ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১০ জুলাই ২০২৫
  1. সর্বশেষ

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: নীরব মহামারির পথে?

প্রতিবেদক
জুবায়েদ মোস্তফা
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকে মানবসভ্যতা সংক্রমণজনিত রোগের বিরুদ্ধে এক বিশাল বিজয় অর্জন করেছে। কিন্তু এই মহৌষধের অতিরিক্ত এবং ভুল ব্যবহারের ফলে এক ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ব—অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার ক্রমবর্ধমান সমস্যা। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যাকটেরিয়া নিজেদের এমনভাবে অভিযোজিত করে যে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক আর তাদের ধ্বংস করতে পারে না। ফলে সাধারণ সংক্রমণও হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কীভাবে গড়ে ওঠে?

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার এবং অতিরিক্ত ব্যবহারই মূলত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টির প্রধান কারণ। যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের সংস্পর্শে আসে, তখন কিছু দুর্বল ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু কিছু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়া বেঁচে গিয়ে নিজেদের অভিযোজিত করে এবং পরবর্তীতে ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন প্রজন্মের ব্যাকটেরিয়াগুলোর মধ্যেও প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টি হয়।

রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির কারণ

১. অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন: অনেক সময় ভাইরাসজনিত রোগের (যেমন সর্দি-কাশি) চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, যা কার্যকর নয় এবং শুধুমাত্র রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে।

২.অর্ধেকমাত্রায় ওষুধ গ্রহণ: অনেক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সম্পূর্ণ মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করে মাঝপথেই ছেড়ে দেন, যা ব্যাকটেরিয়াকে আরও প্রতিরোধী করে তোলে।

৩.প্রাণিসম্পদ ও কৃষিক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: গবাদিপশু ও মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অনেক দেশে প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, যা মানুষের মধ্যেও প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

৪.স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব: অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পর হাত না ধোয়া, অপরিষ্কার পানীয় গ্রহণ এবং অপরিচ্ছন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রেজিস্ট্যান্স ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহতা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, প্রতিবছর প্রায় ৭০০,০০০ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সজনিত সংক্রমণে মারা যায়। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা ক্যান্সারসহ অন্যান্য মরণব্যাধির চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে।

সমাধান কী?

১. অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনও অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত নয়।

২. সম্পূর্ণ ডোজ শেষ করা: চিকিৎসক যতদিন ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দেন, ততদিন পর্যন্ত তা গ্রহণ করতে হবে।

৩. প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সঠিকভাবে হাত ধোয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি।

৪. নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের গবেষণা: বিজ্ঞানীদের উচিত নতুন কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধানে আরও বেশি গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া।

৫. প্রাণিসম্পদ ও কৃষিক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: খাদ্য উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিকের সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের সকলকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক কোনো ম্যাজিক পিল নয়—এটির যথাযথ ব্যবহারই আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে পারে।

লেখক: জয় পাল অর্ঘ
শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

232 Views

আরও পড়ুন

আজ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল

১৪ জুলাই পাবলিক হল ময়দানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল জনসভা

ইসলামী ছাত্রশিবির নীলফামারী শহর শাখার নতুন দায়িত্বে যারা

টেকনাফে মিনি ড্রাম-ট্রাকে মিললো৫০হাজার ইয়াবা,আটক-২

মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা

গাজীপুরে বিএনপি নেতা সাথী বহিষ্কার ও গ্রেফতার সমীকরণে : নিরব ক্ষোভে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা

কাপাসিয়ায় খাল বিলে অভিযান চালিয়ে ২৫ টি ম্যাজিক চাই ও জাল পুড়িয়ে ধ্বংস

মাদারীপুর জেলা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার উদ্যোগে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ

কেরোয়ার একমাত্র রাস্তাটি আজ জনভোগান্তির প্রতীক

টেকনাফে বিজিবি অভিযানে৮১হাজার৩৫৫পিস ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ স্ত্রী আটক,স্বামী পলাতক

গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া নদী ভাঙ্গন পরিদর্শনে সাবেক এমপি কাজল

উখিয়ায় কেন্দ্র প্রতিনিধি সমাবেশে জেলা আমীর আনোয়ারী