প্রায় বিদ্যালয়ের ভৌত কাঠামো খুবই নাজুক। নেই সীমানা প্রাচীর, গভীর নলকূপ, পিডিপি ৪ এর বিল্ডিংগুলোতে নেই কোন ওয়াশব্লক যা এখন শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সময়ের দাবী।প্রায় বিদ্যালয়গুলোতে নেই দপ্তরী।যার পরিপ্রেক্ষিতে, বিদ্যালয় নিয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকের ভাবনার অন্ত থাকেনা।
বিদ্যালয়ের প্রহরী থেকে শুরু করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো করতে হয় শিক্ষক নিজ হাতে। পরিস্কার করতে হয়, ছাদ,মাঠ,ক্লাসরুম,অফিস,টয়লেট।
বিদ্যালয়ের উপস্থিতি ধরে রাখতে,শিক্ষকে করতে হয় কঠোর পরিশ্রম ।নিয়মিত হোম ভিজিটের পাশাপাশি, উঠান বৈঠক, মা – সমাবেশ ও মোবাইল যোগাযোগ। অসচেতন অভিভাবক থাকায় অনেক শিশুর শারীরিক অবস্থাও বেশ নাজুক থাকে।বিদ্যালয়ের শতভাগ পোশাক নিশ্চিত করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিতে হয় শিক্ষককে। নিজস্ব কিছু কৌশল অবলম্বন করে বিদ্যালয় ভিত্তিক পোশাক নিশ্চিতকরণে আমি সফলতা লাভ করেছি।শুধু পোশাকই নয়, তাদেরকে সাজিয়েছি শহরের স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতো।শার্ট,স্কাটের সাথে রয়েছে, সাদা কেটর্স, জুতা মোজা ও ক্যাপ।এর জন্য হাতে নিয়েছি দৈনিক ইনোভেশন যেমন সমাবেশে ও ক্লাসে যারা সুন্দর ড্রেস পরে আসে তাদেরকে সামনে এনে গুড স্টুডেন্ট নামে আখ্যায়িত করেছি।পাশাপাশি বাবা মাকে বুঝেছি সরকারে উপবৃত্তির শিশুর জন্য উপহার স্বরুপ। হতদরিদ্র পরিবারের নিজস্ব অর্থায়নে পোশাক নিশ্চিত করেছি। ক্লাসরুমে আনন্দঘন পরিবেশ বজায় রেখে নিয়মিত পাঠদান পরিচালনা করতে হয়।সহপাঠ্যক্রমের উপর জোর দিতে হয় বেশী করে না হয়তো শিশুকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখা একেবারেই অসম্ভব। যেমন: খেলাধুলা, নাচ-গান,অবসরযাপনের জায়গা( চিলেকোঠায়)দাবা ও লুডুর খেলার জায়গায় করে নিয়েছি।তাছাড়া,বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসরুমকে দিয়েছি নান্দনিকতার ছোঁয়া। নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তুলেছি মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার,ক্লাস লাইব্রেরি।বিদ্যালয়ে নিজস্ব পরিকল্পনায় গড়ে তুলেছি প্রাক-প্রাথমিক (শিশুকানন) কক্ষ। প্রাক-প্রাথমিকের চারটি কর্ণারকে সাজিয়েছি চমৎকারভাবে প্রাকের শিশুর পোশাক নিশ্চিত করতে গ্রহণ করেছি আরেকটি ইনোভেশন যেমন,লাল গালিচার উপর আসন।যে শিক্ষার্থী সুন্দর ও পরিপাটি পোশাক পরে আসবে তাকে ক্লাসের রাজকুমার ও রাজকন্যা বানিয়ে বসানো হয়।যার ফলশ্রুতিতে প্রতিটি শিশু সুন্দর স্কুল ড্রেস পরে আসে ক্লাসরুমে যোগকরেছি শিশুর সাজসজ্জার জিনিস নেইলপালিশ, পরীর ডানা, আয়না চিরুনি ইত্যাদি। বিদ্যালয়ের প্রতিটি জিনিসে যত্ন ও সুষ্ঠু ব্যবহারে জন্য শিক্ষার্থী দ্বারা কমিটি গঠন করেছি।বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর প্রতিটি রুমের ফ্যান বন্ধ ও থালা ব্যবহার করছে কিনা চলে তাদের অনুসন্ধান। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় অনেকখানি।নিজে অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ের বৃক্ষ পরিচর্চা করি। নিজস্ব পরিকল্পনা অনুসারে বিদ্যালয়ে গড়ে তুলেছি একটি সুন্দর অফিসকক্ষ। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের পাশাপাশি প্রযুক্তির প্রতি ভীতি দূরীকরণের লক্ষ্যে শিশুকে নিয়মিত ল্যাপটপ ধরে অফ অন শেখায়। এসডিজি লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে শিক্ষকের ভূমিকা ব্যাপক। তাই আগামী ২০৩০ এর টার্গেক ফিলাপ করতে শিক্ষার্থীদেরকে গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে শিক্ষকের ভূমিকা ব্যাপক। জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে শিক্ষক হিসেবে প্রচেষ্টা চলমান আছে, ও থাকবে।
তন্নী রহমান
সহকারী শিক্ষক
মাঝিশাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মাধবপুর, হবিগঞ্জ।