বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাসাদ অবস্থিত ব্রুনাইয়ে। এই প্রাসাদ নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহের শেষ নেই। এর নাম ‘ইসতানা নুরুল ইমান’। আর এ প্রাসাদের মালিক দেশটির সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ।
ব্রুনাইয়ের রাজধানীর কাছাকাছি ‘বন্দর সেরি বেগাওয়ানে’ এই প্রাসাদ অবস্থিত। এখান থেকেই সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ রাজকার্য পরিচালনা করেন। তিনি ব্রুনাইয়ের ২৯তম সুলতান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাসাদের তকমা পাওয়ার পাশাপাশি এটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ইসতানা নুরুল ইমানের ইতিহাস
এরপর ১৯৭০ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ব্রুনাইয়েল তৎকালীন তৃতীয় সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন এবং তার ছেলে বর্তমান সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ একটি প্রসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
১৯৮১ সালে নির্মিত এই প্রাসাদের পেছনে খরচ হয় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার। তবে এ সময়ও ব্রিটিশরা পুরোপুরি ব্রুনাই ছেড়ে যায়নি। ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের কাছ থেকে পুরোপুরি স্বাধীনতা লাভ করে ব্রুনাই। এ সময়ের মধ্যে ওই প্রসাদের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। বলকিয়াহ তার প্রাসাদকে “ইসতানা নুরুল ইমান” নামে অভিহিত করেন যার অর্থ “বিশ্বাসের আলোর প্রাসাদ”। এই প্রসাদ নির্মাণের মাধ্যমে তিনি নতুন যুগের সূচনা করেন।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই প্রাসাদে যেসব সুবিধা রয়েছে
ইসতানা নুরুল ইমান ২,০০,০০০ (দুই লাখ) বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং ১ হাজার ৭৮৮টি কক্ষ রয়েছে। চমৎকার এই প্রাসাদটিতে ২৫৭টি বাথরুম, একটি ব্যাঙ্কুয়েট হল যা ৫ হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করার ক্ষমতা রাখে, ১১০টি গাড়ির পার্কিং স্পেস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২০০টি পোলো ঘোড়ার ঘর। পাঁচটি সুইমিং পুল, একটি হেলিপ্যাড এবং একটি জমকালো মসজিদ রয়েছে। প্রাসাদের মসজিদে একসঙ্গে ১,৫০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি ৩৮ ধরনের মার্বেল দিয়ে তৈরি এবং ৪৪টি সিঁড়ি রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসিক এলাকা
ইসতানা নুরুল ইমান নির্মাণ করতে সময়ে লেগেছে দুই বছর। বর্তমানে এর মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসিক প্রাসাদ ইসতানা নুরুল ইমান হলেও এটি নির্মাণ ব্যয় সবচেয়ে বেশি নয়। বিশ্বে প্রসাদ নির্মাণে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে বাকিংহাম প্যালেস নির্মাণে। এটি নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ২৯ কোটি মার্কিন ডলার।
প্রাসাদের নকশা
লিওনার্দো লোকসিন দ্বারা নকশা করা বাড়িটি ‘দ্য লাইট অফ ফেইথ প্যালেস’ নামেও পরিচিত। প্রাসাদের সম্মুখভাগ সাদা, রয়েছে সোনার গম্বুজ (প্রাসাদের গম্বুজটি ২২ ক্যারেট সোনা দিয়ে ঘেরা) এবং খিলানযুক্ত ছাদগুলো আশ্চর্যজনকভাবে মালয় রীতিনীতির সাথে ব্রুনাইয়ের ইসলামিক সংস্কৃতিকে মিশ্রিত করে। খুয়ান চিউ যিনি দুবাইয়ের বুর্জ আল আরবের উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন, তিনি প্রাসাদের অভ্যন্তরটির নকশা করেছিলেন। বিশ্বের বৃহত্তম প্রাসাদ সাজানোর জন্য ব্যবহৃত প্রাথমিক উপকরণ হল সোনা এবং মার্বেল।
প্রতিদিনই আয়োজন লেগে থাকে ইসতানা নুরুল ইমানে
ব্রুনাইয়ের রয়েল পরিবারের প্রধান বাড়ি এটি। সরকারি সব ধরনের কার্যক্রম এই প্রাসাদ থেকেই পরিচালিত হয় এবং এটিকে সুলতানের হেডকোয়াটার্স বলা হয়। রাজপরিবারের অনেক সদস্যের সরকারি ভূমিকা থাকায় তারা প্রাসাদে থাকেন এবং কাজ করেন। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসও এখানে অবস্থিত। এছাড়া আন্তর্জাতিক নেতাদের ব্রুনাইয়ে আমন্ত্রণ জানানো হলে এই প্রসাদেই রাখা হয়।
বছরে তিন সময়ে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর মধ্যে একটি রমজানের সময়। এ সময়ে সর্বসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়। বাকী দুটি সময় হলো বড় কোনো অনুষ্ঠান হলে এবং ঈদুল ফিতরে।