রবিউল হাসান
শৈশবের হামাগুড়ি চলা থেকে যখন একটা শিশু দাঁড়াতে শেখে তখন থেকেই একটু একটু বুঝতে থাকে তার চারপাশের জগৎটাকে।বেড়ে উঠা সে শিশুর শুরু হয় স্বপ্ন দেখা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যখন একটা শিশু পিতামাতা বা বড় জনের হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পৌঁছায়,তখন চোখে মুখে তার নানা স্বপ্ন ভাসতে শুরু করে।আজকে আমরা এমন এক স্বপ্নবাজ কিশোরকে পরিচয় করিয়ে দেব আপনাদের কাছে।
রাসেল তালুকদার। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ইছাপুর গ্রামে বেড়ে উঠা ফজলুল কাদের চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা সবে মাত্র শেষ করেছে। এবার তার এসএসসি পরীক্ষায় বসার পালা।এমনই সময়ে বিশ্বজুড়ে এলো করোনা পরিস্থিতি। সারা বাংলাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে রাসেলের স্কুল ও বন্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় রাসেলের স্বপ্নের পথ চলা।লকডাউনে ঘরবন্দী রাসেল পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকে।তাকে যে পড়তেই হবে।ছেলেবেলার স্বপ্ন তার,পড়াশোনা করে অনেক বড় কিছু হবে।বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে,পরিবারের দায়িত্ব নেবে।
কিন্তু হায়! রাসেলের বুক ভরা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রতীক্ষা শেষই হচ্ছে না। সারাদেশে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান সচল হয়ে পড়েছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নাম নিশানা নাই।
এদিকে দুঃখ কষ্টে অতিবাহিত রাসেলের মধ্যবিত্ত পরিবার রাসেলকে বোঝা মনে করা শুরু করেছে।পরিবার এবং স্বজনদের তিরস্কার রাসেলের স্বপ্ন জয়ের পথে অন্তরায়। সহ্য শক্তির শেষ সীমায় রাসেল বেরিয়ে পড়ে কাজের নেশায়।
অবশেষে ভাগ্যে জুটল সিমেন্ট বোঝাই এর কাজ। তাও কম বা কিসে! হাসিমুখে মেনে নিল ভাগ্যকে।অবশ্যই রাসেলের মতো বড় বড় মামা-চাচাহীন মধ্যবিত্তদের এর চেয়ে বেশি কি বা করার আছে।
রাসেল প্রতিদিন সিমেন্ট বোঝাই এর কাজ করে উপার্জিত টাকায় পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।তার মতো দেশের আনাচে কানাচে হাজারো শিক্ষার্থী আছে প্রতিনিয়ত যাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে বেদনার পাহাড় গড়ে উঠছে।কেও কি বলতে পারে, এই স্বপ্নবাজ কিশোরগুলোর স্বপ্নের পূর্ণতা পাবে কি না!তারা কি ফিরতে পারবে তাদের স্বপ্নের ক্যাম্পাসে,যেখান থেকে পূর্ণতা পাওয়ার কথা তাদের জীবন স্বপ্নের? কাজেই এখনই সময় শিক্ষা ব্যবস্থার অধঃপতনের লাগাম টেনে ধরার।
রাসেলের মতো স্বপ্নবাজ তরুণদের স্বপ্নগুলো বাঁচিয়ে রাখার।শিক্ষা নামক মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাজপথে আন্দোলন করতে হয়,ক্যাম্পাস খোলার জন্য দিনের পর দিন আন্দোলন, সংগ্রাম করতে হয়,এ থেকেই বুঝা যায় শিক্ষা ব্যবস্থার কতটুকু অবনতি হয়েছে। সুতরাং আর বিলম্ব না করে শিক্ষার্থীদের ভ্যাক্সিন প্রদান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো খুলে দেয়া জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।