তাওহীদ জিহাদ| ঢাকা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সরকারি গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতা মাহীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার আতিকুর রহমান গাল্টু বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী আতিক জানান, ১৫ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৫ মিনিটে ছাত্রদল নেতা মাহী তার মোবাইলে কল করে জরুরি কথা বলার কথা বলে ছাত্রাবাসে ডেকে নেন। ক্লান্ত অবস্থায় যেতে অস্বীকৃতি জানালেও তাকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়।
ছাত্রাবাসে পৌঁছে আতিক দেখতে পান, তার দুই সহপাঠী ও ১৩–১৪ জন সিনিয়র সেখানে অবস্থান করছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়—তারা ছাত্রলীগ করে এবং একটি হারানো মোবাইল চুরি করেছে। এরপর শুরু হয় বিভ্রান্তিমূলক স্বীকারোক্তির নাটক ও নির্যাতন।
আতিক বলেন, “তারা একেকজনকে আলাদা রুমে নিয়ে বলে—তোর বন্ধুরা স্বীকার করেছে তুই মোবাইল চুরি করেছিস। এভাবে একে-অপরের নামে স্বীকারোক্তি বলে আমাদের মানসিক চাপে ফেলে।”
ভুক্তভোগী জানান, রাতভর এবং পরদিন শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় তিনি তিনবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
“আমি তাদের বলি, আমি এতিম, আমার মা ছাড়া কেউ নেই। আমাকে মারবেন না। আমি কোনো দোষ করে থাকলে প্রশাসনকে জানান। কিন্তু তারা থামে না। তখন একজন বলে, ‘আবরারের কথা মনে আছে?’ এই কথাটা শুনে আমি নিশ্চিত হয়ে যাই, হয়তো এবার আমাকে শেষ করেই ছাড়বে,” — বলেন আতিক।
পরদিন দুপুরে জ্ঞান ফিরে সহপাঠীর সহায়তায় অন্য একটি রুমে যান তিনি। সেখানে সহপাঠীদের ফোনে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে পুলিশে ফোন দেওয়া হলে সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আতিক মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ শুরুতে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ট্যাগ সদস্যদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গ্রহণ করে এবং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলে।
ইনস্টিটিউট খোলার পর দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রশাসন আতিককে নির্দোষ ঘোষণা করে এবং অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
তবে আতিক জানান, প্রথমে তিনি মানবিক বিবেচনায় অভিযুক্তদের ক্ষমা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, তার আগেও ‘কুরবান’ নামের আরও এক শিক্ষার্থী একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
“আমি সিদ্ধান্ত নিই—আবরার, তোফাজ্জল, সাম্যদের মতো আর কাউকে যেন এভাবে প্রাণ দিতে না হয়। এই সন্ত্রাসের বিচার হতেই হবে,” — বলেন আতিক।
ভুক্তভোগী ও তার পরিবার অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।