-আঃ মুয়ামি হুজায়ফা:
বিধাতার আশীর্বাদে পুষ্ট হয়ে যখন পিতামাতার মুখে হাসি ফুটিয়ে ধরণীকে আগমণি সম্ভাষণ জানিয়ে একটি শিশু জন্ম নেয় ঠিক তখন থেকেই বাবা মা তাকে নিয়ে কল্পনার ছবি অাঁকতে শুরু করে দেয়। প্রকৃতির বিধান অনুযায়ী শিশুটি বড় হতে হতে তার কাছে পিতামাতার চাহিদার তালিকাও বড় হতে থাকে। আর চাহিদা থাকাটাও বোধহয় প্রকৃতির অমোঘ নিয়মগুলোর মধ্যকার একটি নিয়ম। শিশুটি যখন পড়ালেখার জন্য শিক্ষা স্তরের প্রাইমারি স্তরে থাকে ঠিক তখনই বাবা মা তাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেন। পিতামাতারা তখন থেকেই শিশুদেরকে মানসিকভাবে উৎসুক চাহনিতে তাদের অমোঘ ইচ্ছা তোমাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে সেটা মনের মধ্যে গেঁথে ফেলেন।
কেহ বা আবার পাইলট, ব্যাংকার, এবং তথাকথিত স্বর্ণের হরিণ বিসিএস ক্যাডারের সম্মোহনে সম্মোহিত করে থাকেন কোমলপ্রাণ শিশুদের মেধা ও মননকে। বাংলাদেশের চাকরি প্রথাটা এখন একধরনের হাসিতামাশার মত অবস্থায় পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এমনটা হয়ে চলে আসছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাও সেরকম ভাবেই খেলতামাশার মতই চলে আসছে। শিক্ষার্থীরা গতানুগতিক ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে পাবলিক ইউনিভার্সিটির সম্মোহনে সম্মোহিত হয়ে যায়। যাদের মেধা ও ভাগ্য সুপ্রসন্ন তারা সুযোগ পেয়ে যায়। বাকিরাও অনার্স নামক শিক্ষাব্যবস্হা থেকে বঞ্চিত হন না। দীর্ঘ চার বছর শিক্ষার্থীরা এক একজন এক এক বিষয়ের উপর যথারীতি অনুযায়ী পান্ডিত্য অর্জন করে ফেলে। কিন্ত অনার্স শেষ করেই চাকরির বাজারে এসে দেখে এতদিন যা পড়েছে তার সাথে চাকরির পড়ালেখার এক তৃতীয়াংশও মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আবার লাইব্রেরিতে মাধ্যমিক স্তরের বই, বিভিন্ন প্রকাশের প্রকাশিত হালুয়া রুটির মত গুছানো বইগুলো মুখস্থ করতে শুরু করে দেয়। লেখাপড়া করতে করতে বাংলা, ইংরেজি আর চাকরির বাজারের অন্যতম পুজি সাধারন জ্ঞান মুখস্থ করে ফেলে। একপর্যায়ে চাকরিও পেয়ে গেল। কিন্ত কি দেখা গেল? তার অনার্সে পাঠ্য বিষয় ছিল নাট্যকলা, উর্দু, ভাষাবিজ্ঞান অথচ সে এখন বিসিএস প্রথার কল্যাণে প্রশাসনিক ক্যাডার হয়ে গেল। এসে গেল তার কর্মজীবন। কিন্ত কি দেখা গেল? সে প্রশাসনিক ক্যাডারের কিছুই জানেনা। তাকে পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আদলে দীর্ঘ সময়ের জন্য ট্রেনিং করতে পাঠানো হলো। ট্রেনিং শেষে তাকে তার চাকরির বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে হলো। তাহলে কি দেখা গেল? শিক্ষা ব্যবস্হার সাথে না আছে মিল দেশের সমাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালানোর মিল না অাছে কোন উদ্ভাবনী জ্ঞান অর্জনের তেমন জোড়ালো কারিগরি ব্যবস্হা। মূলত আমরা আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্হা দ্বারা দেখে পড়তে পারা এবং লিখতে পারা ছাড়া কোন কিছুই শিখতে পারি না।
আর এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্হা ও চাকরিপ্রথার কারনেই আজ আমরা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, শেরে বাংলার মত রাজনীতির মাঠে লড়াকু রাজনীতিবিদ, বঙ্গবন্ধুর মত অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াকু নেতা বর্তমানে খুজে পাচ্ছি না।
আমাদের এ বিষয়ে এখনই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা উদ্ভাবণী শিক্ষা থেকে কালের পরিক্রমায় অন্ধকারে পতিত হওয়ার বেশি বাকি নেই।
এটাই উপযুক্ত সময়, আমাদের বর্তমান গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রচলিত চাকরিপ্রথার মুখ থেকে শিক্ষার্থীদেরকে সম্মোহিত না করে উদ্যোগতা ও উদ্ভাবণী শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করি এবং শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্হা করে দেই। তাহলেই পাবো শিক্ষার আসল ও প্রকৃত উদ্দিষ্ট বিষয়।
—–
শিক্ষার্থী,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়)