নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে সারাদেশের শনিবারের (৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠেয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবিসহ সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) গণিত বিষয়ের পরীক্ষা ছিল।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন শনিবার রাত দশটার দিকে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘সব বোর্ডের জেএসসি ও জেডিসি পরীাক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: ইউনুস বলেছেন, সব সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শনিবারের জেএসসি পরীক্ষাটি ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার গণিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: কামাল উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, শনিবারের স্থগিত করা জেডিসি পরীক্ষাটি ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে সাতটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শনিবার (৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠেয় সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) সম্মান দ্বিতীয় বর্ষ এবং এলএলবির পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফয়জুল করিম শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়ে বলেন, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের দ্বিতীয় বর্ষ অনার্স পরীক্ষা দুপুর ১টা থেকে সারাদেশের ২৯৮টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ৩১টি বিষয়ে ৭৯৭টি কলেজের ৪ লাখ ৩২ হাজার জন পরীক্ষার্থী।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার খাতা, প্রশ্নসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিরাপদ স্থানে রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। সব সরঞ্জাম নিকটস্থ ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে বা বড় ভবনে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। একাধিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খবরে বলা হয়, শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটার এলাকায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এদিকে বুলবুলের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে কক্সবাজারে ৪ নম্বর সংকেত অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসায় সারাদেশে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার এ ঘোষণা দেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার (০৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের কাছ দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার ভোর থেকে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিমি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজ এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিন্মঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট ২২টি মন্ত্রলণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০