একটা বৈশ্বিক যুদ্ধ বেধে গেছে। সমগ্র বিশ্ব একদিকে আর কোভিড-19 অন্যদিকে । বড় বড় দেশগুলো পরাস্ত এই মহামারী সামাল দিতে।এই যুদ্ধে নেই কোন অস্ত্র কিংবা রক্তপাত। কিন্ত অজস্র মানুষের প্রাণ ঝরে যাচ্ছে প্রতি মূহুর্তে। এই লেখা যখন লিখছি তখন বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আশি জন। আর মারা গেছে নয় জন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সের মত দেশগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে অবস্থাটা পৃথিবীবাসীর পক্ষে সুখকর না। আর কতদিন এই অবস্থা চলবে তা অনিশ্চিত। বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গেছে অনিশ্চয়তার দিনরাত। ব্যপারটা খুব সহজ যখন শত্রুর গতিবিধি জানা থাকে।কিন্ত অদৃশ্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে তো আর সেই বিধি খাটেনা। বছরটা যখন শুরু করি তখনো কি ভেবেছিলাম তিন মাসের মাথায় বিশ্ব এত বড় একটা ধাক্কা খাবে?
পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা সক্ষম এই প্রশ্নটা থেকেই যায়।মোটামুটি মৃত্যু হারে ইতালির পরেই আমাদের অবস্থান। সারাদেশে একরকমের অঘোষিত লকড ডাউনই বলতে গেলে। প্রায় তিন মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত চৌদ্দ এপ্রিল করা হয়েছে। এরকম স্থবিরতা গেলো দশ বছরে চোখে পড়েনি। সরকার,প্রশাসন,পুলিশ,সশস্ত্র বাহিনী চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব দেখাচ্ছেন পরিস্থিতি মোকাবেলায়। এই মূহুর্তে শুধুই প্রয়োজন ব্যক্তিগত সতর্কতা আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আমরা যতটা আতংকিত হতে সক্ষম ঠিক ততোটাই ব্যর্থ সচেতনতার বাস্তবিক প্রয়োগ দেখাতে। বলাই বাহুল্য এই সচেতনতা ব্যক্তি থেকে সমাজে ছড়াবে আর সমাজ থেকে রাষ্ট্রে। করোনা ভাইরাস নিঃশব্দে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে আগাচ্ছে কিন্ত জ্ঞান থাকা স্বত্বেও আমরা সচেতনতার মত গুরুত্বপূর্ন বিষয়টিকে ছড়াতে পারছিনা। গত ৪ তারিখের একটি বিষয়ের ব্যপারে না বললেই নয়। যখন আমরা কোয়ারেন্টাইন মেনে চলছি ঠিক তখনি হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক বিভিন্ন জেলা থেকে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করলো। এটি একই সাথে অমানবিক এবং সরাসরি পরিস্থিতি মোকাবেলার সাথে সাংঘর্ষিক। সরকার যখন জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদগ্রীব, সারা দেশ যখন এক কঠিন সংকটে নিমজ্জিত তখন এই আত্নঘাতী সিদ্ধান্তটি নেওয়া কতোটা যৌক্তিক ছিল তা বলা নিষ্প্রয়োজন। আবার ঠিক রাতে বিভিন্ন ফেরিঘাট বন্ধ করে দেওয়া হলো। এখানে সুস্পষ্ট সমন্বয়হীনতার বিষয়টি প্রতীয়মান।এছাড়াও দেশের এ পরিস্থিতিতে একটা নেতিবাচক অর্থনৈতিক ধাক্কার আশংকাটি থেকেই যায়। দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত ভাসমান মানুষগুলোর এই চিন্তাটা করা অযৌক্তিক নয়। কারন স্বাভাবিক ভাবেই হাতের নগদ অর্থ ফুরিয়ে গেলেই শুরু হবে সমস্যা। আর এই অবস্থা চলমান থাকবে কতদিন তা অজানা। ইতোমধ্যে রাস্তায় ভাসমান মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ত্রাণের যথাযথ সরবরাহ এবং সমন্বয় না থাকলে ক্ষুধার্ত মুখগুলো বিদ্রোহ করবে এটা তো জানা।
আমাদের এই সময়ে নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে একেবারে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত দরকার শুধুমাত্র কাজের স্বমন্বয়। কৌশলী সিদ্ধান্ত আর বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয় পারবে দেশের সিস্টেমেটিক ঝুঁকিগুলো এড়াতে। বাজারে জিনিসের অতিরিক্ত দাম যেমন ক্ষতিকর আবার উৎপাদনস্থলেই পন্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াটা হবে ক্ষতির কারন। বিভিন্ন কাজে সমন্বয় রাখাটাই এখন সরকারের প্রতি বড় চ্যালেঞ্জ।আর এ অদৃশ্য চ্যালেঞ্জটি ছুঁড়ে দিয়ছে করোনা ভাইরাস। সামনের কয়েক সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্তত বিভিন্ন দেশের ভাইরাসের গ্রোথ প্যাটার্ন দেখে এতটুক বলেই দেওয়া যায়। যে রোগের কোন চিকিৎসা নেই সে রোগের প্রশমন হতে পারে শুধুই সচেতনতা। সরকার হয়তো বিধিনিষেধ দিতে পারবে। কিন্ত সেটা নাগরিক পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা শুধুমাত্র নাগরিকেরই দায়িত্ব। অন্তত এই বৈশ্বিক মহামারি যেদিকে যাচ্ছে ব্যক্তিগত সচেতনতা না থাকলে হয়তো দোষারোপ করার সুযোগও হয়তো মিলবেনা। অন্তত বাংলাদেশকে ইতালির মত মৃত্যুপুরী হিসেবে দেখতে চাইনা। বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাই এগিয়ে আসার। সম্মিলিত সহযোগিতা আর সচেতনতাই এই মূহুর্তে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার কার্যকর নিয়ামক হতে পারে।
আহমেদ ফয়সাল
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।