————
নার্সিং পেশা সারা বিশ্বে মহৎ পেশা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এই মহৎ পেশা এ যুগেও অবহেলার স্বীকার। একজন শিক্ষার্থী “এইচ এস সি” পাশ করে ভর্তি পরীক্ষা দেয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এবং এ জন্য এইচএসসি তে শুধু পাশ করলেই হয় না বরং নির্ধারিত জিপিএ থাকতে হয়। যা একজন নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য।
যেমন নার্সিং ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ এ উল্লেখিত : চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং (বি এস সি ইন নার্সিং কোর্সের জন্য প্রার্থীকে এস এস সি ও এইচ এস সি দুটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। দুটি পরীক্ষায় নূন্যতম জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩.০০ এর কম হবে না। সেই সাথে প্রার্থীকে এইচ এস সি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে নূন্যতম জিপিএ ২.৫০ থাকতে হবে।
৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের জন্য প্রার্থীকে যেকোনো বিভাগ থেকে এস এস সি ও এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। দুটি পরীক্ষায় নূন্যতম জিপিএ ৬.০০ থাকতে হবে। তবে কোনো একটি পরীক্ষায় ২.৫০ কম হলে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবে না।
এইচ এস সি এর পর এতো যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ার ভাগ্যও সামান্য কিছুজনেরই হয়। কারণ দিন দিন নার্সিংয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী বাড়লেও বাড়ছেনা সরকারি কলেজের সিট। তবে বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠানেও চাইলেও ভর্তি হতে পারবে না যে কেউ। কারণ এখানেও যোগ্যতার পরিচয় দিতে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ নাম্বার পেতে হবে।
এইচ এস সি এর পর চার /তিন বছরের নার্সিং কোর্স শেষ করেই নার্স হওয়া যায় না,করতে হয় আরও ছয় মাসের ইন্টার্নি। ইন্টার্নির শেষেও নার্স হওয়া যায় না। দিতে হয় বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে লাইন্সেসিং পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় পাশ করার পরই বাংলাদেশের একজন রেজিস্ট্রার নার্স হওয়া যায়।
এইচ এস সি এর পর তিন বছরের নার্সিং কোর্স শেষ করতেই ৪ বছরেরও অধিক সময় লেগে যায়। সে সময়ে স্নাতক শেষ করা যেতো। অথচ স্নাতকতো দূরের কথা ডিগ্রি সমমান মর্যাদাও তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে না।
নার্সিংয়ের মতো মহৎ পেশাকে এভাবে অবমূল্যায়ন করলে এ দেশের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যে দেশে একজন শিক্ষার্থী এইচ এস সি এর পর প্রায় ৪/৫ বছর পড়াশোনা করেও আবার এইচ এস সি এর মর্যাদাই পায়। আর নার্সিংয়ের এই যৌক্তিক দাবি নিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের স্যালুট জানানো উচিত যেখানে সেখানে তাদের যারা ফ্যাসিস্ট বলে তারা নিজেদের মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছে।
হ্যাঁ নতুন সরকারের আগমনের পর অনেকে অনেক ধরনের দাবি দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছে, যার মধ্যে অনেক অযৌক্তিক দাবিও ছিলো।মগের মুল্লুকের মতো অনেক দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছিলো পরিস্থিতি মোকাবেলায়। অবশ্যই সরকারকে সময় দেওয়া উচিত তবে যৌক্তিক বিষয়গুলোকে আগে সুযোগ দিয়ে সেগুলো নিয়ে ভাবলে দেশ এগিয়ে যাবে। এতোদিনের অযৌক্তিক আন্দোলনকারীদের ফ্যাসিস্ট না বলে নার্সিং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির কারণে ফ্যাসিস্ট বলা চরম মূর্খতা ও অপ্রীতিকর। নার্সিং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে দেশের নার্সিং শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সময়ের দাবি।
হালিমা বিবি
নার্স ও প্রাবন্ধিক।