ঢাকাবুধবার , ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  1. সর্বশেষ
  2. বিশেষ সংবাদ

চমেক হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে ওঝার কাছে, সাপে কাটা যুবক

প্রতিবেদক
admin
২৯ মার্চ ২০২৪, ১:৫১ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নিজ কৃষি খামারে কাজ করতে গিয়ে পঁয়ত্রিশ বছরের যুবক মো. সুমন (৩৫) কে সাপে কাটে। খামারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াখালী হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে ওঝার কাছে সেই সাপে কাটা রোগী।

চমেকে রোগীতে যথারীতি ভর্তি করালেও মায়ের আকুতি মিনতি আর নানা হুমকিতে গ্রামের উদ্দেশ্যে আবারো হাসপাতাল ছাড়ে সাপে কাটা সুমন। জানা যায়, ওঝার কাছে চিকিৎসা করতেই মূলত রোগীকে চমেক ছাড়তে বাধ্য করেন তাঁর মা শাহিদা বেগম (৫০)। শাহিদার একমাত্র ছেলে মো. সুমন।

গত সোমবার (২৫ মার্চ) রাত ১২ টার দিকে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চর মেঘা এলাকার খামারবাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোবিন্দপুরের চেয়ারম্যান বেল্লাল মোল্লা।

ঘটনা সুত্রে জানা যায়, সুমনের বাড়ি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর হলেও সুমন বসবাস করতেন মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা গোবিন্দপুর ইউনিয়নে। মেঘনা নদীর করাল ভাঙ্গনে গোবিন্দপুর ইউনিয়ন এখন বিলিন প্রায়। সব দিকে চর এলাকা।

ঘটনার দিন গত সোমবার (২৫ মার্চ) রাত ১২ টার দিকে সুমন নতুন চর এলাকায় নিজ খামারে কাজ করছিলেন। খামারটিতে গরু লালন পালন ও ডাল চাষ করতেন। এলাকাটি ঝোপঝাড় জঙ্গলে ভরপুর ছিল। রাতে সুমন জমিতে কাজ কর‌তে গে‌লে হঠাৎ পা‌য়ে কামড় দেয় বিষধর চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপ। কয়েক ঘন্টার মধ্যে গলা দিয়ে রক্ত পড়ে সুমনের। দ্রুতই আত্মীয় স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে নোয়াখালী হাসপাতাল হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

পরে সাপে কাটা রোগী হাসপাতাল ছেড়ে ওঝার কাছে নিতে সিট কেটে দেন। এ ঘটনা শোনে চমেক হাসপাতালের ১৬ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগিরাও হতভম্ব হয়ে পড়েন। কেননা, চট্টগ্রাম বিভাগে সাপে কাটা রোগীর একমাত্র ভরসা হচ্ছে চমেক হাসপাতাল। এখানেই দেওয়া হয় সাপে কাটা রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা। রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম টিকা ও আইসিইউ ব্যবস্থা।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ সাপে কাটা মো. সুমনকে চমেকে ভর্তি করেন তাঁর খালু মোহাম্মদ খলিল। ভর্তি করানোর পর ডাক্তারেরা নিশ্চিত হন সুমনকে চন্দ্রবোড়া সাপে কামড় দিয়েছেন। কিডনিতে সমস্যা হয়েছে। ফলে, দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর ১২ ঘন্টা না যেতেই রোগীর সিট কেটে গ্রামের উদ্দেশ্যে দৌঁড় দিলেন খলিল।

পরে রোগীর বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, রোগী হাসপাতাল ছেড়ে মূলত ওঝার কাছে গেছেন। সাপে কাটা রোগী সুমনের মা শাহিদা বেগমকে নাকি পাশের বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন ছেলেকে ওঝার কাছে চিকিৎসা করাতে। এই ধারণায় পেয়ে বসে শাহিদা বেগমকে। ছেলেকে যেকোন মূল্যে হাসপাতাল থেকে ওঝার কাছে পৌঁছাতেই চাপ দেন রোগীর এ্যাটেনডেন্ট হিসেবে আসা খালু মোহাম্মদ খলিলকে। এতেই ঘটে বিপত্তি।

স্থানীয় সুত্র জানায়, সুমন গোবিন্দপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ফজলে করিম হাওলাদারের ছেলে। সুমনের এক ছেলে, এক মেয়ে। বর্তমানে তাঁর পরিবারের সবাই অসুস্থ। সুমনকে সাপে কামড় দিয়েছে এ খবরে তাঁর স্ত্রী রিক্তা বেগমও পাগলপ্রায়।

গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আসলাম রোগীর এ্যাটেনডেন্ট খলিলের বরাত দিয়ে বলেন, ‘সুমনের মা সরাসরি খলিলকে হুমকি দিয়েছেন। সুমন মারা গেলে তাঁকে আসামি করে মামলা করবে। সুমনকে যেন তাড়াতাড়ি ওর মায়ের কাছে পৌঁছায় দেন। এ কথা শোনে মূলত খলিল সাপে কাটা রোগীকে চমেকে ভর্তি করলেও পরে কোন মতে রোগী নিয়ে পালিয়ে যান।’

গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেল্লাল মোল্লা বলেন, ‘ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি খবর নিচ্ছি। বর্তমান যুগে যেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান এত উন্নত হয়েছে সেখানে এখনও ওঝার ঝাঁড় ফুক বিশ্বাস করা দুর্ভাগ্যজনক। মানুষকে সচেতন হওয়া দরকার।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘আমরা যতটুকু জেনেছি রোগীকে চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপে কেটেছে। অলরেডি চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি রোগীকে হাসপাতালে রাখতে। কিন্তু রোগীর মা কিছুতেই রাজি ছিলেন না। রোগীকে নিয়ে গেলেন। বিষয়টি রোগীর এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কোন ওঝা যদি মাকে প্রলুব্ধ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বণ্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাইদ বলেন, ‘সাপে কামড়ানোর পর যারা আগে ওঝার কাছে যান, তাদের মধ্যে মারা যাওয়ার হার বেশি। সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। সাপে কামড়ানোর পর ৬১ শতাংশ মানুষ যান ওঝার কাছে। আর ৩৫ শতাংশ মানুষ যান হাসপাতালে।সাপে কামড়ানোর পর প্রথম ১০০ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দ্রুত হাসপাতালের বিকল্প নেই।’

মানুষের শরীরের ওপর সাপের বিষের প্রভাব নিয়ে পিএইচডি করা গবেষক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম এ ফয়েজ জানান, ‘সাপের দংশনের শিকার মানুষের প্রাণ বাঁচানোর পথে অন্যতম অন্তরায় অপচিকিৎসা। কেননা, অধিকাংশ সময় রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে, যাওয়া হয় ওঝা বা বৈদ্যের কাছে। এতে রোগীর মৃত্যু ও পঙ্গুঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি অপচিকিৎসা রোধে আইন প্রণয়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

মাদারীপুর বাবু চৌধুরী ক্লিনিকের ওয়াশরুমে নবজাতক মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়ে পালিয়ে গেলেন অজ্ঞাত মা

হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখার পর কি বললেন জামায়াত আমীর?

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কাপাসিয়া প্রেসক্লাবে বিশেষ দোয়া মাহফিল

কাপাসিয়ায় গাছ কেটে অবৈধভাবে কয়লা তৈরি করার দু’টি চুল্লী ধ্বংস করেছে উপজেলা প্রশাসন

রাউজানের ডাবুয়ায় খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্যে খতমে কুরআন ও দো’য়া মাহ’ফিল

বাঁচতে চায় ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত কুবি শিক্ষার্থী অনন্যা

২০২৪-২৫ সেশনের ক্লাস শুরু এবং ৫ দফা দাবি ইডেন শিক্ষার্থীদের

কুবি’র বিজয়-২৪ হলে কালচারাল এন্ড স্পোর্টস উইকের উদ্বোধন

চকরিয়ায় স্বামীর নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

দোয়ারাবাজারে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

বেগম জিয়া দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের প্রজ্ঞাপন

বেগম জিয়া দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের প্রজ্ঞাপন

১১ পেজ ও আইডির বিরুদ্ধে ডিবি কার্যালয়ে মামলা করলেন সাদিক কায়েম