————————–
এই বঙ্গীয় জনপদে প্রাচীনকাল থেকেই কৃষি অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবিকার উৎস। উপমহাদেশের অন্যান্য অংশের অবস্থাও প্রায় অভিন্ন। কিন্তু প্রায় গোটা বাংলা পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ প্রধান নদী পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এবং তাদের অসংখ্য শাখাপ্রশাখা প্রসারিত পলিগঠিত সমভূমি হওয়ার দরুন প্রাচীনকাল থেকেই এখানে কৃষিকাজ অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল এবং এখানে কৃষির ওপর জনসংখ্যার চাপ ছিল অত্যধিক।
বিভিন্ন ছাপচিত্র ও লেখা থেকে জানতে পারি বাংলাদেশের মাটি প্রাচীনকাল থেকেই উর্বর ছিলো। এ দেশে কয়েক শ্রেণীর মানুষ ছিলো। প্রথমত, জমিদার শ্রেণী – যারা অনেক জমির মালিক কিন্তু চাষ করতোনা। তারা গরীব শ্রেণীর কাছে জমিগুলো বর্গা দিতো। দ্বিতীয়ত, মধ্যম শ্রেণী – তারা নিজের জমিতে নিজে চাষ করতো এবং এতে তাদের জীবিকা নির্বাহ হতো। তৃতীয়ত, গরীব শ্রেণী – যাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই,জমিদার শ্রেণী থেকে বর্গাচাষ করতো।
চাষাবাদ, পরিবহণ ও বিভিন্ন দুগ্ধজাত সামগ্রীর জন্য ব্যবহূত কৃষকদের মূল পশুসম্পদ ছিল গরু। গরুর সংখ্যা দিয়ে কখনও কখনও লোকের ধনদৌলতের পরিমাপ করা হতো। গরু এবং লাঙ্গল,জোয়াল দিয়ে হালচাষ করা হতো। খুব ভোরে তখন কৃষকদের গরু হাতে, কাঁধে লাঙ্গল,জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতে দেখা যেতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই সোনালী ঐতিহ্য হারিয়ে গিয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অতলে। এর কারনে কমেছে কৃষকের সংখ্যাও।
বর্তমানে কৃষক শ্রেণীর লোকদের নিচু চোখে দেখা হয়, কৃষকদের ছোটলোক বলে পরিগণিত করা হয়। একসময় ছেলেমেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় সবচেয়ে বেশী অনুসন্ধান করা হতো – কে কতো বেশী জমি চাষ করে,কার কাছে কত বেশী গবাদিপশু রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যদি বলা হয়, ছেলে কৃষিকাজ করে অথবা মেয়ের বাবার কৃষি কাজ রয়েছে। বিয়েতো হয়ই না বরং উভয়পক্ষ নাক সিটকায়।
এসব কারনেই বাংলাদেশে কৃষকের সংখ্যা কমছে প্রতিনিয়ত। উর্বর জমি গুলো হচ্ছে অনুর্বর। আমরা যদি সৌদি আরব বা মরুভূমির কোনো দেশের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাচ্ছে ঐসব দেশে একটা বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করতে তারা কতো পরিশ্রম করছে, আর বাংলাদেশে আল্লাহ তায়ালার রহমত রয়েছে, যার ফলে জমি উর্বর। আমরা একটা আম,জাম,খেজুর ইত্যাদি খেয়ে বিচিটা মাটিতে পেললে কোনো পরিচর্যা ছাড়া একটি প্রকাণ্ড গাছে পরিণত হয়। তাই বাংলাদেশ ছিলো কৃষিপ্রধান দেশ। কিন্তু সেই কৃষি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
এছাড়াও কৃষিকাজের ক্ষেত্রে অবসর কাটালে সকল ধরনের নেশাবৃত্তি,অলসতা লোপ পায়। তার সাথে শারীরিক কসরতের দ্বারা অনেক ধরনের রোগ-ব্যাধী শরীর ছেড়ে পালায়।
বাইরের বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে কৃষিকে শিল্প হিসেবে নিয়েছে,তারা মনে করে কৃষিকাজ করলে শরীর,মন এবং অর্থ সবই ঠিক থাকে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বাধিক আলোচিত পেঁয়াজ সমস্যার সম্মুখীন ও হতে হতোনা আমাদের,যদি বাংলাদেশে পেঁয়াজ চাষ করা হতো। বাঙ্গালী এখন পরনির্ভরশীল। বাঙ্গালীর নাক সিটকানো স্বভাব এবং অলসতার দরুন আজকে আকাশছোঁয়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ,হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থব্যয়।
সবশেষে একটা কথাই বলা যায়,বাংলার সেই সোনালী ঐতিহ্য কৃষিকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারলে এ ধরনের সংকট নিরসন হবে।
তাই আসুন সকলে মিলে পূর্বের ন্যায় কৃষি নির্ভর হই, কৃষিকে শিল্প হিসেবেই গ্রহণ করি। কারন-“সকল ধরনের অতিরিক্ত অর্থব্যয় নিরসনে আমরাই যথেষ্ট”।
– ছামির আলী ভূঁইয়া
শিক্ষার্থী, সুফিয়া নূরীয়া ফাজিল মাদ্রাসা,
মিরসরাই,চট্টগ্রাম।