মুহা. ইকবাল আজাদ, ঢাবি প্রতিবেদক।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর প্রেয়সীর সাথে দেখা। অভিমান-অভিযোগে ভরা এত দিনের শূন্যতা। আক্ষেপ কাটিয়ে আবার দুজনের নতুন সম্পর্ক। একসাথে দীর্ঘপথ চলার দৃঢ় সংকল্প। হাতে হাত রেখে পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছে শপথের পথ। প্রেয়সীর এতসব আবদার শুনতে শুনতে দম ফুরালো বার্ষিকীর রথ। তাতে ভুল-ভ্রান্তি জমলো দুজনের, অপূর্ণ রয়ে গেলো স্বপ্নের সাজানো শহর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ডাকসু’ হারিয়ে যাওয়া সেই প্রেয়সীর মতো। দীর্ঘ ২৮ বছর পর তার সাক্ষাৎ পেয়েছে শিক্ষার্থীগণ। তাতে জমেছে অপূর্ণতা আর অভিযোগের স্তুপ। গত বছর সব প্রতীক্ষা কাটিয়ে হয় ডাকসু নির্বাচন। একবছরের জন্য নির্বাচিত হোন বিভিন্ন আসনের প্রতিনিধিগণ। যে যতটুকু পেরেছেন, নিজের দায়িত্ববোধ থেকে ২৮ বছরের আক্ষেপ কিছুটা হলেও গুছিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন। বছর শেষে ডাকসুর সদ্য সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন নিজের স্বচ্ছতা পরিষ্কার করেছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য তোলা বাজেট ব্যয়ের পুরো হিসাব তুলে ধরেছেন। ১৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া এই সম্পাদক বাজেট থেকে তুলেছেন মাত্র সাড়ে ৪ লাখ। গতকাল নিজের ফেসবুকে আইডিতে অর্থ ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিয়েছেন। ফেসবুকে আইডিতে করা আখতার হোসেনের পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলোঃ
ডাকসুতে সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে আমার উত্তোলিত বাজেট ব্যয়ের হিসাবঃ
সবমিলিয়ে ৪,৫০,০০০ টাকা উত্তোলন করেছিলাম। প্রথম দফায় ১ লক্ষ এবং দ্বিতীয় দফায় সাড়ে তিন লক্ষ। যার সবটাই খরচ করেছি। সেইসব খরচের খাত এবং পরিমাণ বর্ণনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
১) Awareness on Cyber Safety & 999ঃ মেয়েদের পাঁচটি হলে পাঁচদিন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে দুইদিন, সপ্তাহব্যাপী এই এ্যাওয়ারনেস কার্যক্রমের সাথে ছিলো ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯। দীর্ঘদিনের কষ্টের শেষে একেবারে অনুষ্ঠান শুরুর দিন-ই সেটা বানচাল করা হয়। সেদিন-ই খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম ডাকসুতে আমার প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করায় প্রতিবন্ধকতা কতোটা প্রকট হবে। এতোসব প্রস্তুতি সত্ত্বেও শুধুমাত্র ছাত্র অধিকার পরিষদ প্যানেলের একজন হওয়ায় সেই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে পারিনি যদিও এরমধ্যেই কিছু খরচ হয়ে গিয়েছিলো। এভাবে এই কার্যক্রম বন্ধ করাতে তাদের কী লাভ ছিলো জানা নেই। তবে শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু জানা হয়েছিলো। অপচয়ের হিসেব,,,
ক) ভিডিওগ্রাফি ও পোস্টার ডিজাইনিং ৬০০০৳
খ) পোস্টার তৈরী ৫০০০৳
গ) পোস্টারিং ২০০০৳
ঘ) সংবাদ সম্মেলন (গেস্টদের আপ্যায়ন, সাংবাদিকদের আপ্যায়ন, ব্যানার) ২০০০৳
ঙ) ব্যানার ১০০০৳
চ) স্ন্যাক্স ৬৩০০৳
মোট ২২,৩০০৳
২) DUCSU Admission Help Camp’19ঃ
দূরদূরান্ত থেকে আগত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য নেয়া এই উদ্যোগে ভর্তিপরীক্ষা চলাকালীন সময়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনায় একেকদিন একেক পরিমান ব্যয় হয়েছে৷ সেটা নিন্মরুপঃ
ক) টিশার্ট তৈরী (২০০*১২০৳) = ২৪০০০৳
খ) আইডি কার্ড ৪৫০০৳
গ) সারপ্রাইজ গিফ্ট ( পাঁচটি বই) ১০০০৳
পাঁচদিনের সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবারে ব্যয় হয় যথাক্রমে,,
১ম দিন (১৩/০৯/১৯) সকালের নাস্তায় ব্যয় হয় (চাওমিন ১৫০টি*৪০৳)=৬০০০৳। দুপুরের খাবার ছিলো তেহারী১২০ প্যাকেট*৯০৳=১০৮০০৳
২য় দিন(১৪/০৯/১৯) এইদিন সবথেকে কমসংখ্যক ভলান্টিয়ার ডাকা হয়েছিল। খরচও কম ছিলো। সকালের নাস্তায় এবং দুপুরের খাবারে ব্যয় হয়েছে সমুসা+ভেজেটেবল রোল ১৬০*৩৫৳=৫৬০০৳ এবং পেপছি ৮০টি*১৭৳= ১৩৬০৳
৩য় দিন (২০/০৯/১৯) সকালের নাস্তায় ব্যয় হয় ডিম+কলা+কেক১০০*৩০৳=৩০০০৳, দুপুরে ব্যয় হয় আপেল কিনতে ২১৬০+দই ৩০০০৳
৪র্থ দিন (২১/০৯/১৯) সকালের নাস্তায় ব্যয় হয় ৩০০০৳ এবং দুপুরে খিচুড়ী ৩০০০+ ডিউ ১৪২৫৳
৫ম দিন ((২৭/০৯/১৯) সকালের নাস্তায় ৩০০০৳ দুপুরে খিুচুড়ী ৩০০০+ মিষ্টি ১৮০০+ ডিউ ১৪৫০৳
মোট খরচ হয় ৭৮,০৯৫৳। প্রথম দফায় উঠানো ১ লক্ষ টাকা এইসব কাজে ব্যয় হয়।
৩) আত্মহত্যা ও মাদক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনঃ আত্মহত্যা ও মাদক প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্ত্বরে একটি উন্মুক্ত ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয় ১২ ডিসেম্বরে। সেই ক্যাম্পেইনে মনোবিশারদদের আলোচনার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম সোসাইটি, নাট্য সংসদের সচেতনতামূলক অভিনয় প্রদর্শিত হয়। এতে খরচ হয়,
ক) ব্যানার (টিএসসি, ডাকসু এবং অনুষ্ঠানস্থের জন্য) ৪৯৬৬৳
খ)মাইম টিম ৭০০০৳
গ) নাটক টিম ৬০০০৳
ঘ) সাউন্ড, স্টেজ, সজ্জা ২৫,০০০৳
ঙ)ক্রেস্ট ৪৮০০৳
চ)নাস্তা ২০০০৳
ছ) যাতায়াত ও অন্যান্য +/- ৪৫০০৳
মোট ৫৪,২৬৬৳
৪) Skill Development Initiative: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত নবীন শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা, বিশেষত নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেবার প্রচেষ্ঠার অংশ হিসেবে ৮ ফেব্রুয়ারী’২০ এ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে এই প্রোগ্রামটি করা হয়। এতে খরচ হয়
ক) ব্যানার ৪৫৫০৳
খ)অডিটোরিয়াম ভাড়া ৮০০০৳
গ)সকালের নাস্তা ৬০০০৳
ঘ)দুপুরের খাবার ২৪,৩০০৳
ঙ)ক্রেস্ট ৩২০০৳
চ) অফিস ভলান্টির ১০০০৳
ছ) স্ট্যান্ড, স্যান্ড ব্যানার ৮৮০৳
জ) যাতায়াত ও অন্যান্য +/- ৪০০০৳
মোট খরচ হয় ৫১,৯৩০৳
৫) সার্টিফিকেট বিতরণঃ
ডাকসু এডমিশন হেল্প ক্যাম্পে নিয়মত অংশ নেয়া ১০০ জন শিক্ষার্থীকে ডাকসুর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয় ১৮ ফেব্রুয়ারী’২০ এতে খরচ হয়
ক) সার্টিফিকেট (১০০*২২৳) ২২০০৳
খ) ক্রেস্ট (১০০*১৪০৳) ১৪০০০৳
গ) বৈকালিক নাস্তা (চিকেন স্যান্ডউইচ) ৩৫০০৳
মোট খরচ হয় ১৯,৭০০৳
৬) First Aid Training কর্মশালাঃ
ডাকসু এবং বিস্তার ট্রাস্টের যৌথ আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিকিৎসা বিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞান বিস্তারের লক্ষ্যে ৬ মার্চ’২০ এ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অধিটরিয়ামে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে খরচ হয়,
ক) ব্যানার ৪৪২০৳
খ) সার্টিফিকেট ৫৮৫০৳
গ) কলম ১০০০৳
ঘ) নোটপ্যাড ৫৭৫০৳
ঙ) নাস্তা ৯৭৪০৳
চ) স্ট্যান্ড ৬০০৳
ছ) পোস্টার ৩৯০০৳
জ) লিফলেট ১২০০৳
ঝ) বুথ ৩২৯০৳
ঞ) অডিটোরিয়াম ৫০০০৳
ট) পোস্টারিং ১৫০০৳
ঠ) যাতায়াত ও অন্যান্য ৪০০০৳
মোট খরচ হয় ৪৬,২৫০৳। যা সমানভাবে ভাগ হওয়ায় ডাকসুকে ২৩,১২৫৳ বহন করতে হয়।
৩য় থেকে ৬ষ্ঠ খাতে মোট ব্যয় হয় ১,৪৯,০২১৳
২য় ধাপে উঠানো সাড়ে তিন লক্ষ টাকার মধ্য হতে উপর্যুক্ত প্রোগ্রামসমূহে দেড় লক্ষ এবং অবশিষ্ট ২ লক্ষ টাকা করোনা মহামারীতে আকস্মিকভাবে বিপদাপন্ন হয়ে পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষার্থীকে সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে ডাকসুর উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে প্রত্যেকের ডিটেইলস সংগ্রহ করা হয়েছে এবং পাবলিক প্রচারণা এড়াতে ডাকসুর আর্থিক কমিটির কাছে বিস্তারিত হস্তান্তর করা হবে।
ডাকসুতে সব মিলিয়ে ১৩ লক্ষ টাকার বরাদ্দ পেয়েছিলাম। একে তো ১৫ দিনের মধ্যে বাজেট নির্ধারিত হবার গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাজেট এসেছিলো তিনমাস পর৷ তারউপর বাজেটের কাগজে অনুমতি পেতে অন্যরকম ধকল সামলাতে হয়েছে। প্রথমবার বাজেটের অনুমতি নিতে এজিএসের থেকে সরাসরি প্রত্যাখাত হয়ে, জিএসের টেবিলে এসেছি সেখানেও এক নারী সদস্য জিএসকে বারংবার এজিএসের স্মরণ দিচ্ছিলেন। জিএসের রুমভর্তি এতোগুলো লোকের সামনে কী বিব্রতকর অবস্থায় পরেছিলাম সেটা উপস্থিত ব্যক্তি মাত্র জেনে থাকবেন৷ তবুও সেদিন প্রথম দফার বাজেট পেয়েছিলাম। কিন্তু, যে সাইবার সেইফটির প্রোগ্রামের জন্য বাজেট নেয়া সেটাই করতে দেয়া হয় নাই। একটা প্রচ্ছন্ন থ্রেট ছিলো। তুমি চাইলেই পারবা না। এরপর দ্বিতীয় ধাপের বাজেটেও স্বাক্ষর পেতেই দুইমাস শেষ, এবং তখন ডাকসুর ফান্ডের প্রথমার্ধের এলোটেড টাকা শেষ। টাকা এলোটেড হয়ে, প্রসিডিওর শেষ হতেই আরও মাসখানেকের বেশি। আর বাজেটও থেকে গেলো৷ আরও কিছু প্রোগ্রাম করার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু, বাজেটই ঠিক সময়ে হাতে পেলাম না। দিনশেষ এতে কার লাভ হলো? সাইবার সেইফটির প্রোগ্রামটা বানচাল করে আদতে কী উপকার হলো?
এতোসব প্রতিকূলতার মাঝখান থেকে চাওয়া অনকে কিছুই করতে পারিনি। তবুও যেটুকু সুযোগ পেয়েছি এতেই স্বচ্ছ থাকবার চেষ্টা করেছি। ভুলত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা করবেন। আর ভালোর জন্য আপনাদের দোয়া চাই।
(বি.দ্রঃ কারো কোনো বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে জানাবেন, যথাসম্ভব উত্তর করার চেষ্টা করবো। আর ক্যাম্পাস খুললে সামনাসামনি-ই নাহয় আলাপ হবে।)
এই মহামারীর থেকে মুক্তি মিলুক। ক্যাম্পাসটা আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠুক এই কামনা।