মোস্তাকিম হোসেন,হিলি স্থলবন্দর সংবাদদাতা:
এসিডদগ্ধ নারীরা সমাজের বোঝা নয়। তারাও আট-দশ জন স্বাভাবিক নারীর মতো বাঁচতে চায়। সমাজ আজ কোথায়,তারা পায় না কেন যথাযথ মর্যাদা। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও পাচ্ছে না যোগ্যস্থান এসিড দগ্ধ জলি আক্তার তুলির মতো সমাজের অনেক তুলি রয়েছেন। তাদের ও স্বাধ জাগে অন্যান্য মেয়েদের মতো ঘর বাঁধতে। এসিডদগ্ধ অভিশাপ জীবনে পাচ্ছে না তারা মাথা গোজার একটু ঠাই। শত বাধাবিঘœ অতিক্রম করে বি,এ পাশ করে একটু মাথা উঁচু করে বাঁচার তাগিদে তুলি ধর্না দিয়ে ঘুরছে বিভিন্ন মহলে একটি চাকরীর আসায় ।
জলি আক্তার তুলি বলেন, আমি অতি গরীব ঘরের মেয়ে। এক ভাই এক বোন। আমি ছোট থেকে হিলি হাসপাতাল মোড়ে মৃত ইদ্রিস আলী বাড়িতে থাকতাম আমার নানা মারা যাওয়ার পর মামা সাইদুল ইসলাম এর বাড়িতে থাকি। আমি তখন এইচএসসি পাশ করেছি,৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সাল আমার জীবনে উঠে কালবৈশাখী ঝড়। নানা বাড়ির একটি ঘরে শুয়ে ছিলাম- এমন সময় একজন বখাটে ঘরের ছাপরায় উঠে টিনের ফাঁক দিয়ে আমার শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এসিডে পুড়ে যায় আমার গলা থেকে কোমড় পর্যন্ত। বিদেশী একটি সংস্থার খরচে চিকিৎসা শুরু হয় আমার। এসিড নিক্ষেপকারী আটক হয়। এখনও মামলা চলমান রয়েছে।
আসামী জামিনে বেরিয়ে এসে প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দির্ঘদিন এসিডে পোড়া শরীরের জ্বালা নিয়ে অতিবাহিত করেছি হাসপাতালে। গলা থেকে কোমড় পর্যন্ত ঝলসে গেছে। অনেক যন্ত্রনা আর ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে লেখাপড়া আমি বাদ দেইনি।
১৫ সালে এইচএসসি ও ১৮ সালে বি,এ পাশ করেছি। তার কষ্টের গল্প বলতে বলতে কেঁদে উঠলো। আক্ষেপে বলতে শুরু করল,আমি এসিড দগ্ধ নারী তাই সমাজ সংসারে কোন স্থান বা মুল্যায়ন পাচ্ছি না। বিয়ের বয়স হয়েছে, বাবা-মার মাথায় বোঝা হয়ে গেছি। তারা বিয়ে দিতে চায়। একের পর এক বিয়ের ঘর আসে,কিন্তু বিয়ের ঘর ভেঙ্গে যায়। কেননা আমি এসিড দগ্ধ মেয়ে। কান্নার গতি তুলির আরও বেড়ে যায়,বিদ্রহীকন্ঠে তুলি বলে আমি আর কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এই এসিডদগ্ধ শরীর নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। তাই ১৮ সালে বিএ পাশ করে একটি চাকরীর জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এ পথ চলা যেন শেষ হচ্ছে না আমার।
তুলির মামা সাইদুল ইসলাম জানান, তুলি আমার আদরের ভাগ্নি। ছোট থেকে সে আমাদের বাসায় থাকে। একজন বখাটে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারনে তার উপর এসিড নিক্ষেপ করে। দির্ঘ তিন মাস তাকে ঢাকায় বিদেশী (এএফএফ) একটি সংস্থার সাহায্যে এসিড সার্ভায় হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়।
হাকিমপুর (হিলি) মহিলা ডিগ্রী কলেজের সরকারী প্রিন্সিপাল মোছা; কামরুন্নাহার রোজি বলেন, তুলিকে আমি ছোট থেকে চিনি, সে আমার বাড়ির পাশে তার নানার বাড়িতে থাকে। সে জয়পুরহাট জেলার সদর থানার চিরলা গ্রামের জহির উদ্দিনের ছোট মেয়ে। খুব ন¤্র ভদ্র ও অমায়িক প্রকৃতির মেয়ে সে। তার কষ্টগুলো আমাকে অসহনীয় করে তুলে। অনেক কষ্ট করে সমাজের সাথে লড়াই করে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছেন তুলি। আমাদের সবার উচিৎ এই অবহেলিত মেয়েটার পাশে দাঁড়ানোর। আমি আশা করছি সমাজের বৃত্তবান ও সরকার যেন অসহায় এসিডদগ্ধ তুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।