রফিকুল ইসলাম জসিম :
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট >
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যর মিছিল। কার্যত লকডাউনে হয়ে পড়ছে পুরো বিশ্ব। আমাদের দেশেও বাড়ছে মৃত্যু ও আক্তান্তের সংখ্যা। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যায়গুলো বন্ধ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হোম কোয়ারেন্টানে দিনগুলো কিভাবে পার
করছে তা জানাচ্ছে নিউজ ভিশন পাঠককে…
মোঃ রাশিদুল ইসলাম
বিভাগঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
অদৃশ্য মরণ ঘাতকের কাছে মানুষ কতটা অসহায় তা বুঝিয়ে দিল করোনা। আমার মনে হয়, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার ‘মেডিসিন’ হলো বাসায় থাকা। ক্যাম্পাসে এখন করোনার ছুটি। চলে এসেছি গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে। সেই থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে বাসাতেই আছি। জীবনের এই নতুন অভিজ্ঞতায় আমার প্রতিদিনের গল্পগুলো প্রায় অভিন্ন। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে দীর্ঘশ্বাসও তত বাড়ছে। নিঃশ্বাস ঘনীভূত হয়ে উঠেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর শঙ্কায়। তবে প্রতি মুহূর্তে এতসব দুঃসংবাদের মাঝে একটি ভালো খবর এই যে, পরিবারের সঙ্গে একটা শ্রেষ্ঠ সময় পার করছি। সেই সাথে নতুন কিছু জানা ও শেখার মাধ্যমে সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। বই পড়ে, টিভি দেখে, স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে মূলত সময় কাটছে। কোন কিছুতেই তাড়া নেই, হাতে অফুরন্ত সময়। আমি অবসর ভলোবাসি, তবে এই ভৌতিক অবসর আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। রাতগুলো যেন একা, খুব আলসেমিতে কাটে। বিশেষ করে, আমার মতো রাতজাগা পাখির জন্য এই রাতগুলো খুব কঠিন। “সুখ তুমি রংধনুর মত রঙ্গিন, স্মৃতি তুমি বেদনার কাছাকাছি চিরদিন। সত্যিই হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ, টিএসসি, অনুষদ ভবন, ডাইনা চত্বর, প্যারাডাইস রোড, খেলার মাঠ আর সুবহান মামার চায়ের দোকানে। সেই সাথে মিস করছি রোজ সকালের ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস টেস্ট, মিডটার্মের সেই প্যারাময় দিনগুলো। ডিপার্টমেন্টে কারণে অকারণে ঘোরাঘুরি, ক্লাস শেষে হঠাৎ করেই মধুপুর এ খেতে যাওয়া, লাস্ট বাসে শহরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। এক কথায় সারাদিন মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়ানো আর দিন শেষে জিয়া হলে ফিরে আসা। এভাবেই কাটতো ক্যাম্পাসে প্রতিটি দিন। সেই দিনগুলো জানি না, আবার কবে ফিরে পাবো। সবার জীবনের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে উপরওয়ালার কাছে একটি সুস্থ-সুন্দর বিশুদ্ধ বাতাসে ভরা পৃথিবীর প্রার্থনা করি সবসময়। সেই ভোরের অপেক্ষায় দিন গুনছি। যেদিন ঘুম ভেঙে উঠে শুনবো পৃথিবীটা সুস্থ আছে। করোনার ঝড় থেমে গেছে।
তানিয়া আফরোজ তমা
বিভাগঃ-ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি
আজ ৩৭ দিন হলো আমার হোম কোয়ারেন্টাইনের।সারা পৃথিবীতে যেভাবে করোনা মহামারি আকার ধারণ করছে তাতে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে বাঁচাতে এখন এটাই সর্বোত্তম উপায়। প্রথম দিকটাই একটু খারাপ লাগলেও এখন অবশ্য মানিয়ে নিয়েছি নিজেদের প্রয়োজনেই,বেচেঁ থাকাই যখন চরম সার্থকতা। পরিবারের সঙ্গে থাকছি,খুটিনাটি সবকিছুতেই সময়টাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি।আম্মুর হাতের রান্নাটা এখন রোজ খেতে পারছি।ব্যাস্ততার জন্য যেইসব পুরোনো বন্ধুবান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ কম হত তাদের সাথে এখন নিয়মিত কথা হচ্ছে।সময়ের অভাবে কিছু কাজ জমে গিয়েছিল সেগুলো করেছি,টুকিটাকি কবিতা লিখছি,কিছু বই পড়েছি-পড়ছি এখনো,এছাড়া পরিবারের সকলের সাথে বসে আড্ডা দেওয়া,মুভি দেখা,পুরাতন দিনের স্মৃতিচারণের মাধ্যমেই সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে।
ব্যস্ত জীবনে আমি মনে করি প্রকৃতি করোনাভাইরাসকে উপলক্ষ করে আমাদের এইটুকু সময় দিয়েছে।
আশা করি সবাই নিজ নিজ ঘরে থাকবেন, সুস্থ ও সচেতন ভাবে কোয়ারান্টাইন পালন করবেন।সৃষ্টিকর্তা খুব দ্রুতই যেন পৃথিবীকে সুস্থ করে দেন।ইনশাআল্লাহ নতুন সূর্যের উদয় হবে,ফিরবো আবার ব্যস্ত জীবনে।
শেখ রাইয়ান উদ্দিন
বিভাগঃফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কথাটি আজ বাধ্য হয়েই আমাদের সকলকে মানতে হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে এক অচেনা অজানা অণুজীবের রাজত্ব। আমরা সামাজিক জীব। আর আজ, আমরাই সামাজিক দূরত্ব বজায় জীবন পার করছি! গত মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে প্রিয় ক্যাম্পাসের পরিচিত স্মৃতিমাখা রাস্তায় আর পা পরছে না। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আর্দশ বাণী শুনতে পাচ্ছি না। প্রিয় বন্ধুদের সাথে আলাপ বন্ধ। অনেক না পাওয়ার ভেতরও সবচেয়ে বড় পাওয়া পরিবার। লক ডাউনের এই সময়টা নিজেকে প্রস্তুত করার একটা উপযুক্ত সময়। সাধারণত আমি কল্পবিজ্ঞানের বই, রহস্য উপন্যাস, অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী আর বিভিন্ন ধর্মীয় বই পড়েই দিন কাটাচ্ছি। এরই সাথে নিজের সাধ্যের ভেতর থেকে অসহায়দের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করে অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মিঠাচ্ছি। যেহেতু হতাশ হওয়া পাপ, তাই আশায় বুক বেঁধে আছি নিশ্চয় একদিন এই দুর্যোগ থেকে আমাদের পরিত্রাণ মিলবে। অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হবো আমরা।
তামান্না সাদিয়া রিমি
বিভাগঃ বাংলা বিভাগ
একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য মাস কেটে গেলে গৃহবন্দী দশায়।শুরুর দিকে উপভোগ করলেও ইদানিং প্রায়ই দম বন্ধ হয়ে আসে।জানিনা এভাবে আরোও কত দিন যাবে! দুপুরবেলা টিভিসেটের সামনে বসলেই চব্বিশ ঘন্টার নিউজ আপডেটে মৃত্যু আর আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান স্কোর দেখে অসহায় লাগে খুব।সবাই বলছে ‘ঘরে থাকুন।নিরাপদ থাকুন।’ অথচ আমার ব্যংক কর্মকর্তা বাবার নিরাপদ থাকবার উপায় নেই!আপনজনদের জন্য সারাক্ষণ এত উৎকন্ঠায় দিন কাটাতে কাটাতে ক্লান্তি আসে!
কতগুলো দিন হলো, স্টেশনের পাশে বই এর দোকান গুলোতে ঘুরে বেড়াই না।নতুন বই এর ঘ্রাণ কি তবে ভুলিয়েই দিবে এই COVID-19? প্রিয় ক্যাম্পাস,প্রিয় মুখগুলো,সেই কর্মব্যস্ত জীবনটা যেন দিনদিন স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। গোটা পৃথিবী থেমে আছে চার দেয়ালের গন্ডিতে।।
এখন পরিবারের সবাইকে সচেতনভাবে আঘলে রাখতেই আমার ব্যস্ত দিন কাটে।দিনে কয়েকবার করে লেবু-গরমপানি,আদা-চা করে খাওয়ানো,নিয়ম করে গরম পানির ভাঁপ দেওয়া।যা করলে উপকার হয় শুনছি সমস্তই করছি।
এই আবদ্ধ জীবনে বই আমার খুব প্রিয় একটা সঙ্গী। জমিয়ে রাখা কিছু বই এখন বাঁধাহীন পড়ে চলেছি।বেঁছে বেঁছে ভালো কিছু সিনেমাও দেখছি।রান্নাঘরেও ভালো সময় কাটে। নতুন নতুন রান্না শিখছি।ধর্ম-চর্চা আমাদের পরিবারে বরাবরই বিদ্যমান।এ সময় সেটা আরোও প্রাণ পেয়েছে,বেড়েছে আয়োজন। সময়ে অসময়ে কবিতা আমাকে ভীষণ টানে।এ দুঃসময়ে পশ্চিমাকাশ ফাঁকা করে দিয়ে যখন সূর্যাস্ত হয়, ঠোঁট দুটো তখনও দু-চার লাইন আশার কবিতা বয়ে বেড়ায়।।
এ বন্দী জীবনে আমরা তো খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। অথচ যাদের উপার্জনের একমাত্র পথও লকডাইনে বন্ধ হয়ে গেছে, তাঁদের কথা ভাবতে গেলে জীবনের প্রতি প্রচন্ড নিরাসক্ত বোধ জন্মায়!
তবু ঘুমন্ত চোখে প্রায়ই স্বপ্ন দেখি একটা বিপদমুক্ত, সুস্থ শাশ্বত সকালের।