নুরুল ইসলাম সুমন
চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা জেলে পাড়ার মাথা থেকে মাতামুহুরী নদী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে এক কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণাধীন আরসিসি ড্রেন প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২১ কোটি টাকার এই উন্নয়ন প্রকল্পের টেকসই ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরকার ও জাইকার অর্থায়নে বড় প্রকল্প
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে “দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প (SCRDP)”–এর আওতায়, বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে।
চুক্তি অনুযায়ী ১.৬০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আরসিসি ড্রেন নির্মাণে ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৭০ টাকা।
প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল, কাজ শুরু হয় একই বছরের ৭ মে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ২৭ অক্টোবর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে মেসার্স ইমু কনস্ট্রাকশন।
সরেজমিনে মিললো অসঙ্গতি
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়—
নির্ধারিত মানের কংক্রিট, রড ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না,
প্রতিটি বালতিতে কংক্রিটের সাথে মাটি মেশানোর অভিযোগ রয়েছে,
বিভিন্ন স্থানে বেস স্ল্যাবে ফাটল,
ড্রেনের গভীরতা ও প্রস্থ চুক্তির তুলনায় কম,
কভার ব্লক কম দেওয়া,
এবং কোথাও কোথাও মাটি সমতল না করেই ঢালাই করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় এলাকাবাসীর আশঙ্কা—টেকসই উন্নয়নের নামে কোটি টাকার সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও ভবিষ্যতে অল্প বৃষ্টিতেই পুরো ড্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তদারকি দুর্বল—অভিযোগ স্থানীয়দের
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকা চকরিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান নিয়মিত মাঠে উপস্থিত থাকেন না। তার অনুপস্থিতির সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছেমতো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“এত কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু কাজের মান নেই। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কয়েক বছরের মধ্যেই এই ড্রেন ভেঙে যাবে।”
প্রকৌশলীর বক্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান বলেন,
“আমরা নিয়মিত কাজ তদারকি করছি। কোথাও অনিয়ম পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঠিকাদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইমু কনস্ট্রাকশনের মালিক কাঞ্চন জয়–এর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের দাবি
স্থানীয়রা অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত, মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতকরণ এবং টেকসই ড্রেন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাদের মতে, এই প্রকল্পের দুর্বল মান শুধু অর্থের অপচয় নয়, বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশগত সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।