মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ ,জবি :
পুরান ঢাকার কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অলি-গলি, ঘোড়ার গাড়ি, শতবর্ষী সব স্থাপনা আর মুখরোচক খাবারের ছবি। রকমারি সব খাবারের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি অলি-গলিতে মেলে বিভিন্ন খাবার হোটেলের দেখা। পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলিতে অবস্থিত ‘বাবুর্চিখানা রেস্তোরাঁ’ তেমনই একটি।
অন্য খাবার হোটেল থেকে বাবুর্চিখানার ভিন্নতার কারণ হলো এর অভ্যন্তরীন সাজসজ্জা । যেখানে সাধারণত খাবার হোটেলগুলোতে দেখা মেলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খাবারের আকর্ষণীয় ছবি সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ‘বাবুর্চিখানা।’ এটি সাজানো হয়েছে ঢাকার ইতিহাসের সাক্ষী এমন সব ছবি দিয়ে। খাবারের টেবিল ঘেঁষে দেয়ালে সাজানো এসব ছবিতে ফুটে উঠেছে ঢাকার প্রায় পুরো ইতিহাস।
বাবুর্চিখানার পুরো দেয়ালজুড়ে আছে ঐতিহাসিক ঘটনা আর স্থাপনার কয়েক শতাধিক ছবি। যে ছবিগুলো আপনাকে নিয়ে যাবে ঢাকার প্রাচীন সময়ে, ভাবিয়ে তুলবে প্রিয় ঢাকার দ্রুত বদলে যাওয়ার দৃশ্য।
বাবুর্চিখানার দু’পাশের দেয়ালজুড়ে জায়গা করে নিয়েছে লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল,বাহাদুর শাহ পার্ক, মিডফোর্ড, বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ , ঢাকা গেট, ১৮ শতকের নিউমার্কেট, রূপলাল হাউস,লালকুঠি, তৎকালীন সদরঘাট, বাদামতলী ঘাট, লোহারপুল, ধোলাইখাল, পুরান ঢাকার মহল্লার দৃশ্য, বর্ধমান হাউজের প্রাথমিক অবস্থাসহ ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর প্রাচীন ছবি। এছাড়াও আছে পুরনো চিড়িয়াখানা, পুরনো রেল স্টেশন হারিয়ে যাওয়া স্থাপনার ছবি।
এবার আসা যাক খাবার প্রসঙ্গে। বাবুর্চিখানার খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগির রোস্ট-পোলাও, মুরগির কোর্মা-পোলাও, টার্কি মুরগির তেহারি, মুরগির তেহারি স্পেশাল, জর্দা এবং শাহী জর্দা। বাবুর্চিখানার বিশেষ আকর্ষণ ৪৫ টাকার মুরগির তেহারি। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিনই ভোজনরসিকরা আসেন বাবুর্চিখানার তেহারির স্বাদ নিতে। কেবল দামের কারণেই নয়, স্বাদেও অসাধারণ এই বিশেষ তেহারি।
কথা হলো হোটেলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী শামীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে হোটেল সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তখন বর্তমান ডেকোরেশন করা হয়। মূলত আমার ভাতিজা রেজাউল হোসেনের পরিকল্পনায় এই ডেকোরেশন করা হয়েছে। সে ঢাকাকে খুব ভালোবাসে। বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকার পুরনো ছবি সংগ্রহ করেছে সে। নিজের আইডিয়ায় ছবিগুলো সংগ্রহ করে এভাবে তুলে ধরেছে।’
৪৫ টাকার তেহারীর বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম বলেন, ‘বাবুর্চিখানার বিশেষত্ব হলো আমরা খাবারে খুব সামান্য তেল ব্যবহার করি। এতে যেকোনও বয়সী মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পারেন। এছাড়াও আমাদের দোকানটি যেখানে অবস্থিত এর আশেপাশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই আমরা ৪৫ টাকা মূল্য রেখেছি।’