ঢাকামঙ্গলবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  1. সর্বশেষ

গৌরবের ৬০ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

চবি প্রতিবেদক

আজ ১৮ নভেম্বর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গৌরবের ৬০ বছরে পা রাখল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অদ্বিতীয় ক্যাম্পাস। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে সুদীর্ঘ ৫৯ বছর পূর্ণ করে ৬০ বছরে পা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই পথচলায় নানা অর্জন, উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ দেশের শিক্ষাখাতে অবদানের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে পাহাড়, ঝরনা আর সবুজের ক্যাম্পাসটি।

সূচনাকালীন বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি– ৪টি বিভাগ, ৭জন শিক্ষক ও ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১০টি অনুষদ, ৪৮টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। অধ্যয়ন করছে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী, রয়েছে ৯২০ জনের অধিক শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে ১৩টি আবাসিক হল (ছেলেদের ৮টি, মেয়েদের ৫টি) ও একটি ছাত্রাবাস।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:

বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে চট্টগ্রাম বিভাগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় নগরীর বাসিন্দারা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব অনুভব করেন। ১৯৪০ সালের ২৮ ডিসেম্বর কলকাতায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সম্মেলনে মাও. মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী সভাপতির ভাষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি’ নির্মাণের কথা উত্থাপন করেন। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনশিক্ষা উপপরিচালক মোহাম্মদ ফেরদাউস খান এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেন। একই বছর ১৯৬২ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় খান বাহাদুর ফজলুল কাদের চৌধুরি এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাধারণ প্রতিশ্রুতি দেন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেন।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের স্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হওয়ার পর, ১৯৬১ সালের ৭ মে চট্টগ্রামবাসীর উদ্যোগে স্থানীয় মুসলিম হলে এক প্রতিবাদ সভা করা হয়। ওই সভায় ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দেন এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। পরে ১৯৬২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ’ নামে আরেকটি পরিষদ গঠিত হয়। এই সব সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও স্মারকলিপি প্রদান, পত্রপত্রিকায় বিবৃতি, সেমিনার হতে থাকে। ১৯৬৩ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়।

১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর খান বাহাদুর ফজলুল কাদের চৌধুরি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার মনোনীত হন। প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে স্থাপনের পরিকল্পনা করা হলেও ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে খান বাহাদুর ফজলুল কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ টি এম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ১৯৬৪ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করা হয়।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য ডক্টর এম ওসমান গণিকে চেয়ারম্যান এবং ডক্টর কুদরাত-এ-খুদা, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, এম ফেরদৌস খান ও ডক্টর মফিজউদ্দীন আহমদকে সদস্য নির্বাচন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’ গঠিত হয়। এই কমিশন সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার নির্জন পাহাড়ি ভূমিকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হিসেবে সুপারিশ করে। ১৯৬৪ সালের ১৭-১৯ জুলাই পাকিস্তানের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট খান বাহাদুর ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইসলামাবাদে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের সভায় ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’-এর সুপারিশের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ১৯৬৪ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর রাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের প্রাক্তন কিউরেটর ড. আজিজুর রহমান মল্লিককে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প-পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এরপর ড. আজিজুর রহমান চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর সড়কের ‘কাকাসান’ নামের একটি ভবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের অফিস স্থাপন করেন। ড. আজিজুর রহমান মল্লিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন।

১৯৬৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে তৎকালীন পাকিস্তান শিক্ষা পরিদপ্তরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প অফিসে বদলি করা হয়। স্থপতি মাজহারুল ইসলামের ‘বাস্তুকলা’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১টি দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন, বিভাগীয় অফিস, শ্রেণিকক্ষ ও গ্রন্থাগারের জন্য একতলা ভবন তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষক ও ছাত্রদের আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়। অবশেষে ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এজন্য প্রতিবছর ১৮ নভেম্বর ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ পালিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ও নানা অর্জন:

মহান মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পরে ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. আজিজুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। ২৪ মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে প্রাক্তন ছাত্র সমিতির আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আয়োজন করা হয় গণসংগীত। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখল করে এবং ৯ মাস তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। পাকিস্তানি সেনারা এখানে তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানিয়েছিল। পরে যুদ্ধের শেষে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায় এবং ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের ৯ দিন পর ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানিদের আওতামুক্ত হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, ১২ জন শিক্ষার্থী এবং ৩ কর্মকর্তা নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। এই ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে, মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে জিরো পয়েন্ট চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ, যা ‘স্মরণ চত্বর’ নামে পরিচিত।

চট্টগ্রাম নগর থেকে চবি ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন রয়েছে ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চবিতে রয়েছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার। এতে রয়েছে সাড়ে ৩ লাখের বেশি বই, দুর্লভ সংগ্রহশালা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ ও অধ্যাপনা করেছেন। যার মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং একাধিক একুশে পদক বিজয়ী অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৬০ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক জ্ঞানী-গুণীর জন্ম হয়েছে। উপমহাদেশের খ্যাতিমান ভৌতবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবুল ফজল, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সৈয়দ আলী আহসান, মুর্তজা বশীর, ঢালি আল মামুন, পার্থ বড়ুয়া, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. আবদুল মান্নানসহ বহু কীর্তিমান মনীষী জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আরও পড়ুন

বুটেক্সে আর্থিক খাতে অনিয়মের শঙ্কা, প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য অধিকার আইনও

বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলার আসামি মাওলানা ইসমাইল এখনো গ্রেপ্তারবিহীন

নিভৃতে ভেসে যায় জীবন

দোয়ারাবাজার সমিতির কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের পরিপন্থী-ড. হামিদ আযাদ

চকরিয়া নব প্রজন্ম মেধাবৃত্তি পরীক্ষা-২৫ অনুষ্ঠিত

জুলাই সনদের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলে স্বাক্ষর করবে এনসিপি

বাড়ছে মাদকের বিস্তার, অনিরাপদ হয়ে উঠছে চবি ক্যাম্পাস

উজানটিয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের ২(দুই)সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে চবি ক্যাম্পাসে বাইসাইকেল র‍্যালি

কবিতা:- স্মৃতির রোমন্থন

জোহরান মামদানির বিজয় ও বাংলাদেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং কয়েকটি কথা; প্রেক্ষিত বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন -মোঃ ইমন হোসেন