বিএম কলেজ প্রতিনিধি:
ঘড়ির কাঁটায় রাত ৩ টা ২০ মিনিট । আমরা সবাই ঘুমানো ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় । টের পেলাম পুরা ভবনটি যেনো কেঁপে উঠলো। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেখি রুমের পলেস্তরা খসে পরেছে । মশারি টানিয়ে ঘুমানোর ফলে খসে পড়া পলেস্ত্বারার চলডা গুলো মশারির উপর পরে। তবে মশারি টানানো না থাকলে পলেস্তরার চলডা গুলো সরাসরি আমাদের উপরে এসে পড়তো। কান্না জড়িত কন্ঠে এমনটাই বলেছিলেন মমিনুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রবিবার (১লা অক্টোবর) রাত ৩ টা ২০ মিনিটে বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস ( ডিগ্রি হলের ) এ-ব্লকের ২০৮ নাম্বার রুমের পলেস্তরা খসে পরেছে। ওই রুমের বাসিন্দারা মশারী টাঙিয়ে ঘুমানোর ফলে পলেস্তরা গুলো সরাসরি মশারির উপরে পরায় মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
২০৮ নাম্বার রুম থেকে ফারহান আহম্মেদ ইমন নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, রাত ৩:২০ মিনিটের সময় সবাই যখন গভীর ঘুমে তখন হঠাৎ বিকট শব্দে সকলের ঘুম ভেঙে যায়। তখনও আমরা বুঝতে পারিনি আসলে কি হয়েছে। পুরো ভবনটি কেঁপে ওঠে। তারপরে লাইট জ্বালানোর পরে দেখি এই অবস্থা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া তিনি আমাদের বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। ঠিক ওই জায়গাটার নিচে শুয়েছিল আমার রুমমেট মোঃ রিয়াজুল করিম। বিকট শব্দ এবং সকলের চিৎকারের আওয়াজে আশেপাশের রুমের সবাই ভয় পেয়ে যায়। কেউই বুঝতে পারেননি যে এমন ঘটনা ঘটে গেছে। যে পরিমাণে ধাক্কা লাগছে তাতে অনেকেই ভাবছে হয়তো ভবনটি ভেঙে পড়ে গেছে। তারপরে খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখে আমাদের রুমের ভিতর এই অবস্থা। যদিও আল্লাহ আমাদের এই বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন কিন্তু আমরা এই ছাত্রাবাসে কতটুকু নিরাপদ? একটা শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী কলেজের ছাত্রাবাসের যদি হয় এই অবস্থা এখানে থাকা ছাত্রদের জীবন কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারি ব্রজমোহন কলেজ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ভিন্ন সময় পলেস্তরা খসে পরে এবং হল সংস্কার মেরামতের ব্যাপারে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ( ডিগ্রী হল ) ছাত্রাবাসের হল সুপার এস.এম আসাদুজ্জামান বলেন, হল সংস্কার মেরামতে কলেজ প্রসেশন আমাদের প্রায় সময় সহযোগিতা করে। তবে বিএম কলেজের হল গুলো প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এমতবস্থায় উচিত বিএম কলেজের হল গুলোতে নতুন ভবন নির্মাণ করা । নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নিকট আবেদন করতে হয়। আমি দুই মাস হবে হল সুপারের দায়িত্ব নিয়েছি । কলেজ প্রশাসন নতুন ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশলী দপ্তরে আবেদন করেছে কিনা এটা আমার জানা নেই। তবে আজ আমি হল পরিদর্শনে গিয়ে যে যে রুমের সমস্যা আছে এগুলো সংস্কার মেরামতের জন্য প্রিন্সিপাল স্যারের নিকট জানাবো। আমার বিশ্বাস প্রিন্সিপাল স্যার হল সংস্কার মেরামতে আমাদের সহযোগিতা করবে।
ছাত্রাবাসে নতুন ভবন নির্মাণ এবং পুরাতন ভবন রিপিয়ারিং করার ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, নতুন ভবন নির্মাণ এবং পুরাতন ভবন গুলো রিপিয়ারিং করার জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কে বলা হয়েছে। তারা খুব শীঘ্রই পুরাতন ভবনগুলো বাতিল ঘোষণা করবে এবং যে ভবন গুলোর পলেস্তরা খসে পরে সেগুলো রিপেয়ারিং করার জন্য খুব শীগ্রই এর টেন্ডার হয়ে যাবে। শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ পেলে আমরা হল গুলোর রিপিয়ারিং করতে পারবো এবং যে ভবন গুলো একেবারে বসবাসের অনুপযোগী সে ভবন গুলো ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারবো।